আরব বিশ্বে প্রকৃত গণতান্ত্রিক কাঠামো অত্যন্ত বিরল ঘটনা৷ অথচ নানা সমস্যা সত্ত্বেও টিউনিশিয়ায় সহিষ্ণুতার ভিত্তিতে গণতন্ত্রের বিকাশের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখা যাচ্ছে৷ তারই স্বীকৃতি এলো নোবেল শান্তি পুরস্কারের রূপে৷
বিজ্ঞাপন
সরকার নয়, সুশীল সমাজই এগিয়ে এসেছে ‘আরব বসন্ত'-কে জোরদার করতে৷ জাতীয় স্তরে সংলাপে উৎসাহ দিতে চারটি সংগঠন মিলে গড়ে তুলেছে এক কোয়ার্টেট বা জোট৷ তারা হলো শ্রমিক ইউনিয়ন, শিল্প ও বাণিজ্য কনফেডারেশন, মানবাধিকার লিগ ও আইনজীবীদের সংঘ৷ তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দিলো নোবেল কমিটি৷
ভারতের নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী এই খবর শুনে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷
অভিনন্দন জানিয়েছে জাতিসংঘও৷
স্নোবার অ্যালেন আব্বাসি মনে করেন, নোবেল শান্তি পুরস্কারের আসল শক্তি অতীতকে সম্মান জানানো নয়, বরং ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করা৷
রান্ডা স্লিম লিখেছেন, সংলাপ, সুশীল সমাজ ও আরব অঞ্চল – এই তিনটি বিষয়ই গুরুত্ব পেয়েছে৷
প্রতিবারই নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণার আগে তীব্র মাত্রায় জল্পনা-কল্পনা চলে৷ এবারে যেমন জার্মান চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও পোপ ফ্রান্সিস-এর নাম শোনা যাচ্ছিল৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিসাব মেলে না৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর ইউরোপীয় মিডিয়া প্রধান অ্যান্ড্রু স্ট্র্যোলাইন এই বিষয়টি নিয়ে মশকরা করেছেন৷
নোবেল পুরস্কার কে পাবেন, তা নির্ধারণ করার প্রক্রিয়া চলে অনেক মাস ধরে৷ একটি গ্রাফিকের মাধ্যমে তারই রূপরেখা তুলে ধরেছে নোবেল কমিটি৷
২০১৫ সালের নোবেল বিজয়ীদের মাঝে আরেকজন
একটির পর একটি বিভাগে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হচ্ছে৷ বিজয়ীদের অনেকেই নীরব কর্মী, অথবা গবেষণায় মগ্ন বিজ্ঞানী, যাঁরা লোকচক্ষুর আড়ালেই থাকেন, বিশ্বখ্যাতির আলোকে আসার আগে৷
ছবি: C. Furlong/Getty Images
অ্যাংগাস ডিটন
এবার অর্থনীতিতে নোবেল পাচ্ছেন ব্রিটিশ-অ্যামেরিকান অর্থনীতিবিদ অ্যাংগাস ডিটন৷ ইনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক৷ সেখানে তিনি অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পড়ান৷ সোমবার রয়েল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অর্থনীতি বিভাগের নোবেল বিজয়ী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করে৷ অ্যাকাডেমি জানায়, ‘ভোগ, দারিদ্র্য এবং কল্যাণ’নিয়ে বিশেষ গবেষণার জন্য ২০১৫ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারটি দেয়া হবে অধ্যাপক অ্যাংগাস ডিটনকে৷
ছবি: J. Nackstrand/AFP/Getty Images
উইলিয়াম সি ক্যাম্পবেল
চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল, ২০১৫৷ জন্ম আয়ারল্যান্ডে ১৯৩০ সালে৷ মার্কিন জীববিজ্ঞানী এবং পরজীবী বিশেষজ্ঞ৷ ‘রাউন্ডওয়র্ম’ নামধারী প্যারাসাইটের ফলে যে ইনফেকশন হয়, তার চিকিৎসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আবিষ্কার করেছেন৷ বর্তমানে ড্রু ইউনিভার্সিটির এমেরিটাস রিসার্চ ফেলো৷
ছবি: Getty Images/J. Nackstrand
সাতোশি ওমুরা
মেডিসিনে নোবেল ২০১৫৷ জন্ম ১৯৩৫ সালে৷ জাপানি বায়োকেমিস্ট৷ কিতাসাতো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমেরিটাস৷ অ্যান্টি-প্যারাসাইট কমপাউন্ড অ্যাভারমেক্টিন যে স্ট্রেপ্টোমাইসেস স্ট্রেইন থেকে তৈরি হয়, তা আলাদা করতে সাহায্য করেছিলেন৷
ছবি: Getty Images/Y.Shimbun
তু ইউইউ
মেডিসিনে নোবেল ২০১৫৷ জন্ম ১৯৩০৷ চীনের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও ভেষজ রসায়ন বিজ্ঞানী৷ চীনের প্রথাগত ভেষজবিদ্যা থেকে আর্টেমিসিনিন ও ডিহাইড্রোআর্টেমিসিনিন তৈরি করে লক্ষ লক্ষ মানুষকে ম্যালেরিয়া রোগে প্রাণ হারানো থেকে বাঁচান৷
ছবি: Imago/W. Chengyun
আর্থার বি ম্যাকডোনাল্ড
পদার্থবিদ্যায় নোবেল ২০১৫৷ জন্ম ১৯৪৩ সালে৷ ক্যানাডার অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট, সাডবেরি নিউট্রিনো অবজারভেটরি ইনস্টিটিউট-এর পরিচালক৷ নিউট্রিনো নামের সাব-অ্যাটমিক পার্টিকল বা কণিকাগুলি যে তাদের প্রকৃতি বদলাতে পারে এবং নিউট্রিনোদের যে ‘মাস’ বা ওজন আছে, এই সংক্রান্ত আবিষ্কারের জন্য নোবেল পেলেন ম্যাকডোনাল্ড৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Nackstrand
তাকাকি কাজিতা
পদার্থবিদ্যায় ২০১৫ সালের নোবেল পেলেন নিউট্রিনো সংক্রান্ত আবিষ্কারের জন্য৷ ১৯৮৮ সাল থেকে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমিক রেডিয়েশন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যুক্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kyodo
টোমাস লিন্ডাল
রসায়নে নোবেল ২০১৫৷ জন্ম ১৯৩৮৷ ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের এমেরিটাস পরিচালক৷ দেখিয়েছেন যে, ডিএনএ আসলে একটি অতি ভঙ্গুর মলিকিউল এবং যে হারে ডিএনএ-র অবক্ষয় ঘটে, তা-তে পৃথিবীতে জীবনের বিকাশ ঘটা সম্ভব ছিল না৷ ফলে লিন্ডাল ‘বেস এক্সিজন রিপেয়ার’ নামের একটি মলিকিউলার প্রণালী আবিষ্কার করেন, যা অবিরাম আমাদের ডিএনএ-কে মেরামত করে চলে৷
ছবি: Reuters/F.Sandberg
পল মড্রিচ
রসায়নে নোবেল ২০১৫৷ জন্ম ১৯৪৬ সালে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা রাজ্যের ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন-এ বায়োকেমিস্ট্রির অধ্যাপক৷ গবেষণা করে দেখান, দেহের কোষ কিভাবে বিভাজনের সময় ডিএনএ-র ভুলভ্রান্তি ঠিক করে নেয়৷
ছবি: Reuters/F.Sandberg
আজিজ সেঞ্চার
রসায়নে নোবেল ২০১৫৷ জন্ম ১৯৪৬ সালে তুরস্কে৷ নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োকেমিস্ট্রি ও বায়োফিজিক্স-এর অধ্যাপক৷ সাঞ্চার ‘নিউক্লিওটাইড এক্সিজন রিপেয়ার’ পদ্ধতি বর্ণনা করেন, যে পদ্ধতির মাধ্যমে কোষ তার ডিএনএ-তে অতিবেগুনি রশ্মি জনিত ক্ষতি সারিয়ে নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z.Akyil
স্ভেতলানা আলেক্সিয়েভিচ
বেলারুসের এই ৬৭ বছর বয়সি বিতর্কিত লেখিকা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন ২০১৫ সালে৷ টেপ রেকর্ড করা হাজার হাজার সাক্ষাৎকারকে সাহিত্যে পরিণত করে তিনি এক নতুন ধরনের রচনা সৃষ্টি করেছেন৷ লেখেন রুশ ভাষায়, বেলারুসে তাঁর বই বহুদিন নিষিদ্ধ ছিল৷ সর্বশেষ মন্তব্য: তিনি রাশিয়াকে ভালোবাসেন, কিন্তু ‘স্ট্যালিন এবং পুটিন’-এর রাশিয়াকে নয়৷
ছবি: Reuters
টিউনিশিয়ার ‘‘ন্যাশনাল ডায়ালগ কোয়ার্টেট’’
২০১৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হলো টিউনিশিয়ার ‘‘জাতীয় সংলাপ চতুষ্টয়’’, যারা ২০১১ সালের ‘‘জ্যাসমিন রেভোলিউশন’’-এর পর টিউনিশিয়ায় বহুদলীয় গণতন্ত্র স্থাপনে বিশেষ অবদান রেখেছে৷ তথাকথিত ‘‘আরব বসন্তের’’ সূচনা হয় টিউনিশিয়ায়৷
ছবি: C. Furlong/Getty Images
11 ছবি1 | 11
সংকলন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার কতটা যথাযথ? জানিয়ে দিন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷