ঘটনাটি ঘটেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড শহরে৷ দেখতে ঠিক একটি সেমি-অটোমেটিক হ্যান্ডগানের মতো, কিন্তু আসলে সেটি ‘‘এয়ারসফ্ট'' গোত্রীয় একটি নকল পিস্তল৷ পুলিশ অফিসাররা সেটা না জেনেই গুলি চালান৷
বিজ্ঞাপন
তামির রাইস দৃশ্যত একটি ছোটদের খেলার জায়গায় খেলতে গিয়েছিল তার খেলনার অস্ত্রটি নিয়ে৷ বার বার সেটা হাতে নিয়ে লোকজনকে ভয়ও দেখাচ্ছিল৷ উপস্থিত জনতার মধ্যে কেউ একজন পুলিশকে ফোন করে সে'কথা জানান, এমনকি এ-ও বলেন যে, পিস্তলটা ‘‘সম্ভবত মেকি''৷ দুর্ভাগ্যক্রমে যে দু'জন পুলিশ অফিসারকে অকুস্থলে পাঠানো হয়, তাদের ঐ মেকি পিস্তলের কথাটাই জানানো হয়নি৷ তার ওপর আবার এ ধরনের খেলনার বন্দুক-পিস্তলের নলের উপর যে কমলা রঙের নিরাপত্তা চিহ্নটি লাগানো থাকে, তামিরের খেলার পিস্তলটিতে তা-ও ছিল না৷
যে দু'জন পুলিশ অফিসার একটি সিটি রিক্রিয়েশন সেন্টারের বাইরে ছোটদের খেলার জায়গাটিতে গিয়ে পৌঁছান, তারা দেখেন যে, পিস্তলটি একটি টেবিল কিংবা বেঞ্চের উপর রাখা রয়েছে৷ পুলিশকে দেখে তামির সেটিকে নিজের বেল্টে ঢোকায়, কিন্তু পরে পুলিশ তাকে হাত তুলতে বললে, তামির বেল্ট থেকে সেই খেলনার পিস্তল বার করে – যদিও তামির সেই পিস্তল পুলিশের দিকে তাক করেনি, এমকি কিছু বলেনি পর্যন্ত৷ তখন একজন অফিসার তার দিকে গুলি চালান৷ এটা ছিল শনিবারের ঘটনা৷ রবিবার সকালে তামির হাসপাতালে মারা যায়৷
‘প্লিজ গুলি কোরো না’
সাদা পুলিশের হাতে নিরস্ত্র এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় যুক্তরাষ্ট্রের মিসুরি রাজ্যের শহর ফার্গুসন৷ মাত্র ২১ হাজার অধিবাসীর এই শহরের প্রতিবাদের খবর এখন বিশ্ব মিডিয়ায়৷
ছবি: DW/M. Soric
ঘটনার সূত্রপাত
৯ আগস্ট রাত, নিরস্ত্র মাইকেল ব্রাউন নিহত হন পুলিশের গুলিতে৷ পুলিশ শ্বেতাঙ্গ আর ১৮ বছরের মাইকেল কৃষ্ণাঙ্গ৷ ব্রাউন বর্ণবাদের বলি হয়েছেন, এ অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে আসছেন কৃষ্ণাঙ্গ-অধ্যুষিত ওই এলাকার বাসিন্দারা৷
ছবি: Getty Images
‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’
বিক্ষোভের সময় প্রতিটি বিক্ষোভকারী হাত উপরে তুলে ‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন৷ স্লোগানটি এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ভিডিও বা ছবির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’ বলে৷
ছবি: Reuters
কিছুটা স্তিমিত
৯ আগস্ট থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত বিক্ষোভ হয়েছে ফার্গুসনে৷ তবে ২০ তারিখ বিচার বিভাগের প্রধান অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ কিছুটা স্তিমিত হয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রথম আফ্রো-অ্যামেরিকান হোল্ডার৷
ছবি: Reuters
ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য
গত ১১ দিনে বিক্ষোভ এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যে পরিস্থিতি সামলাতে কেন্দ্রীয় সরকার সেখানে জাতীয় নিরাপত্তা সদস্যদের পাঠান৷
ছবি: Getty Images
প্রতিবাদ রূপ নেয় সহিংসতায়
বিক্ষোভ কখনো কখনো সহিংসতায় রূপ নিয়েছিল৷ মনে হচ্ছিল ফার্গুসন যে রণক্ষেত্র৷ বুধবারও ছয় বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ৷ এর আগে ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ গভীর রাতের দিকে কেউ কেউ পুলিশকে লক্ষ্য করে পানি ও প্রস্রাব ভর্তি প্লাস্টিকের বোতল ছুড়ে মারলে কিছুটা উত্তেজনা ছড়ায়৷
ছবি: Reuters
বর্ণ বৈষম্যের অভিযোগ
ফার্গুসনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে৷ ফার্গুসনের জনসংখ্যা প্রায় ২১ হাজার৷ এর মধ্যে বেশিরভাগই আফ্রিকান-অ্যামেরিকান৷ কিন্তু নিরাপত্তা, প্রশাসন, রাজনীতিসহ সব বিভাগেই শ্বেতাঙ্গ মানুষের পদচারণা৷
ছবি: Reuters
আর এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু
১৯ আগস্ট দুই পুলিশের গুলিতে ২৩ বছর বয়সের আরেক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক সেন্ট লুইস এলাকায় নিহত হন৷ সে অঞ্চলের পুলিশ প্রধান স্যাম ডস্টন দাবি করেন, ঐ যুবক পুলিশদের দিকে ধেয়ে আসেন এবং হাতে থাকা ছুরি বের করে বলতে থাকেন, ‘‘আমাকে গুলি করো, মেরে ফেলো আমাকে’’৷ যুবকটি তাঁদের দিকে ধেয়ে এলে গুলি করতে বাধ্য হন তাঁরা৷
ছবি: Reuters
ঘটনার তদন্তে শুনানি
এরিক হোল্ডার বুধবার ব্রাউনের মৃত্যুর তদন্তকারীদের সঙ্গে দেখা করেছেন৷ বুধবারই ঘটনার তদন্তে শুনানি শুরু হয়েছে বলে খবর৷ তবে ড্যারেন উইলসন নামের পুলিশ কর্মকর্তা, যাঁর গুলিতে ব্রাউনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হবে কিনা – সে বিষয়ে এখনও ‘ফাইনাল’ সিদ্ধান্ত জানা যায়নি৷
ছবি: DW/M. Soric
8 ছবি1 | 8
স্থানীয় পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ভিডিও ও অপরাপর সাক্ষ্য-সাবুদ সংগ্রহ করেছে এবং সরকারি কৌঁসুলির কাছে পেশ করবে, বলে জানিয়েছে৷ অতঃপর সরকারি কৌঁসুলির দপ্তর সেই সব সাক্ষ্য-প্রমাণ গ্র্যান্ড জুরির কাছে দাখিল করতে পারে৷ তা থেকে নির্ধারণ করা হবে, পুলিশ অফিসারটি সঙ্গত কারণে, না অসঙ্গতভাবে বলপ্রয়োগ করেছিলেন৷ তামির রাইস-এর পরিবারবর্গের অ্যাটর্নি কিন্তু জানিয়েছেন যে, তারা ব্যক্তিগতভাবে ঘটনার তদন্ত করে দেখবেন৷
অপরদিকে স্টেট রিপ্রেজেন্টেটিভ, সিনসিন্যাটি-র অ্যালিসিয়া রিস রবিবারেই ঘোষণা করেছেন যে, তিনি ওহাইও রাজ্যে যতো বিবি গান, এয়ার রাইফেল এবং এয়ারসফ্ট গান বিক্রি হবে, সেগুলো যা-তে চোথে পড়ার মতো রঙচঙে হয় বা তা-তে ফ্লুওরেসেন্ট স্ট্রিপ লাগানো থাকে, সেজন্য বিল আনবেন৷ ক্যালিফর্নিয়ায় ইতিমধ্যেই এ রকম একটি বিল পাস করা হয়েছে৷
কিন্তু সব সত্ত্বেও – বিশেষ করে গত আগস্ট মাসে মিসুরি রাজ্যের ফার্গুসন শহরে এক নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর – তামির রাইস-এর মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রে জাতিবৈষম্যগত উত্তেজনা বাড়াবে বৈ কমাবে না৷