সন্তান আর পোষা প্রাণী – পশ্চিমা বিশ্বে এই দুইয়ের মধ্যে বিশেষ তফাৎ নেই৷ অনেকের কাছে পোষা প্রাণী পরিবারেরই সদস্য৷ অথচ এমন সমাজও আছে, যেখানে কুকুরের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়৷ অবশ্য জানাজানি হওয়ার পর ওঠে প্রতিবাদের ঝড়ও৷
বিজ্ঞাপন
ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা রাজ্যের৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ১৩-১৪ বছরের এক কিশোরী অ্যারোসল স্প্রে করে ও লাইটার হাতে কুকুরের শরীরে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে৷ সেই সময় সেই কিশোরীকে হাসতেও শোনা গেছে৷ আর এই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেছে সম্ভবত তারই বয়সি কোনো এক বন্ধু৷
স্হানীয় ফক্স ৮ টেলিভিশন চ্যানেলে এ নিয়ে বিশদ এক প্রতিবেদন তৈরি করে৷ যেই প্রতিবেদনে প্রাণীর প্রতি নির্মমতার কঠোর সমালোচনা করা হয়৷ ফক্স ৮ তাদের কয়েকজন দর্শকের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, এমনটা হতেই পারে না৷ কুকুরের সাথে কেন এমন ঘটনা ঘটানো হবে, সেটাই তাঁরা বুঝতে পারছেন না৷
ভাইরাল ভিডিওটি নজরে আসে, স্হানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীরও৷ তারাও এর সমালোচনা করেছেন৷ তবে প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতার দায়ে এই কিশোরীরের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি ওঠায় খানিকটা উভয় সংকটে পড়েছেন তাঁরা৷ কারণ প্রচলিত আ্ইনে এটি কিশোর অপরাধের আওতাধীন৷ তাই ঠিক কীভাবে এই ঘটনার নিষ্পত্তি করবেন সেটি নিয়েই ভাবছেন এখন৷
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবেই নিষ্পত্তি করুক না কেন, এ ধরনের ঘটনার প্রভাব নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন অনেকেই৷ ফক্স ৮ চ্যানেলের প্রতিবেদনেও দেখা গেছে এই ভিডিও দেখার পর অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের নিয়ে ভাবনায় পড়েছেন৷ তাঁরা মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে তাঁদের সন্তানদের ওপরও৷ শিশুদের কাছ থেকে এমন নিষ্ঠুর আচরণ কোনভাবেই আশা করেন না কেউই৷ কারণ, তাঁদের মতো অনেক পরিবার আছে যেখানে ব্যস্ত বাবা- মায়ের সন্তানেরা সঙ্গী হিসেবে দিনের একটা বড় সময় কাটিয়ে দেয় পোষা প্রাণীটির সাথে৷ দৃশ্যত এমনই এক পোষা কুকুরের সাথে দুই মার্কিন কিশোরীর নির্মমতায় হতবাক হয়েছে গোটা দুনিয়া৷
কুকুরটিকে অবশ্য পরে উদ্ধার করা হয়েছে৷
মোদ্দা কথা হলো, দুনিয়াব্যাপী দেশে-দেশে, মানুষে- মানুষে সহিংসতা যেমন আছে, তেমনি এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মানুষও কম নয়৷ যে কারও প্রতি সহিংসতা বা নিষ্ঠুরতা কখনই কোনো সমাজের কাম্য নয়৷ কাজেই নিছক খেলার ছলেই এমন ঘটনা নাকি বিশেষ কোনো মানসিক পরিস্থিতির উদ্ভবের ফলে শিশু-কিশোররা প্রাণীদের প্রতি এমন আচরণ করে, তা খতিয়ে দেখা যেমন দরকার৷ একইসাথে অভিভাবকদেরও এ সব বিষয়ে শিক্ষা দেয়ার বা এ এ ধরনের ঘটনার সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে সন্তানদের সচেতন করার সময় এখনই৷
এএম/ডিজি
বিনোদনের নামে পশু-পাখি নিয়ে যত পাশবিকতা
মোরগ লড়াই বা ষাঁড়ের লড়াই দেখেছেন? মানুষ আর ষাঁড়ের লড়াইও কয়েকটি দেশে খুব জনপ্রিয়৷ প্রাণীকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারাও নাকি বিনোদন! দেখুন, পশু-পাখি নিয়ে বিনোদনের নামে কত রকমের নিষ্ঠুরতা চলছে সারা বিশ্বে৷
ছবি: Shah Marai/AFP/Getty Images
সার্কাসে...
খেলা দেখানোর নামে বিভিন্ন প্রাণীকে হাজির করা হয় সার্কাসে৷ এও এক ধরণের নিষ্ঠুরতা, কেননা, সব প্রাণীকেই পোষ মানাতে মায়ের কাছ থেকে খুব কম বয়সে নিয়ে আসতে হয়৷ বনের প্রাণীরও তো মাতৃস্নেহ দরকার৷
ছবি: Reuters/Andrew Innerarity
শিয়াল শিকার
ঘোড়া ছুটিয়ে কুকুর দিয়ে শিয়াল শিকার করার একটা সময় খুব চল ছিল ইংল্যান্ডে৷ পরে নিষিদ্ধ হলেও গোপনে এখনো চলে শিয়াল হত্যার এ খেলা৷
ছবি: Imago/i Images
চিড়িয়াখানায় যা হয়
চিড়িয়াখানায় পশু-পাখি দেখতে যাওয়া নিশ্চয়ই নিরীহ এবং প্রায় নির্ভেজাল বিনোনদন৷ তবে বনের প্রাণীকে খাঁচায় বন্দি করা থেকে শুরু করে চিড়িয়াখানার অনেক কিছু নিয়ে আন্তর্জাতিক চিড়িয়াখানা সংস্থার আপত্তি আছে৷ বিশ্বের অনেক দেশেই চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের যেভাবে, যতটা যত্ন নেয়া উচিত ততটা না নেয়ার অভিযোগ আছে সংস্থাটির৷ থাইল্যান্ড, কাজাখস্থান আর শ্রীলঙ্কার মতো দেশের চিড়িয়াখানাগুলোর বিরুদ্ধেই অভিযোগটা সবচেয়ে বড়৷
ছবি: Reuters/C. Jaspersen
চলচ্চিত্রে পশু-পাখির ব্যবহার
চলচ্চিত্রে পশু-পাখির যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়েও আন্তর্জাতিক পশু অধিকার সংরক্ষণ সংস্থা পেটা-র ঘোর আপত্তি৷ চলচ্চিত্রে যেসব প্রাণীকে ক্যামেরার সামনে নিয়ে আসা হয় তাদের অনেককেও মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনা হয় খুব কম বয়সে৷
ছবি: AP
কুকুরের দৌড়
কুকুরের দৌড়ও হয় কোনো কোনো দেশে৷ এক জায়গায় আটকে রাখা হয় কয়েকটি গ্রে-হাউন্ড কুকুর৷ নির্ধারিত সময়ে খুলে দেয়া হয় দরজা৷ কুকুরগুলো বেরিয়েই দেখে সামনে ছুটে যাচ্ছে ছোট এক খরগোশ৷ খরগোশটি আসলে নকল৷ কুকুর তা না বুঝে খরগোশ ধরে খাওয়ার জন্য ছুটতে থাকে৷ এই প্রতিযোগিতা বন্ধেরও দাবি জানিয়েছে পেটা৷
ছবি: Fotolia/Gerken & Ernst
ষাঁড়ের লড়াই
স্পেনে ষাঁড়ের লড়াই খুব জনপ্রিয়৷ লড়াইটা ষাঁড়ের সঙ্গে ষাঁড়ের নয়, ষাঁড়ের সঙ্গে মানুষের৷ সেখানে এক অর্থে ষাঁড়কে চটিয়ে এবং বোকা বানিয়ে একজন খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারে৷ শত শত মানুষ তা দেখে আদিম আনন্দে মেতে ওঠে৷ এমন নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে পশু অধিকার সংস্থাগুলোর আপত্তি তো আছেই, স্পেনের মানুষও এ লড়াই বন্ধের দাবিতে সোচ্চার হতে শুরু করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Salafranca
কুকুরের লড়াই
কুকুরের লড়াইয়েও বিনোদনের উপাদান খুঁজে পায় কিছু মানুষ৷ অনেকে আবার কুকুরের লড়াইয়ে কোটি টাকার বাজিও ধরেন৷ কোথাও কোথাও জুয়া খেলারও অন্যতম উপলক্ষ্য কুকুরের লড়াই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z. Khan
মোরগ লড়াই
পশু বা পাখির লড়াইয়ে রক্তারক্তি কাণ্ড দেখেও হাততালি দিতে পারে কিছু মানুষ৷ মোরগ লড়াই সেরকমই এক তথাকথি বিনোদন৷