এতদিন বলা হতো সুস্থ থাকতে হলে ব্যায়াম বা খেলাধুলা করতে হবে৷ দিন বোধহয় পাল্টে যাচ্ছে৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, নিজের খেলতে হবে না, অন্যের খেলা দেখলেও শরীর অনেকটা সুস্থ রাখা যাবে৷ সেটাও কী সম্ভব?
বিজ্ঞাপন
ব্যাপারটা অনেকটা অন্য কাউকে খেতে দেখেই ক্ষুধা মেটানোর মতো৷ একেবারে একরকম নিশ্চয়ই নয়, তবে কিছুটা মিল যে আছে তা তো মানতেই হবে৷ অস্ট্রেলিয়ার এক দল বিজ্ঞানী রীতিমতো গবেষণা করে দেখেছেন, খেলা দেখলে মানুষের হৃদস্পন্দন, ত্বকে রক্তের প্রবাহ, এমনকি ঘামও বাড়ে!
খুব গরম না পড়লে, পরিশ্রমও না করলে শরীরে ঘাম আসবে কী করে? এটা এখন পুরোনো প্রশ্ন৷ গত রোববার ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন অটোমেটিক নিউরোসায়েন্স' ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, তরতাজা কোনো ভিডিওতে কাউকে দৌড়াতে দেখলেও শরীরের বেশ উপকার হয়৷ বিজ্ঞানীরা একজন-দু'জন নয়, নয়জন স্বেচ্ছাসেবককে নিয়ে গবেষণা করে এমন প্রমাণই পেয়েছেন৷
স্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয়
স্ট্রোক! শুনলেই কেমন যেন আঁতকে উঠে সবাই৷ মস্তিষ্কের রক্ত চলাচলে ব্যাঘাতের কারণে হতে পারে স্ট্রোক৷ ফলে শরীরের এক পাশ অবশ হয়ে যেতে পারে৷ বাকশক্তিও বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷ সারাজীবন হয়তো বা হুইলচেয়ারে চলতে হতে পারে৷
ছবি: Sebastian Kaulitzki - Fotolia.com
স্ট্রোক বিপজ্জনক
মস্তিষ্কের রক্ত চলাচলে ব্যাঘাতের কারণে এই রোগ যে কোনো সময় যে কারও হতে পারে একেবারে হঠাৎ করেই৷ স্ট্রোক হলে বাকশক্তি, দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে যেতে পারে৷ শরীরের যে-কোনো অংশ অবশ হতে পারে৷ সারাজীবন হয়তো বা হুইলচেয়ারে চলতে হতে পারে৷ তবে এটা নির্ভর করে মস্তিষ্কের কোন অংশে স্ট্রোক হয়েছে বা আঘাতটা কত বেশি তার ওপর৷
ছবি: Sebastian Kaulitzki - Fotolia.com
স্ট্রোকের লক্ষণ ও ঝুঁকি
মাথা ঘুরানো, হাটতে অসুবিধা হওয়া, চোখে ঘোলাটে দেখা এসব অসুবিধা দেখা দেয় স্ট্রোক হওয়ার আগে৷ ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত মোটা, উচ্চরক্তচাপ, ধূমপান, মদ্যপান, স্ট্রেস ইত্যাদি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়৷
ছবি: PeJo - Fotolia.com
একেবারেই দেরি নয়
যে-কোনো জায়গায় যে-কোনো সময় মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে৷ তখন দেরি না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে তা না হলে হয়তো দেরি হয়ে যেতে পারে৷
ছবি: Robert Kneschke - Fotolia.com
জার্মানিতে স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা
প্রতি বছর জার্মানিতে ২৬০,০০০ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে৷ মৃত্যুর কারণ হিসেবে স্ট্রোকের স্থান তৃতীয় ৷ সারা বিশ্বেই স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গবেষণা
আর সে কারণেই স্ট্রোক নিয়ে গবেষণা জরুরি হয়ে পড়েছে৷ জার্মানিতে গত ২০ বছরে স্ট্রোক থেরাপি বেশ শক্তিশালী হয়েছে, বলেন প্রফেসর ইওয়াখিম রোটার, হামবুর্গ আসক্লেপিয়োস ক্লিনিক৷ স্ট্রোকে আক্রান্ত গড় আয়ু মেয়েদের ৭৫ আর পুরুষদের ৭০ বছর৷ স্ট্রোকের কবলে পড়তে পারে শিশু কিশোররাও৷
শিশুরাও এর বাইরে নয়
জার্মানিতে প্রতিবছর স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় ৩০০ শিশু ৷ এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ আবার নবজাতক শিশু৷শুধু তাি নয় মাতৃগর্ভেও আক্রান্ত হতে পারে শিশু৷ তাছাড়া বংশগত কারণে এমনটা হতে পারে৷শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময় কয়েক মাস বা কয়েক বছর পর হয়তো মস্তিষ্কের ক্ষতি ঠিক মতো বোঝা যায়৷
ছবি: Cristina Quicler/AFP/Getty Images
নিয়মমতো চলতে হবে
স্ট্রোক হলে মানুষ মুহূরতেই অথর্ব হয়ে যেতে পারে৷ তাদের হতে হয় পরের উপর নির্ভরশীল৷ তাদের বুঝে শুনে খাওয়া-দাওয়া করতে হয়৷ করতে হয় নিয়মিত ব্যায়াম৷ এড়িয়ে চলতে হয় বাড়তি স্ট্রেস৷ কারণ যদি কারও দ্বিতীয়বার স্ট্রোক হয় তাহলে পরিণতি মারাত্মক হতে পারে৷ কাজেই প্রথমবার স্ট্রোক হওয়ার পর থেকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়৷ নিয়মিত ব্লাডপ্রেশার মাপা প্রয়োজন এবং হাসিখুশি থাকাটাও জরুরি৷
ছবি: Fotolia/Robert Kneschke
7 ছবি1 | 7
নয়জনকে প্রথমে একটি স্থিরচিত্র দেখানো হয়৷ কম্পিউটারের মনিটরে সেই ছবি দেখার পর তাঁদের শরীরে কী প্রতিক্রিয়া হলো, তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা৷ কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ধরা পড়েনি৷ তারপর দেখানো হয় ২২ মিনিটের একটি ভিডিও৷ ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক দৌড়বিদ খুব দ্রুত দৌড়াচ্ছেন৷ ব্যাস, দর্শকদের মনে দেখা দেয় উত্তেজনা, শরীরেও পড়তে থাকে তার প্রভাব৷ হৃদস্পন্দন এবং শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুততর হতে থাকে, প্রত্যেকের শরীরে এক সময় চিকচিক করতে থাকে ঘাম৷ এমন প্রতিক্রিয়া খালি চোখেও দেখা যায়৷ কিন্তু ত্বকে রক্তের প্রবাহ বাড়ার মতো অন্তর্গত পরিবর্তনগুলো তো এভাবে দেখা যায় না৷ বিজ্ঞানীরা সেসব দেখতে আগে থেকেই নয়জনের শরীরে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন বিশেষ ধরণের সিরিঞ্জ৷ তার সহায়তায় স্নায়ুতে যেসব পরিবর্তন দেখা যায় সেগুলোর কারণেই বিজ্ঞানীরা বেশি অবাক৷ গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা বিজ্ঞানী ভগান মেসফিল্ড বার্তা সংস্থা এএফপি-কে সে কথাই জানিয়েছেন৷
ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন সিডনির এই গবেষক বিস্ময়কর এক উদ্ভাবনের কথা জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘আমরা জানতে পেরেছি দৌড়ানোর সচল ছবি দেখলেও হৃদপিণ্ড এবং ত্বকে রক্তের প্রবাহ বাড়ে, ঘাম বাড়ে, শ্বাস-প্রশ্বাসও দ্রুত হয়৷'' এসব পরিবর্তন শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে৷ দৌড়াতে দেখলেই যেহেতু এমন উপকার হয়, শারীরিক পরিশ্রম বেশি হয় এমন খেলার ভিডিও দেখলেও তা হবে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা৷