প্রতিদিন ধর্ষণ আর নারীর সহিংসতার শিকার হওয়ার খবর৷ এ নতুন কিছু নয়৷ তবে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের পর প্রতিক্রিয়ায়, প্রতিবাদে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
কিন্তু এক ধরনের প্রশ্রয় আর বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং তার ওপর বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা দূর না হলে ধর্ষণ, নিপীড়ন কি কমবে? সে আশা করা যায়?
প্রশ্রয় কে বা কারা দেয়? কারা একেবারেই দেয় না? নোয়াখালীর বিভৎস ঘটনার পর থেকে অনেকগুলো ধর্ষণের খবরই তো এসেছে৷ কোথাও গৃহকর্মীকে ধর্ষণ, কোথাও স্কুলছাত্রী বা কোথাও মাদ্রাসাছাত্রী ধর্ষণের শিকার৷ কোথাও দলীয় পরিচয়ে আলাদা করা যাবে ধর্ষককে৷ কোথাও বড় করে দেখানো যেতে পারে পেশাগত পরিচয়৷ তবে সবক্ষেত্রে একটা পরিচয় ‘কমন'৷ তারা সবাই ধর্ষক৷ প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার সবার৷
কিন্তু দল, স্কুল বা মাদ্রাসা, কিংবা সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলো থেকে কি ধর্ষকের শাস্তির জোর দাবি উঠেছে?কেন ওঠেনি? কেন ওঠে না?
তাহলে কি ক্ষমতার বলয়ে এবং সেই বলয়ের বাইরে যার যার অবস্থান থেকে ধর্ষক, নিপীড়ককে প্রকারান্তরে ‘ছাড়’ দেয়ার প্রচ্ছন্ন প্রবণতা খুব কাজ করে?
এসব প্রশ্নের জবাবেই রয়েছে ধর্ষণ এবং নারীর প্রতি সহিংসতাবিরোধী চলমান ক্ষোভ-বিক্ষোভ-প্রতিবাদের অনিবার্য পরিণতি৷
কাজী নজরুল ইসলামের ‘খোকার সাধ’ কবিতায় খোকার বড় সাধ হয়েছিল সকাল বেলার পাখি হয়ে সবার আগে, এমনকি সূয্যি মামাও জাগার আগে কুসুমবাগে জেগে ওঠার৷‘‘হয়নি সকাল ঘুমো এখন’’ বললে মা-কে সে বলতে চেয়েছিল,
‘‘হয়নি সকাল- তাই বলে কি সকাল হবে না ক?
আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?
তোমার ছেলে উঠলে গো মা রাত পোহাবে তবে!’’
সবাই না ‘জাগলে’, দল-মত-পেশা-ধর্ম-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই ধর্ষণ, নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার না হলে, সব ধর্ষক, নির্যাতনকারীর সাজা সমানভাবে সবাই চাইতে না পারলে কোনো পরিবর্তন কি আসবে কখনো?
গতবছর ৬ অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...
ধর্ষণে শীর্ষ ১০ দেশ
বিশ্বের ৩৫ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হন৷ এর মধ্যে ৪০ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হলেও চুপ থাকেন, ১০ শতাংশ আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেন৷ এক সমীক্ষা জানাচ্ছে, ২০১৯ সালে কোন দেশে কতগুলো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregor
সাউথ আফ্রিকা
দেশটির প্রতি এক লাখের মধ্যে ১৩২ জনেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের জরিপ অনুসারে, প্রতি চারজনের মধ্যে একজন ধর্ষণ করে সেই কথা স্বীকারও করেন৷
ছবি: Reuters
বোতসোয়ানা
দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ বোতসোয়ানায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে৷ দেশটির প্রতি এক লাখ নারীরর মধ্যে ৯৩ জন ধর্ষণের শিকার হন৷
ছবি: picture alliance/AA/K. Mathe
লেসোথো
দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক দেশ লেসোথোয় ২০১৯ সালে তৃতীয় সর্বোচ্চ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷ সেখানকার এক লাখ নারীর মধ্যে ৮৩ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা ২১ লাখ ২৫ হাজার ২৬৮ জন৷
ছবি: Imago/F. Stark
সোয়াজিল্যান্ড
সোয়াজিল্যান্ডে প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৭৮ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দক্ষিণ আফ্রিকার এই দেশটির জনসংখ্যা ১১ লাখ ৪৮ হাজার ১৩০ জন৷ সেই হিসেবে ২০১৯ সালে এ দেশে ৮৯৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
বারমুডা
দেশটির প্রতি এক লাখের মধ্যে ৬৭ জনেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ অনেক দেশেই যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতারিবোধী আইন থাকলেও নানান অসঙ্গতিতে তা ঠিকমতো প্রয়োগ হয় না৷
ছবি: pictureäalliance/dpa/A. Simmons
সুইডেন
ইউরোপের এই দেশটিতে প্রতি এক লাখের মধ্যে ৬৩ জনেরও বেশি নারী ধর্ষিত হন৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হলেও বিশ্বজুড়ে পুরুষরাও প্রতিদিন যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/A. Tamboly
সুরিনাম
দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশ সরিনামের প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৪৫ জন ধর্ষণের শিকার হয়৷ দেশটিতে পাঁচ লাখ ৮১ হাজার ২৭২ জন মানুষ বসবাস করে৷ গত বছর দেশটিতে ২৬২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/E.Troon
কোস্টা রিকা
মধ্য অ্যামেরিকার দেশ কোস্টা রিকার প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৩৭ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ গবেষণা বলছে, ১৬ থেকে ১৯ বছর বয়সের নারীদের ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: Reuters/J.C. Ulate
নিকারাগুয়া
মধ্য অ্যামেরিকার এই দেশটির প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ন৩২ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা ৬৫ লাখ ৪৫ হাজার ৫০২ জন৷ ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ ডটকম বলছে, অনেক নারী যৌন সহিংসতার ঘটনা নিয়ে অভিযোগই করেন না৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Ocon
গ্রেনাডা
ক্যারিবীয় এই দেশটির প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৩১ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা এক লাখ ১২ হাজার তিনজন৷ ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সি কলেজ ছাত্রীরাও যৌন নির্যাতনের ঝুঁকিতে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Camara
অন্যান্য
১১৮টি দেশের মধ্যে চালানো এই জরিপে ১৪তম অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র৷ ৪০তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে প্রায় ১০ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ ৪২তম অবস্থানে থাকা জার্মানিতে প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৯ জনেরও বেশি ধর্ষিত হন৷ আর ভারতের প্রতি লাখ নারীর মধ্যে এক দশমিক ৮ জন ধর্ষণের শিকার হন৷