প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে নিপ্রো নদীর অন্য দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে রাশিয়া জানিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
খেরসনের রাশিয়ার দখল করা অঞ্চলের প্রধান জানিয়েছেন, ইউক্রেন যে কোনো সময় আক্রমণ করতে পারে, সে কারণেই আগে থেকে খেরসন ফাঁকা করে দেওয়া হচ্ছে। খেরসনের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে নিপ্রো নদী। সেই নিপ্রো নদীর গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ পেরিয়ে অন্যদিকে নিয়ে গিয়ে রাখা হচ্ছে বেসামরিক মানুষকে। ইউক্রেনের শেলে যাতে কারো ক্ষতি না হয়, সে জন্যই একাজ করা হচ্ছে বলে তার দাবি।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনের অস্ত্র-সম্ভার
পশ্চিমা দেশগুলির সহযোগিতায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়ছে ইউক্রেন। কী কী অস্ত্র আছে ইউক্রেনের হাতে?
ছবি: Sergey Kohl/Zoonar/IMAGO
সাহায্যের পরিমাণ
সাহায্যের নিরিখে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেছে অ্যামেরিকা। আট দশমিক ৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সাহায্য পাঠিয়েছে। পোল্যান্ড দিয়েছে এক দশমিক ৮৩ বিলিয়ন। যুক্তরাজ্যের সাহায্যের পরিমাণ এক দশমিক ৩৬ বিলিয়ন। জার্মানি খরচ করেছে শূন্য দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার।
ছবি: Yasuyoshi chiba/AFP
হাইমারস রকেট
অ্যামেরিকা ইউক্রেনকে হাইমারস রকেট লঞ্চার সিস্টেম দিয়েছে। প্রায় একডজন হাইমারস দিয়েছে অ্যামেরিকা। এই রকেট সিস্টেমের সাহায্যে ৮০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালানো যায়। ঘণ্টায় ৮৫ কিলোমিটার বেগে লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছায় এই রকেট। রাশিয়ার হাতে এত ভালো রকেট সিস্টেম নেই বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য। রাশিয়া বিএম-৩০ দূরপাল্লার রকেট ব্যবহার করছে। যার ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে।
ছবি: Gabrielle Quire/abaca/picture alliance
হাউইৎজারের ব্যবহার
চলতি বছরে অস্ট্রেলিয়া, ক্যানাডা এবং অ্যামেরিকা পৃথকভাবে মোট ১০০টি হাউইৎজার দিয়েছে ইউক্রেনের সেনাকে। এম৭৭৭ হাউইৎজারের সঙ্গে ১৫৫ মিলিমিটারের তিন লাখ রাউন্ড কার্তুজ দেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার সবচেয়ে ভালো হাউইৎজারের সমকক্ষ এই এম৭৭৭।
ছবি: AP Photo/Efrem Lukatsky/picture alliance
ট্যাঙ্ক ধ্বংসকারী অস্ত্র
ইউক্রেনের হাতে এখন পাঁচ হাজার ট্যাঙ্ক ধ্বংসকারী অস্ত্র আছে। কাঁধে নিয়ে এই অস্ত্র চালাতে হয়। অ্যামেরিকা এবং ইউরোপের একাধিক দেশ ইউক্রেনকে এই অস্ত্র দিয়েছে। এর সাহায্যে ২২ থেকে ৮৭৫ গজের মধ্যে থাকা ট্যাঙ্ক ধ্বংস করা যায়। জার্মানি ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে এই অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণও দিয়েছে। যুদ্ধে এই অস্ত্র ইউক্রেনকে বহু জায়গায় জয় পেতে সাহায্য করেছে।
ছবি: Andrew Chittock/StockTrek Images/IMAGO
ট্যাঙ্কের পরিমাণ
পোল্যান্ড এবং চেক রিপাবলিক ইউক্রেনকে মোট ২৩০টি ট্যাঙ্ক দিয়েছে। টি-৭২এম১ ট্যাঙ্কের ওজন ৪৬ টন। তিনজন ভিতরে বসতে পারেন। ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে দৌড়তে পারে এই ট্যাঙ্ক। আঘাত হানতে পারে চার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে। এছাড়াও যুক্তরাজ্যের চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাঙ্ক এবং ইউক্রেনের পুরনো টি-৭২ ট্যাঙ্কও তাদের কাছে আছে।
ছবি: Inna Varenytsia/AP/picture alliance
ড্রোনের ব্যবহার
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে প্রচুর ড্রোনের ব্যবহার হচ্ছে। ইউক্রেনকে বেশ কিছু ড্রোন বিক্রি করেছে তুরস্ক। যার সাহায্যে ইউক্রেন নজরদারি করছে, আবার আক্রমণও চালাচ্ছে। তুরস্কের বায়রাকটার টিবি-২ ড্রোন ২৫ হাজার ফুট পর্যন্ত উড়তে পারে। ৩০০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে পারে। ছুটতে পারে ২২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। ৪এমএএম-এল লেজার গাইডেড বোমা নিয়ে যেতে পারে এই ড্রোন।
ছবি: PETRAS MALUKA/AFP/Getty Images
এয়ার ডিফেন্স
সম্প্রতি জার্মানি ইউক্রেনকে একটি আইআরআইএস-টি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম পাঠিয়েছে। আরো তিনটি কিছুদিনের মধ্যেই পাঠানোর কথা। অত্যাধুনিক এই অস্ত্র রাশিয়ার হাতে নেই। এছাড়াও অ্যামেরিকার কাছ থেকে তারা এনএএসএএমএস সারফেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেম পেয়েছে। স্লোভাকিয়া এস-৩০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দিয়েছে। এস-৩০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ৯০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত কাজ করতে পারে। ২০০ কিলোমিটার দূরের মিসাইল ট্র্যাক করতে পারে।
ছবি: Diehl Defence
7 ছবি1 | 7
বস্তুত, যে কোনো সময় ইউক্রেন আক্রমণ করতে পারে বলে মনে করছে রাশিয়া। রাশিয়ার গভর্নর জানিয়েছেন, বেসামরিক মানুষদের সরিয়ে নিলেও রাশিয়ার সেনা লড়াই করার জন্য প্রস্তুত। লড়াই না করে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়া হবে না।
ইউক্রেনের বক্তব্য অবশ্য একেবারে উল্টো। তাদের বক্তব্য, রাশিয়া আক্রমণ শুরু করবে বলেই একাজ করা হচ্ছে। রাশিয়া খেরসন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মঙ্গলবারই জানিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কি। বুধবার ইউক্রেন দাবি করেছে, খেরসন থেকে জোর করে বেসামরিক মানুষদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কোনোভাবেই তারা যাতে ইউক্রেনের শাসনে থাকতে না পারে, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। তবে দুই পক্ষই বড়সড় লড়াইয়ের আশঙ্কা করছে।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কেন্দ্রে অবস্থিত শেভচেঙ্কিভস্কি এলাকায় সোমবার সকালে ‘বেশ কয়েকটি’ বিস্ফোরণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো৷ তিনি বলেন, এমন সব ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে যেগুলো ‘জরুরি অবকাঠামোর’ অন্তর্গত৷
ছবি: Adam Schreck/AP Photo/picture alliance
অনেকদিন পর অশান্ত
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর দিকে কিয়েভের কিছু অংশে হামলা হয়েছিল৷ এরপর পরিস্থিতি শান্ত ছিল৷ সেখানে সবশেষ হামলা হয়েছিল ২৬ জুন৷
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
হতাহত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি জানান, ইউক্রেনজুড়ে হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে৷ পুলিশ জানিয়েছে, কিয়েভে হামলায় এখন পর্যন্ত পাঁচজন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন৷
ছবি: Adam Schreck/AP Photo/picture alliance
অন্য শহরেও বিস্ফোরণ
কিয়েভ ছাড়াও লাভিভ, ট্যার্নোপিল ও দিনিপ্রো এলাকায়ও হামলা হয়েছে৷ পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকা লাভিভের গভর্নর ম্যাক্সিম কোজিতস্কি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘লাভিভ এলাকার কয়েকটি জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা হয়েছে৷’’ ছবিটি প্রতীকী হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে৷
ছবি: Stringer/AA/picture alliance
ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের উপ-প্রধান কিরিলো টিমোশঙ্কো বলেছেন, ‘‘ইউক্রেনে মিসাইল হামলা হচ্ছে৷ আমাদের দেশের অনেক শহরে হামলার তথ্য পাচ্ছি৷’’
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
শলৎস, মাক্রোঁর সঙ্গে কথা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি হামলা নিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর সঙ্গে কথা বলেছেন৷ এ বিষয়ে জি সেভেনের জরুরি বৈঠক হওয়া প্রয়োজন বলে একমত হয়েছেন শলৎস ও জেলেনস্কি৷
ছবি: Thibault Camus/AP Photo/picture alliance
পুটিনের বক্তব্য
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন রোববার ক্রাইমিয়া ব্রিজে বিস্ফোরণের জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেছিলেন৷ একে সন্ত্রাসী হামলা বলেও আখ্যায়িত করেন তিনি৷
ছবি: Gavriil Grigorov/AP Photo/picture alliance
7 ছবি1 | 7
রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেন থেকে মোট পঞ্চাশ লাখ মানুষ এখনো পর্যন্ত রাশিয়ায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই গেছেন রাশিয়ার দখলে থাকা চারটি অঞ্চল থেকে। খেরসন, দনেৎস্ক, লুহানস্ক এবং ঝাপোরিজ্ঝিয়ার বড় অংশ রাশিয়ানিজেদের হাতে নিয়েছিল। সেখানে গণভোটের আয়োজন করা হয়েছিল। এরপর ডিক্রি জারি করে রাশিয়া জানায়, ওই অঞ্চলগুলিকে রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলি অবশ্য এর বিরোধিতা করেছে। ইউক্রেনও ওই অঞ্চলের খানিকটা এলাকা পুনর্দখল করতে পেরেছে।
বুধবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী একটি বিবৃতি জারি করে বলেন, চার লাখ ছয় হাজার ইউক্রেনীয় এই মুহূর্তে রাশিয়ার সীমান্তের ভিতরে আছেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তারা রাশিয়ায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
পুটিনের সমালোচক
ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক ক্যাথেরিন বেলটন পুটিনকে নিয়ে একটি বইয়ের কাজ শেষ করেছেন ২০২০ সালে। ডয়চে ভেলের প্রতিনিধিকে তিনি বলেছেন, রাশিয়ার ভিতরে পুটিন-বিরোধী হাওয়া যথেষ্ট প্রবল। যেভাবে পুটিন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং বেসামরিক মানুষকে যুদ্ধে নামতে বাধ্য করছেন, তাতে পুটিন-বিরোধিতা আরো বাড়ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে, কোনো ভারতীয় যেন এখন ইউক্রেন না যান। ইউক্রেনে বসবাসকারী ভারতীয়দেরও দ্রুত ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।