যাত্রাপথে দুই দেশের অন্তত ৫০টি ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ স্থান ঘুরে দেখার সুযোগ থাকবে এই প্রমোদতরীতে৷
শুক্রবার যাত্রার সূচনা করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী; এরপর মোট ৫১ দিন পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন নদ-নদী ঘুরে আসামের ডিব্রুগড়ে পৌঁছবে৷
প্রটোকল রুট ধরে এই নৌযান চলাচলে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছে ভারত৷ সেদেশের সরকারের উদ্যোগে এটি চালু হলেও পরিচালনার দায়িত্বে আছে ‘অন্তরা লাক্সারি রিভার ক্রুজেস'৷
এতে জন প্রতি একদিনের টিকেটের দাম পড়বে ২৪ হাজার ৬৯২ রুপি; যাত্রাপথের মোট ৫১ দিনের ভাড়া ১২ লাখ ৫৯ হাজার রুপি৷ তবে আলাদা আলাদা প্যাকেজেও পর্যটকরা এই তরীতে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পাবেন৷
গঙ্গা বিলাসের উদ্বোধন সামনে রেখে বুধবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইটে বলেছেন, ‘‘এটা আমাদের সাংস্কৃতিক শেকড়কে সংযুক্ত করার এবং ভারতের বৈচিত্র্যকে আবিষ্কারের বিরল সুযোগ৷”
আর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, ২৭টি নদ-নদীতে চলবে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী' গঙ্গা বিলাস৷ ভারত-বাংলাদেশ প্রটোকল নৌপথে এটি ৫০ দিনেরও বেশি সময়ে বারানসি থেকে ডিব্রুগড় পাড়ি দেবে৷
দীর্ঘ যাত্রাপথে সুন্দরবন, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান ছুঁয়ে যাবে প্রমোদতরী গঙ্গা বিলাস৷
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, বারানসি থেকে যাত্রা শুরু করে বক্সার, রামনগর, গাজীপুর পেরিয়ে অষ্টম দিনে পাটনা পৌঁছবে ‘গঙ্গা বিলাস'৷ সেখান থেকে ফারাক্কা, মুর্শিদাবাদ হয়ে কলকাতা পৌঁছতে সময় লাগবে আরও দুদিন৷
“কলকাতা থেকে এরপর ওপার বাংলার উদ্দেশে পাড়ি দেবে ‘গঙ্গা বিলাস'৷ বাংলাদেশের নদীতে এই প্রমোদতরী ঘুরে বেড়াবে আরও ১৫ দিন৷ এরপর বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম দিয়ে আবার ভারতে প্রবেশ করে যাত্রা শেষ হবে ডিব্রুগড়ে৷
বিলাসবহুল এই প্রমোদতরীতে মোট ৮০ জন যাত্রীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে৷ পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য রয়েছে গানবাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন আয়োজন৷ সেই সঙ্গে থাকছে শরীরচর্চা আর রূপচর্চার কেন্দ্র৷
বুধবার ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের এক ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, “এটি ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতার আরেকটি ইতিবাচক অধ্যায়৷ আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থাও ক্রমশ পূর্ব দিকে উন্নততর হচ্ছে৷”
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
প্রমোদতরী ভ্রমণ কারো কাছে সহজে দেশ-বিদেশ ঘুরার সুযোগ, কারো কাছে উপভোগের বিলাসী ব্যবস্থা৷ কেউ পছন্দ করেন, কেউবা অপছন্দ৷ অবকাশ কাটানোর জন্য ক্রুজ ভ্রমণ দিনকে দিনই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ এর ভাল দিক যেমন আছে, তেমনি আছে খারাপও৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Warneckeআজকে স্পেনের পালমায় তো কাল বার্সেলোনায়, পরসু মার্সেইতে৷ এমন ভ্রমণের জন্য আপনার বারবার স্যুটকেস গোছানোর দরকার নেই৷ ক্রুজ শিপ বা প্রমোদতরীর ভাসমান হোটেলই আপনাকে নিয়ে যাবে দর্শনীয় সব স্থানে৷ পর্যটকরা দেখতে পাবেন বিশ্বখ্যাত নগরগুলো, চেখে দেখতে পারেন খাবার, আছে স্থানীয় সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য উপভোগের সুযোগ৷ প্রতিদিনই ঘুমাতে পারছেন একই বিছানায়৷ প্রমোদ তরীর চেয়ে ঝামেলাবিহীন ভ্রমণের সুযোগ আর কোথায় মিলবে?
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaeneএকটা সময়ে প্রমদতরীতে ভ্রমণে বের হতেন বয়স্করাই৷ চাকরীশেষে অবসর জীবনে সমুদ্রে ভেসে আয়েশ করে ঘুরে বেড়াতেন তারা দেশ বিদেশে৷ কিন্তু দিনকে দিন ক্রুজ ভ্রমণ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তরুণদের কাছেও৷ আধুনিক এসব জাহাজে থাকে সব বয়সীদের বিনোদনের ব্যবস্থা৷ খেলাধুলা, বর্ণিল সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকে উপভোগের নানা ব্যবস্থা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Warneckeঅতিরিক্ত ভিড় যাদের পছন্দ নয়, তারা ভিড়ে যেতে পারেন কোন অভিযাত্রী দলের জাহাজে৷ প্রচলিত ক্রুজগুলোর চেয়ে সেগুলো আলাদা, আকারে ছোট আর পরিবেশবান্ধবও৷ কিন্তু আপনাকে নিয়ে যাবে উত্তর মেরু কিংবা এন্টার্কটিকার দুর্গম উপকূলে৷ তবে এর জন্য টাকাও কিছুটা বেশি গুণতে হবে৷
ছবি: Imago/blickwinkelবড় ট্যুর অপারেটরদের আয়োজনে আপনার প্রয়োজনীয় কোন কিছুরই কমতি থাকে না৷ থাকে পর্যাপ্ত খাবার, পানীয়র ব্যবস্থা৷ দাম প্যাকেজেই অন্তর্ভুক্ত থাকে৷ খরচও তুলনামূলক কম৷
ছবি: picture-alliance/dpaতবে চিন্তা একটাই, পরিবেশ দূষণ৷ যে কারণে পরিবেশবিদরা এই ধরনের ক্রজের ঘোর সমালোচক৷ বিশ্বের বেশির ভাগ প্রমোদতরী চলে অপেক্ষাকৃত বিষাক্ত জ্বালানি তেলে৷ তবে অনেক জাহাজ কোম্পানি তরলীকৃত গ্যাস, হাইব্রিড ইলেকট্রিক সিস্টেমের মতো তুলনামূলক কম ক্ষতিকর জ্বালানি ব্যবহার শুরু করেছে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/H. Baesemannজাহাজগুলো অনেক সময়ই নোঙ্গর করে বড় শহরগুলোর তীরে৷ যার ফলে সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য তৈরি হয় বাড়তি চাপ৷ বন্দরে এসব জাহাজ চালু রাখতে হয় মেরিন ডিজেলের মাধ্যমে৷ যা গাড়িতে ব্যবহৃত ডিজেলের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি ক্ষতিকর৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/H. Peterswaldএকটি জাহাজ কোন একটি শহরে ভিড়লে কয়েক হাজার নতুন পর্যটকের চাপ সামলাতে হয় সেখানকার বাসিন্দাদেরকে৷ আর তা যদি ইতালির ভেনিস বা ক্রোয়েশিয়ার ডুবরোভনিকের মত ছোট আকারের হয় তাহলেতো কথাই নেই৷ রাস্তা, দর্শনীয় স্থানগুলো গিজগিজ করতে থাকে পর্যটকের ভিড়ে৷ কিছু শহরের কর্তৃপক্ষতো স্থানীয়দের প্রতিবাদের এমন জাহাজ আসার অনুমোদনই কমিয়ে দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Scholzক্রুজ জাহাজের বেশিরভাগই ইতালি, মালটা আর বাহামাতে নিবন্ধিত৷ কেন জানেন? এইসব দেশে করের হার কম৷ এতে মুনাফা বেশি হয় ক্রজ জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের৷ কিন্তু তার যথাযথ ভাগ পান না কর্মচারীরা৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিষেবা কর্মীদের বেতন জার্মানির ন্যূনতম মজুরির চেয়ে কম৷
ছবি: picture-alliance/J. Effner