অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন এলাকার নদীতে নিখোঁজ যাত্রীদের লাশ ভেসে ওঠার খবর পাওয়া যাচ্ছে৷ নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী জাহাজ জরিপ-১০ শেষ পর্যন্ত আসেনি৷ তাই উদ্ধারকারী জাহাজ ‘নির্ভীক' ও ‘রুস্তম' উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে৷ তবে তিনদিনেও তারা ডুবে যাওয়া লঞ্চটির অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি৷ এর এতে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে নিখোঁজদের আত্মীয় স্বজনের৷ তাঁরা বিক্ষুব্ধ হয়ে মিছিল বের করেছেন৷ বলছেন,‘লাশ চাই, লাশ চাই৷' লঞ্চটির শতাধিক যাত্রী এখনো নিখোঁজ আছেন৷
ঈদ মানেই আনন্দ আর এই আনন্দ পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করে নিতেই বাড়ি ফেরেন মানুষ৷ সেজন্য অনেকেই সারারাত অপেক্ষা করেন ট্রেনের টিকেটের জন্য কিংবা লঞ্চে ওঠেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে৷ সেরকমই কিছু ছবি পাবেন এখানে৷
ছবি: DW/M. Mamunঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের আগাম টিকেট সংগ্রহের জন্য মানুষের ভিড়৷ আগের দিন রাত থেকে এসব মানুষ দাঁড়িয়েছিলেন টিকেটের জন্য৷ তবে যাত্রীর তুলনায় বাংলাদেশ রেলওয়ের আসন সংখ্যা কম হওয়ায় দিনভর অপেক্ষা শেষে অনেককেই ফিরতে হয় খালি হাতে৷
ছবি: DW/M. Mamunঢাকার বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় হাজারো ঘরমুখো মানুষ৷ ঈদের সময়ে যাত্রীর চাপের কারণে ট্রেনের সময়সূচি ঠিক রাখতে পারছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ৷ তবে এ চিত্র আগের বছরের তুলনায় এ বছর অনেক ভালো৷
ছবি: DW/M. Mamunজীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠছে হাজারো ঘরমুখো মানুষ৷ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতেই এতো কষ্ট করে বাড়ি ফেরা৷
ছবি: DW/M. Mamunঈদের ছুটিতে ট্রেনের ছাদে চড়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ৷ জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও ছাদে চেপে বসেছেন এসব মানুষ৷ ছাদে যাত্রী পরিবহণ নিষিদ্ধ হলেও প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যাকুল মানুষের কাছে সকল নিষেধাজ্ঞাই উপেক্ষিত৷
ছবি: DW/M. Mamunসদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের ভিড়৷ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম নৌপথ৷ অন্যান্য পথের মতো নদীপথেও তাই ঈদ উপলক্ষ্যে মানুষের ভিড় বেশি৷
ছবি: DW/M. Mamunলঞ্চের ডেকে গাদাগাদি করে বসে বাড়ি ফিরছেন মানুষ৷ ঈদের সময় লঞ্চগুলোর ডেকে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ করা হয়৷
ছবি: DW/M. Mamunঢাকার সদরঘাটে নৌকা থেকে লঞ্চে উঠছেন যাত্রীরা৷ এভাবে উঠতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন যাত্রীরা৷ এরপরেও নারী ও শিশুদের নিয়ে এভাবেই লঞ্চে উঠতে দেখা যায় যাত্রীদের৷
ছবি: DW/M. Mamunলঞ্চের ডেকে জায়গা না পেয়ে খোলা ছাদে উঠে পড়েছেন হাজারো মানুষ৷ অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের ফলে প্রতিবছরই ঈদ মৌসুমে দুর্ঘটনায় পড়ে অনেক নৌযান, প্রাণ হারান অনেকেই৷ তারপরেও থেমে থাকে না অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই৷
ছবি: DW/M. Mamunপরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছেন এসব মানুষ৷ ভুলে গেছেন সরকারের নিষেধাজ্ঞা, নিজ জীবনের নিরাপত্তা৷ ঈদের আগের দিন ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোর চিত্র ছিল একই৷ এ যেন ঝুঁকির মধ্যে আনন্দ যাত্রা!
ছবি: DW/M. Mamunনৌ ও রেলপথের মতোই সড়ক পথেও যাত্রীর চাপ বেশি৷ অনেকেই তাই বাড়ি ফিরছেন বাসের ছাদে চড়ে৷ তবে এতো কষ্টের পরও কখন বাড়ি ফিরতে পারবেন যাত্রীরা এর কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ বাংলাদেশের সড়কপথে ঈদের আগে যাত্রীদের জন্য সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায় যানজট৷
ছবি: DW/M. Mamunঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরতে ট্রাকে চড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ৷ এসব মানুষের বেশিরভাগই দিনমজুর৷ তবে টিকেট না পাওয়ায় অনেক মধ্যবিত্তকেও দেখা যায় ট্রাকে উঠতে৷ এভাবেই ট্রাকে চড়ে ৪০০-৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পরিবারের সঙ্গে মিলিত হবেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি), নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা এখনো যৌথভাবে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন৷ বিআইডব্লিউটিসির মাওয়া অঞ্চলের ব্যবস্থাপক আবদুল আলীম জানান, দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশের ১১ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে এবং এই তল্লাশি অব্যাহত আছে৷ তবে এখনো ডুবে যাওয়া লঞ্চের সন্ধান মেলেনি৷
এদিকে পদ্মার ভাটিতে দেশের বিভিন্ন এলাকার নদীতে লাশ ভেসে ওঠার খবর পাওয়া যাচ্ছে৷ এ পর্যন্ত অন্তত ১২টি লাশ ভেসে ওঠার খবর পাওয়া গেছে৷ জানা গেছে, শরিয়তপুরের নড়িয়ার সুরেশ্বর-ওয়াপদা এলাকা এবং জাজিরার কুণ্ডের চরে পাঁচটি, চাঁদপুরে মেঘনায় দুটি, ভোলা সদরের রাজাপুর ও কাঠিরমাথা এলাকায় মেঘনা নদী থেকে দুটি লাশ, শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চর আত্রা এলাকায় পদ্মা নদীতে এক নারীর লাশ ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা৷ এছাড়া মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় লঞ্চডুবির দুদিন পর লাশ ভেসে উঠছে৷
সোমবার বেলা ১১টার দিকে কাওড়াকান্দি থেকে তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে মাওয়া ঘাটে যাওয়ার পথে লৌহজং ক্রসিংয়ে ডুবে যায় লঞ্চ এমএল পিনাক-৬৷ দুর্ঘটনার পরপরই নদী থেকে দুই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়৷ এছাড়া স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে ১৬৯ জন নিখোঁজ যাত্রীর একটি তালিকা তৈরি করেছে লৌহজং থানা পুলিশ৷