1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খেলাধুলার সুযোগ বঞ্চিত মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলোতে খেলাধুলা হয় না বললেই চলে৷ সরকারি বরাদ্দ নেই৷ খেলাধুলার প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণের সুযোগও নেই৷

ছবি: DW/M. Mamun

বাংলাদেশে সরকারি মাদ্রাসা মাত্র তিনটি৷ এর বাইরে এমপিভুক্ত, বেসরকারি ও কওমি মাদ্রাসা আছে অনেক৷ আছে মহিলা মাদ্রাসাও৷ কিন্তু সামান্য ব্যতিক্রম বাদে মাদ্রাসাগুলোতে খেলাধুলার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই৷ নেই শরীরচর্চা শিক্ষকও৷ শহরের কিছু মাদ্রাসা নিজেদের উদ্যোগে সেই ব্যবস্থা করে৷ আর গ্রামে যেসব মাদ্রাসার সামনে মাঠ আছে, সেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্যোগে স্কুল শুরুর আগে ও ছুটির পরে খেলাধুলার সুযোগ পায়৷ কিন্তু খেলাধুলার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোনো উদ্যোগ নেই৷ বাৎসরিক কোনো ক্রীড়া প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয় না৷

ফেঞ্চুগঞ্জের মদিনাতুল উলুম শাহ মালুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের ছেলেরা সময় পেলে সামনের মাঠে খেলাধুলা করে৷ কিন্তু ওদের জন্য আলাদা কোনো শরীরচর্চা শিক্ষক নেই৷ সরকারও এ ব্যাপারে কোনো সহায়তা করে না৷ খালি করোনার সময় সরকার আমাদের ৯ হাজার টাকা দিয়েছিল৷’’

সাধারণ শিক্ষার মতো খেলাধুলা ছাত্রদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ: মাওলানা ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ

This browser does not support the audio element.

খেলাধুলার জন্য কোনো সরঞ্জাম মাদ্রাসা থেকে দেয়া হয় না৷ সরকারের পক্ষ থেকেও কখনো দেয়া হয়নি৷ ছেলেরা নিজেরাই ব্যাট-বল নিয়ে আসে বলে জানান তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘খেলাধুলার জন্য সরকারের সহায়তা পেলে ভালো হয়৷ কারণ, এটা ছাত্রদের জন্য প্রয়োজন৷’’

ঢাকার তেজগাঁও মদিনাতুল উলুম কামিল মহিলা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা তাজুল ইসলাম খেলাধুলা বলতে বোঝেন শুধু পিটি-প্যারেড৷ তিনি জানান, ক্লাস শুরুর আগে পিটি-প্যারেড হয়৷ তারপর জাতীয় সংগীত গায় ছাত্রীরা৷ এর বাইরে তাদের জন্য আর কোনো শরীরচর্চা বা খেলাধুলার ব্যবস্থা নেই৷ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘১০ বছর আগে সরকারের পক্ষ থেকে কয়েকটি ক্যারম বোর্ড দেয়া হয়েছিল৷ সরকারি সহযোগিতা বলতে ওইটুকুই৷’’

তবে তিনি জানান, এমপিওভুক্ত মাদ্রসাগুলোতে শরীর চর্চা শিক্ষকের একটি পদ আছে৷ অনেক মাদ্রাসাতেই ওই পদে নিয়োগ দেয়া হয় না৷

বাংলাদেশের মাদ্রাসা ছাত্রীদের যৌনশিক্ষা

02:44

This browser does not support the video element.

ঢাকার যাত্রাবাড়ির তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা এক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম৷ সেখানে ছাত্রদের জন্য শরীরচর্চাসহ নানা ধরনের খেলাধুলার ব্যবস্থা আছে৷ বাৎসরিক প্রতিযোগিতাও হয়৷ স্কাউটিংয়ের ব্যবস্থাও আছে৷ এজন্য তারা কোনো সরকারি সহযোগিতা পায় না৷ অধ্যক্ষ মাওলানা ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, ‘‘সাধারণ শিক্ষার মতো খেলাধুলা ছাত্রদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ তাই আমরা এর ব্যবস্থা করি৷’’ সরকারি উদ্যোগে প্রতিবছর উপজেলা থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়৷ কিন্তু তাতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় না৷ তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের কাছেও বছরে একবার একটা চিঠি আসে৷ কিন্তু এর জন্য কোনো বরাদ্দ না থাকায় আমাদের শিক্ষার্থীদের পাঠাই না৷ খরচ কে দেবে?’’

তিনি মনে করেন, মাদ্রাসায়ও অনেক প্রতিভাবান ছেলে-মেয়ে আছে, সুযোগ পেলে তারা খেলাধুলায় অনেক ভালো করতে পারবে৷

মাদ্রাসাছাত্রের ক্রীড়প্রেমী মা

ছেলে শেখ ইয়ামিন সিনানের সাথে পল্টন মাঠে ক্রিকেট খেলে ঝর্ণা আক্তার সারা দেশেই এখন খুব আলোচিত নাম৷ তিনি মনে করেন, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা থাকা উচিত৷ এটা সবার জন্যই প্রয়োজন৷ তার ছেলে আরামবাগ আল কারিম ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার ছাত্র৷ সেখানে খেলাধুলার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তিনি ছেলেকে কবি নজরুল ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করেছেন৷ তার ছেলের ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ আছে৷তিনি নিজেও খেলাধুলা পছন্দ করেন৷

তিনি বলেন, ‘‘প্রতিদিন বিকেলে একটা ক্লাস বাদ দিয়ে আমি নিজে তাকে ক্রিকেট খেলতে নিয়ে যাই৷ আগে আমার ছেলে আইডিয়াল স্কুলে পড়তো৷ সেখানে খেলার সুযোগ ছিল৷ কিন্তু এখানে নেই৷ তাই বলে তো খেলাধুলা বাদ দেয়া যাবে না৷’’

আমিও পর্দা মেনেই সব সময় খেলাধুলা করেছি: ঝর্ণা আক্তার

This browser does not support the audio element.

ঝর্ণা আক্তারের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে৷ এইচএসসি পাস করার পর আর লেখাপড়া করতে পারেননি বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে৷ বিয়ের আগে অ্যাথলেট ছিলেন ঝর্ণা৷ লং-জাম্পে পারদর্শী ছিলেন৷ তিনি মনে করেন, ‘‘মেয়েদেরও খেলাধুলা করা প্রয়োজন৷ একজন মুসলিম নারী পর্দা মেনে সব কিছুই করতে পারে৷ আমিও পর্দা মেনেই সব সময় খেলাধুলা করেছি৷’’

তিনি জানান, ‘‘বাংলাদেশের কিছু মাদ্রাসায় বড় বড় মাঠ আছে৷ সেখানে খেলাধুলা হয়৷ কিন্তু সব মাদ্রাসায় ব্যবস্থা নেই৷ আমার ছেলেটিকে মাদ্রাসায় ভর্তির সময় যখন দেখলাম মাঠ নেই, খেলাধুলার সুযোগ নেই তখন আমার মন খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল৷’’

ঝর্ণা আক্তার সুযোগ পেলে এখনো বোরকা পরেই খেলাধুলা করতে চান৷ তার কথা, ‘‘অনেক মহিলা মাদ্রাসা আছে৷ সেখানে যে মেয়েরা পড়াশুনা করেন তাদেরও খেলাধুলার সুযোগ করে দেয়া উচিত৷ তাদের জন্য মাঠের ব্যবস্থা করা উচিত৷’’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান জানান, ‘‘দেশের সরকারি তিনটি আলিয়া মাদ্রাসায় খেলাধুলার জন্য বছরে কিছু বরাদ্দ দেয়া হয় ৷ কিন্তু এমপিওভুক্ত বা অন্য কোনো মাদ্রাসার জন্য সরকারের কোনো বরাদ্দ নেই৷’’

গতবছর জুনের ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ