আবার আন্দোলনে নামছে গণজাগরণ মঞ্চ৷ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে৷ এ নিয়ে আলোচনা আগেই জমে ওঠে৷ বিদেশি পত্রিকায় ভুল সংবাদ, অপপ্রচার ও মুখপাত্রের বক্তব্যের সমালোচনা – অনলাইনে গণজাগরণ মঞ্চের যেন জাগরণ হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
হেফাজতে ইসলামী মাঠে নামার পর কয়েকজন ব্লগারকে গ্রেপ্তার করে সরকারও কিছুটা কঠোর অবস্থান নেয়ায় বাংলেদেশের রাজনীতির মাঠে গণজাগরণ মঞ্চ অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল৷ কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না৷ এ কারণেই হয়ত ব্রিটেনের ‘গার্ডিয়ান' পত্রিকা গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ‘ইমরান এইচ সরকার আত্মগোপন করেছেন' – এমন একটি খবর প্রকাশ করেছিল৷ তাতে বিভ্রান্তি কিছুটা ছড়ানো গেলেও সত্যিটা ঠিকই বেরিয়ে এসেছে৷ ইমরান এইচ সরকারের স্বাক্ষর করা এক বিবৃতির মাধ্যমে গার্ডিয়ানের ভুল সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদ জানিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ৷
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘নিবন্ধের প্রতিটি তথ্য ‘ভিত্তিহীন ও দুরভিসন্ধিমূলক'৷ গণজাগরণ মঞ্চ যে লক্ষ্য নিয়ে তাদের আন্দোলন শুরু করেছিল, তা চলছে এবং চলবেই৷ বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত গণজাগরণ মঞ্চ তার আন্দোলন চালিয়ে যাবে৷ যে কোনো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে পায়ে দলে আমরা আমাদের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবো৷ যুদ্ধাপরাধী ও জামাত-শিবিরমুক্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গঠনে আমাদের আন্দোলন চলছে, চলবেই৷''
জেগে আছে প্রজন্ম চত্বর
মূল দাবি একটাই, ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই’৷ এই দাবি নিয়ে পাঁচই ফেব্রুয়ারি থেকে শাহবাগ চত্বরে অবস্থান করছে তরুণ প্রজন্ম৷ তাদের সমর্থন জানাচ্ছে সবশ্রেণির মানুষ৷ ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে বেশ কয়েকদিন৷ কিন্তু এক চুল নড়েনি তারা৷
ছবি: Reuters
লাগাতার আন্দোলন
শাহবাগে অবস্থান নেওয়া তরুণ প্রজন্ম গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি ধরে লাগাতার তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে৷ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে অনড় তারা৷ ডয়চে ভেলের ওয়েবসাইটে নিয়মিত সেখানকার হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাতীয় দলের আগমন
রবিবার প্রজন্ম চত্বরে এক টুকরো আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে এসেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা৷ আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল, শাহবাগে অবস্থান নেওয়া ব্লগার, তরুণ সমাজের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে আসছেন তাঁরা৷ রবিবার সেই খবরের সত্যতা প্রকাশ পেলো৷
ছবি: REUTERS
টুইটার লড়াই
হ্যাশট্যাগ #shahbag, কেউ কেউ ব্যবহার করছেন #shahbagh - আসলে শাহবাগের ইংরেজি বানান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে৷ উইকিপিডিয়া শেষের এইচটি বাদ দিলেও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সেটি ধরে রেখেছে৷ এই বিভ্রান্তি অবশ্য টুইটার লড়াইকে পেছনে ফেলেনি৷ বরং সমানতালে দু’টি হ্যাশটাগ দিয়েই জানানো হচ্ছে আন্দোলনের অগ্রগতি৷
ছবি: REUTERS
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে ‘শোধরানোর’ চেষ্টা
শাহবাগের প্রতিবাদ কি যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে না ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে? বিবিসি ইংরেজি বিভাগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের শিরোনামে এই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল৷ টুইটারে আন্দোলনকারীদের অব্যাহত দাবির পর সেই শিরোনামে বদল এসেছে৷ ইসলামপন্থী বাদ দিয়ে যুদ্ধাপরাধ শব্দটি জোড়া হয়েছে সেখানে৷ এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আমারব্লগ৷
ছবি: amarblog.com
‘শাহবাগ সাইবার যুদ্ধ’
প্রজন্ম চত্বরে অবস্থান করছেন ‘শাহবাগ সাইবার যুদ্ধ’ দলের অনেক সদস্য৷ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইট ব্যবহার করে যুদ্ধাপরাধীদের চরম শাস্তির দাবিকে আরো সোচ্চার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা৷ পাশাপাশি প্রজন্ম চত্বরের সর্বশেষ পরিস্থিতিও ইন্টারনেটে তুলে ধরা হচ্ছে এদের মাধ্যমে৷
ছবি: REUTERS
‘আপনার সহায়তা প্রয়োজন’
ডয়চে ভেলের টুইটার পাতাতে আন্দোলনকারীদের কিছু বার্তা আমরা পেয়েছি৷ জিন্নাত গোনিম নামক ঢাকার এক বাসিন্দা টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আমরা কোন রাজনৈতিক দল, ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি নই৷ আমরা বাংলাদেশি৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাচ্ছি, আমার মায়ের হত্যাকারীর, বোনের ধর্ষকের বিচার চাচ্ছি৷ আমাদের আপনার সহায়তা প্রয়োজন৷’’
ছবি: twitter.com
এই প্রজন্মের নারী মুক্তিসেনাদের লড়াই
গত কয়েকদিন ধরেই গণমাধ্যমের শিরোনামে জায়গা করে নিচ্ছেন লাকি আক্তার৷ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী আন্দোলন শুরুর দিন থেকে রয়েছেন শাহবাগে৷ তাঁর মতো আরো কয়েকজন নারী মুহুর্মুহু শ্লোগানে কাপিয়ে তুলছেন প্রজন্ম চত্বর৷ বিভিন্ন স্কুলকলেজের ছাত্রীরা মাঝেমাঝে হাজির হচ্ছেন আন্দোলনে৷
ছবি: REUTERS
‘ফাঁসির মঞ্চ’ প্রস্তুত
‘রাজাকারের ফাঁসি চাই’ - এই হচ্ছে প্রজন্ম চত্বরে আন্দোলনরতদের মূল দাবি৷ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করলে তা প্রত্যাখ্যান করে তরুণ প্রজন্ম৷ তারা চায় ফাঁসির আদেশ৷ শাহবাগে প্রতীকী ‘ফাঁসির মঞ্চ’ তৈরি করে যুদ্ধাপরাধীদের চরম শাস্তির অপেক্ষায় আছে ব্লগাররা৷
ছবি: Reuters
সপরিবারের শাহবাগে
শাহবাগে অনেকেই হাজির হচ্ছেন সপরিবারে৷ ক্রিকেটার থেকে শুরু করে সাহিত্যিক, অধ্যাপক অনেকেই এসেছেন সপরিবারে৷ এই ছবিতে এক শিশুকে দেখা যাচ্ছে শাহবাগ চত্বরে, প্রতিবাদী ব্যানার মাথায় জড়িয়ে৷
ছবি: REUTERS
ব্লগার এন্ড অনলাইন অ্যক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক
‘ট্র্যাইবুনালে কাদের মোল্লার প্রহসনের রায়ের বিরুদ্ধে মহাসমাবেশ’ - এই শিরোনামে পাঁচ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল ব্লগার এন্ড অনলাইন অ্যক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক৷ ব্লগারদের আহ্বানে সেদিন শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করে সাধারণ মানুষ৷ এখন এই আন্দোলন আমজনতার৷
ছবি: REUTERS
10 ছবি1 | 10
এদিকে বাংলাদেশেও গণজাগরণ মঞ্চ ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে, দাবি করা হয়েছে বিবৃতিতে৷ ফেসবুকে জানানো হয়েছে গণজাগরণ মঞ্চের নাম ব্যবহার করে অনেকেই বন্ধুর বেশে শত্রুর কাজ করার চেষ্টা করছে৷ এ বিষয়ে গণজাগরণ মঞ্চের বক্তব্য এরকম, ‘‘শাহবাগ আন্দোলন শুরু হবার পর রাতারাতি বেশ কিছু ফ্যানপেজ খুলে ফেলা হয়েছে বিভিন্ন নামে, যার বেশ কয়েকটি আবার খুব সূক্ষ্মভাবে শুরু থেকেই এই আন্দোলন নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে আসছে৷ খুব সুকৌশলে এরা ফ্যানপেজগুলোর মাধ্যমে আন্দোলন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে যাচ্ছে৷ তাই আমরা সবাইকে অনুরোধ করছি, যে পেজগুলো নেতিবাচক অপপ্রচার করছে তাদের আনলাইক করে বর্জন করুন৷ https://www.facebook.com/Gonojagoronmancha?ref=ts&fref=ts- এ পেজটি ছাড়া অন্য কোনো পেজের দায়দায়িত্ন গণজাগরণ মঞ্চ বহন করবে না৷''
ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগ গণজাগরণ মঞ্চের নতুন করে আন্দোলন শুরু করার খবর পরিবেশন করে ফেসবুকে পাঠকদের কাছে জানতে চেয়েছিল, ‘‘সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় প্রসঙ্গে ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, গণজাগরণ মঞ্চকে অসহযোগিতা করার কারণে অনেক প্রগতিশীল মানুষ সরকারি দলের প্রার্থীকে ভোট নাও দিতে পারেন৷ আপনি কি এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত?'' অনেকে ‘লাইক' দিলেও মন্তব্য করেননি৷ যাঁরা করেছেন, তাঁদের মধ্যে রুবেল আহমেদের মন্তব্যটাই বেশি উল্লেখযোগ্য৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘আমার কাছে বরং উল্টো মনে হচ্ছে৷ গণজাগরণকে সহায়তা করার কারণে ধর্মান্ধ মানুষেরা সরকারদলীয় প্রার্থীকে ভোট দেয়নি৷''