1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খেলাপি ঋণের লাগাম টানবে কে?

১৪ নভেম্বর ২০২২

‘আজ থেকে আর এক টাকাও ঋণ খেলাপি বাড়বে না৷ বরং সামনে ধীরে ধীরে খেলাপি ঋণের হার কমবে৷' ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন আ হ ম মোস্তফা কামাল৷ ব্যাংকের মালিকদের সঙ্গে ঋণখেলাপি নিয়ে আলোচনা পর তিনি এই ঘোষণা দেন৷

Bangladesch Banknoten in Dhaka
ছবি: FARJANA K. GODHULY/AFP/Getty Images

ব্যাংকের মালিকেরা তাকে কথা দিয়েছিলেন যে, খেলাপি ঋণকমিয়ে আনতে তারা সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবেন৷

তবে বাস্তবতা হল খেলাপি ঋণ এক টাকাও কমেনি, বরং ধারাবাহিক ভাবে বেড়েছে৷ ওই বছরের মার্চেই দেশে প্রথমবারের মত খেলাপি ঋণ ছয় অঙ্কের ঘর পেরিয়ে এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা হয়েছিল৷ অর্থমন্ত্রীর ঐ ঘোষণার পর গত চার বছরে খেলাপি ঋণের পরিমান আরো ৪০ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা৷ এক বছর আগে যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা৷ শুধু গত তিন মাসে খেলাপি বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা৷ এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ৷ গত জুন শেষে এ হার ছিল ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ৷

রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা৷ বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা৷ বিদেশি ব্যাংকের ২ হাজার ৯৭০ কোটি ও বিশেষায়িত ব্যাংকের ৪ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে৷

বেসরকারি ব্যাংকগুলো যে ঋণ বিতরণ করছে, তার ৬ দশমিক ২০ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়েছে৷ রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা মোট ঋণের ২৩ শতাংশই খেলাপি৷ বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ৪ দশমিক ৭৭৷ বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১২ শতাংশ খেলাপি৷

দেশের অর্থনীতি এবং ব্যাংকগুলোর জন্য খেলাপি ঋণ একটি বড় সমস্যা হলেও সরকার তথা অর্থ মন্ত্রণালয় খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না৷ এই ঋণ আদায়ে তারা ব্যর্থ হয়েছেন, যার মূলে রয়েছে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব৷

খেলাপি ঋণের হিসাব অর্থনীতিতে থাকে না৷ এছাড়াও এর বড় একটি অংশ বিদেশে পাচার হয়ে যায়৷ ফলে একদিকে ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়, অন্যদিকে বড় অংকের এই টাকা অর্থনীতিতে রি-সাইকেল করা যায় না৷ ফলে অর্থনীতি চাপে পড়ে৷

অর্থনীতির শত্রু

খেলাপি ঋণকে ‘অর্থনীতির শত্রু' হিসেবা গণ্য করে সরকার খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে চান বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক৷ গত ১০ সেপ্টেম্বর তিনি বলেন, ঋণ খেলাপের মামলাজট দেশের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে৷ বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে অবশ্যই এই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে খেলাপি ঋণ বাড়ার লাগাম টানতে হবে৷

তবে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এটা সত্য যে মামলার পক্ষগণের অনাগ্রহের কারণে এডিআর পদ্ধতির সফল প্রয়োগ হচ্ছে না৷

আইএমএফ-এর আবার তাগিদ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর একটি প্রতিনিধি দল ২০১৯ সালের জুনে বাংলাদেশ সফর করে৷ সে সময়ে তারা আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ও সংশ্লিষ্ট রাজস্ব খাতের ঝুঁকি মোকাবিলায় ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমানো জরুরি হয়ে পড়েছে জানিয়েছিলেন৷ আর সেজন্য ব্যাপক, বিশ্বাসযোগ্য ও নির্দিষ্ট সময়ের কর্মপরিকল্পনা নিতে বলেন৷

সম্প্রতি আইএমএফ-এর আরেকটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে৷ তারাও রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এর পরিমাণ কমিয়ে আনতে তদারকি জোরদার করতে সুপারিশ করে৷ এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে একটি কৌশল অবলম্বন করার পরামর্শ দেন৷

ভুল' যায়গায় ঋণ

বাছ বিচার ছাড়া রাজনৈতিক ও গোষ্ঠী স্বার্থে ঋণ বিতরণের কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে বলে অনেকে মনে করেন৷ এর পেছনে থাকে প্রভাবশালী চক্র৷ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে অনেক ঋণ প্রদান করা হয় বলে এর বড় একটি অংশ খেলাপিত হয়৷ আর এই চক্রকে সুবিধার দেয়ার কারনে খেলাপি ঋণ আদায় করাও সম্ভব হয় না বলে অনেকের ধারণা৷

নিয়মিত বিরতিতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ ‘ভুল' যায়গায় ঋণ যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন৷ তার মতে, ‘শুধু আইন সংস্কার করলেই হবে না, তা প্রয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারকে কার্যকর ভূমিকাও রাখতে হবে৷'

গবেষক ও অর্থনীতির শিক্ষক সেলিম রায়হানের আশঙ্কা, খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি হয়ে দুই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর এই নির্বাহী পরিচালকের মতে, ব্যাংকিং খাতের ‘গভীর ক্ষত' খেলাপি ঋণ কমাতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যে আন্তরিকতার প্রয়োজন তাতে ঘাটতি রয়েছে৷

এজন্য সমন্বিতভাবে একটি পরিকল্পনা প্রয়োজন যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক তার ক্ষমতা প্রয়োগ করবে ও ক্ষমতা ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে, সরকারকেও ভূমিকা রাখতে হবে৷ এমন ঋণ কমিয়ে আনতে ‘ইচ্ছেকৃত খেলাপিদের' বিরুদ্ধে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে নামার পরামর্শ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদের৷

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সাবেক গভর্নর বলেন, ‘‘বারবার ছাড় বা সুবিধা দেওয়া সত্ত্বেও তারা অর্থ ফেরত দিচ্ছে না৷ আর যারা নানা কারণে ব্যবসায় লোকসান দিয়েছে বা অনিচ্ছাকৃত কারণে খেলাপি হয়েছে তাদের বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে কোম্পানির সম্পদ, জমি বিক্রি করে হলেও আদায় করা উচিত৷''

একেএ/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ