খেলছেন ‘শিশু' ট্রাম্প, কেউ স্কোরার কেউ দর্শক
২২ জুলাই ২০১৯এবার গত গ্রীষ্মের এক ঘটনা৷ গলফ খেলা ট্রাম্পের খুব প্রিয়৷ সেবার অস্কারজয়ী মুভি ‘গ্রিন বুক'-এর প্রযোজক টেড ভার্চু ও তাঁর ছেলের সঙ্গে গলফ খেলছিলেন ট্রাম্প৷ একসময় ট্রাম্পের বল পানিতে গিয়ে পড়লে তিনি ভার্চুর ছেলের বলকে নিজের বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন! ঐ ছেলের বয়স বিশের কিছু বেশি ছিল৷
একবার ভাবুনতো, সামান্য গলফ খেলায় জয়ী হতে ৭২ বছর বয়সি ট্রাম্প তাঁর চেয়ে ৫০ বছরের ছোট এক তরুণের সঙ্গে কী'ইনা করেছেন!
এমন একজন ব্যক্তি কী করে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের প্রেসিডেন্ট হলেন, তা আলোচনার সময় আজ নয়৷ আজ, তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ায় বিশ্বের তাবৎ জ্ঞানী-গুনি রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিকরা কী বিপদে পড়েছেন, তা নিয়ে আলোচনা চলছে চলবে৷
আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এই সময়ে এমন কিছু কাজ তিনি করেছেন, যা একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে আজকের বিশ্বনেতা ও নাগরিকেরা ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করেননি৷ যেমন প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন, তেল আভিভ থেকে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে জেরুসালেমে নিয়ে গেছেন ইত্যাদি৷
সেই ট্রাম্প এবার ইরান চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছেন৷ অনেক আলোচনার পর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ছয় দেশের সঙ্গে চুক্তি সই করেছিল ইরান৷ ফলে দেশটি তার পরমাণু কর্মসূচি স্থগিত করে রেখেছিল৷
কিন্তু ‘শিশু' মেজাজের ট্রাম্পের একদিন কী মনে হলো, তিনি পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিলেন৷ এক্ষেত্রে তাঁর মেয়ে-জামাই ইসরায়েল বিষয়ক দূত জারেড কুশনারের হয়ত কিছু ভূমিকা থাকতে পারে৷ ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক যেহেতু খারাপ, তাই ট্রাম্পের চোখে ইরানও খারাপ৷ ফলে ইরান চুক্তি থেকে সরে আসলে কূটনীতিকভাবে কী প্রভাব পড়তে পারে, সেসব না ভেবেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে আনেন তিনি৷ সেই সঙ্গে ইরানের উপর একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করতে থাকেন৷
ফলে চুক্তির কারণে একসময় নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি যখন অতীত হয়ে যাচ্ছিল, তখনই আবার তা ফিরিয়ে আনলেন ট্রাম্প৷
এই অবস্থায় ইরান বসে থাকবে কেন? তারা বলে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ইরান চুক্তির অন্যপক্ষ, বিশেষ করে ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন, যদি চুক্তি রক্ষায় কাজ না করে তাহলে ইরানও চুক্তি লঙ্ঘন করা শুরু করবে৷
ফলে ঐ তিন দেশের মন্ত্রী, কূটনীতিকরা এখন চুক্তি রক্ষায় দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন৷
ইরান চুক্তির কারণে একসময় বিশ্ব রাজনীতি ও গণমাধ্যমের আলো থেকে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ইস্যুটি দূরে সরে গেলেও ট্রাম্পের কারণে আবার তা ফিরে এসেছে৷ শুধুমাত্র ‘শিশু' ট্রাম্পের মেজাজ বিগড়ে গিয়েছে বলে, জ্ঞানী-গুনি কূটনীতিকদের ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে এখন আবার ভাবতে হচ্ছে৷
২০২০ সালে আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াবেন ট্রাম্প৷ সেই সময় পর্যন্ত ইরান ইস্যু জিইয়ে থাকবে বলে মনে হচ্ছে৷ ঐ নির্বাচনে যদি আবারও ট্রাম্প জিতে যান, তাহলে এই ইস্যুর মেয়াদ আরও চার বছর বাড়বে৷
অর্থাৎ বিশ্ব গণমাধ্যম ও কূটনীতিকদের আরও ছয় বছর ইরান ইস্যু নিয়ে কাজ করার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে৷