শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের শুক্রবার বিকেলে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ৷ বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ পুলিশ দাবি করেছে, সমাবেশের কোনো অনুমতি না থাকায় তাদের আটক এবং ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
এর একদিন আগে শাহবাগেই গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায় শাসক দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ৷ আর তারই প্রতিবাদে শুক্রবার শাহবাগে প্রতিবাদ সমাবেশ ডাকে গণজাগরণ মঞ্চ৷ বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মঞ্চের নেতা-কর্মীরা শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয়৷ এক পর্যায়ে পুলিশ সমবেত নেতা-কর্মীদের ওপর চড়াও হয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং ৭ জনকে আটক করে৷ পুলিশের হামলায় লাকি আক্তারসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে গণজাগরণ মঞ্চ দাবি করেছে৷ এ সময় গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকারকেও পুলিশ টানাহেঁচড়া করে৷ তবে শেষ পর্যন্ত তাঁকে আটক করা হয়নি৷
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রশাসনের কোনো অনুমতি না থাকায় গণজাগরণ মঞ্চকে সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি৷ তিনি বলেন, ‘‘একই সময়ে ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড' নামের একটি সংগঠনও শুক্রবার বিকেলে শাহবাগে সমাবেশের জন্য অনুমতি চায়৷ ফলে কোনো সংগঠনকেই শাহবাগে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি৷'' তিনি জানান, শুধু গণজাগরণ মঞ্চ নয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড-এর ২ জনসহ মোট ৭ জনকে আটক করা হয়েছে৷
শাহবাগ আন্দোলনের বছরপূর্তি
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শুরু হওয়া শাহবাগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা৷ তবে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী আরো অনেক ইস্যুতে এখন সরব গণজাগরণ মঞ্চ৷ শাহবাগ আন্দোলনের বর্ষপূর্তি নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শুরু হওয়া শাহবাগ আন্দোলনের এক বছর পূর্ণ হয়েছে গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি৷ বর্ষপূর্তিতে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছেন আন্দোলনের কর্মীরা৷ গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বে চলবে এই আন্দোলন৷
ছবি: DW/M. Mamun
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু
পাঁচ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় গণজাগরণ মঞ্চের অনুষ্ঠান মালা৷ তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করা হয় বর্ষপূর্তি৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘ফাঁসির’ দাবি
শাহবাগ আন্দোলনের এক বছর পূর্তির শোভাযাত্রায় একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের ‘ফাঁসির’ দাবিতে সোচ্চার ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
জনতার ভিড়
গণজাগরণের মঞ্চের আয়োজিত বর্ষপূর্তির বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় সাধারণ মানুষের ঢল নামে৷ এক বছর পূর্তিতে ঢাকার শাহবাগ থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে গণজাগরণ মঞ্চ কর্মীরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘প্রতীকী ফাঁসি’
শোভাযাত্রায় ‘প্রতীকী ফাঁসির’ চিত্রও তুলে ধরা হয়৷ বলাবাহুল্য, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের উদ্যোগকে সমর্থন করলেও ফাঁসির বিষয়ে সমর্থন নেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের৷
ছবি: DW/M. Mamun
আলোকচিত্র প্রদর্শনী
আন্দোলনের বছর পূর্তিতে শাহবাগে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়৷ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শুরু হওয়া এই আন্দোলন শাহবাগ ছাড়িয়ে গোটা বাংলাদেশে এবং পরবর্তীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘নাস্তিক ব্লগার’
শাহবাগ আন্দোলন থেকে সৃষ্ট গণজাগরণের মঞ্চের গত এক বছরের পথচলা মোটেই সহজ ছিল না৷ বরং আন্দোলনের এক পর্যায়ে খুন হন ব্লগার রাজিব হায়দার৷ এরপর ঢালাওভাবে ব্লগারদের নাস্তিক এবং ইসলাম ধর্মবিরোধী আখ্যা দিয়ে তাঁদের শাস্তির দাবিতে রাজপথে নামে হেফাজতে ইসলাম৷ এক পর্যায়ে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ব্লগে ‘ইসলাম ধর্ম নিয়ে উসকানিমূলক মন্তব্য ও কটূক্তির' অভিযোগে চার ব্লগারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷
ছবি: Getty Images
‘সমর্থন আগের মতোই’
তবে ‘নাস্তিক ব্লগার’ প্রচারণার কারণে শাহবাগে জনসমর্থন কমেনি বলে মনে করেন ব্লগার আরিফ জেবতিক৷ শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম এই কর্মী বলেন, ‘‘আমাদের শুরুতে যে জনসমর্থন ছিল, আজকেও সেই একই জনসমর্থন আছে৷ এবং আমি চ্যালেঞ্জ করি যে কোনো মিডিয়া এটা জরিপ চালিয়ে দেখতে পারে৷’’
ছবি: Arif Jebtic
ভিন্নমত
শুরুর দিকে শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন অবশ্য মনে করেন, ‘‘রাজনৈতিক দল এবং আমাদের রাজনীতিক নেতারা আসলে আমাদের আন্দোলনটা খেয়ে ফেলেছে৷’’ দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত আসিফ গত বছর বাংলাদেশে কয়েকমাস কারাভোগের পর বর্তমানে জার্মানিতে অবস্থান করছেন৷
ছবি: DW/A. Islam
বিভিন্ন ইস্যুতে সরব গণজাগরণ মঞ্চ
প্রসঙ্গত, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবির পাশাপাশি আরো অনেক ইস্যুতে সরব রয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ৷ সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ‘রোড মার্চ’ করে গণজাগরণ মঞ্চ৷
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
10 ছবি1 | 10
গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘‘প্রতিবাদ করার অধিকার সবার আছে৷ পুলিশ আমাদের প্রতিবাদ করার অধিকার হরণ করছে৷ হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে৷'' তিনি অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার পুলিশের সহায়তায় গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ওপর হামলা হয়৷
বৃহস্পতিবার গণজাগরণ মঞ্চের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় ঐ হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়৷ আর সেই হামলার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করে গণজাগরণ মঞ্চ৷
এর আগেও পুলিশ গত ডিসেম্বরে গুলশানে গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের লাঠি পেটা করে৷ যুদ্ধাপরাধের দায়ে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার পর পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নিন্দা প্রস্তাব পাশ করে৷ এর প্রতিবাদে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিতে গুলশানে পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাও করতে গেলে পুলিশ তখন মঞ্চের নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা এবং বেশ কয়েকজনকে আটক করে৷
গত বছরের ৫ই ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধ মামলায় ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলে এর প্রতিবাদে গড়ে ওঠে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ৷ তাদের আন্দোলনের মুখেই আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ দেয়া হয়৷ আর আপিলে কাদের মোল্লার দণ্ড বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়৷ গত ডিসেম্বরে এই রায় কার্যকর হয়েছে৷
গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মুখেই যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনেরও বিচারের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷ আর সে কারণেই জামায়াতে ইসলামীকেও এখন বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে৷