1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গণতন্ত্রের পথে মিশর

মার্কুস সিমাংক / এসি৩০ এপ্রিল ২০১৩

হোসনি মুবারকের পতনের পর মিশরে এক নতুন যুগ শুরু হতে চলেছে বলে মনে হয়েছিল৷ কিন্তু সেই মিশর আজ দ্বিধাবিভক্ত, দিশাহারা৷ কোথাও যেন একটা বড় ভুল হয়ে গেছে৷

ছবি: Reuters

রাজনৈতিক সংঘাত, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা৷ মিশর থেকে কোনো ভালো খবর পাওয়া বিরল৷ গণতান্ত্রিক রূপান্তরও যেন থমকে রয়েছে৷ নীলনদের দেশে আজ সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার চিত্র৷ অথচ দু'বছর আগে হোসনি মুবারকের পতনের সময়ের সেই আশা ও প্রেরণার জোয়ারে অনেক মিশরীয়র মনে হয়েছিল, যেন নতুন এক যুগ শুরু হতে চলেছে, এমন এক নতুন দেশ, যেখানে মানুষের আরো বেশি স্বাধীনতা, আরো বেশি অধিকার থাকবে - আর থাকবে সকলের জন্য রুটি-রোজগার৷ আজ সেই আশা কুয়াশার মতোই অন্তর্হিত হয়েছে, বহু মানুষ সেই বিপ্লবকেই সব দুঃখ-দুর্দশার জন্য দায়ী করছেন৷

গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে যে দু'টি অন্তরায়ের নাম করা হয়, সেগুলি হল সামরিক বাহিনী এবং মুসলিম ব্রাদারহুড৷ বিপ্লব যে গোড়া থেকেই ভুল সিগন্যাল পেয়ে ভুল ট্র্যাকে চলে যায়, তার মূল কারণ হল এই দু'টি প্রতিষ্ঠান, বলে এমাদ গাদ'এর অভিমত৷ গাদ কায়রোর আল-আহরাম কেন্দ্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষক৷ আরব বসন্ত যেখানে শুরু হয়, সেই টিউনিশিয়ার মতো প্রথমে একটি সাংবিধানিক সম্মেলন আহ্বান না করে, মিশরে সামরিক বাহিনী ও ইসলামপন্থিরা যতো শীঘ্র সম্ভব সংসদীয় নির্বাচনের জন্য চাপ দেয়৷

রাজনৈতিক সংঘাত, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা৷ মিশর থেকে কোনো ভালো খবর পাওয়া বিরল৷ছবি: AP

২০১১ সালের মার্চে জনতা ঐ সামরিক বাহিনী ও ইসলামপন্থিদের ডাকে সাড়া দিয়ে গণভোটে অংশগ্রহণ করে, যার ফলে গণতন্ত্রের পথে মিশরের যাত্রা শুরু হয় কোনোরকম প্রস্তুতি বা নিয়মকানুন ছাড়াই৷ গাদ'এর সেটাই সমালোচনা: ঐ গণভোট মিশরীয় সমাজের বিভাজনকে আরো ত্বরান্বিত করেছে৷ একদিকে ইসলামপন্থি, অন্যদিকে ধর্মনিরপেক্ষ: সমাজের এই মেরুকরণ আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷

তুরুপের তাস

মুসলিম ব্রাদারহুডের ‘‘স্বাধীনতা ও ন্যায়'' দল ২০১১ সালের শেষে অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচনে প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পায়৷ তার ছ'মাস পরেই মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রার্থী মোহাম্মেদ মুরসি মিশরের প্রথম বেসামরিক রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন৷ মুসলিম ব্রাদারহুডের হাতে গোড়া থেকেই তুরুপের তাস ছিল - ধর্ম৷ গাদ'এর ভাষ্যে: ‘‘মিশরে ভোট পাবার সবচেয়ে সোজা পথ হল ধর্ম৷ জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ নিরক্ষর৷ তাদের অনেককেই সহজে প্রভাবিত করা সম্ভব৷''

ইসলামপন্থিরা নির্বাচনে তাদের জয়কে নিজেদের নীতি জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার খোলা অনুমতি বলে ধরে নিয়েছে৷ অপরদিকে বিরোধীরা সরকারের সঙ্গে সমানতালে নীতি নির্ধারণ করতে চায়, যেন ভোটের ফলাফলের কোনো তাৎপর্যই নেই৷ যা প্রমাণ করছে যে, দু'পক্ষেরই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই৷

রাজনৈতিক বিশ্লেষক এমাদ গাদের মতে, গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে প্রধান অন্তরায় সামরিক বাহিনী ও মুসলিম ব্রাদারহুডছবি: privat

দ্বিতীয়ত, নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের জয় যাবৎ গোটা বিতর্কটা চলেছে সংবিধানে, গণমাধ্যমে কিংবা সমাজে ধর্মের ভূমিকা নিয়ে৷ সেক্ষেত্রে যে সামাজিক ন্যায়ের দাবিতে বিপ্লব শুরু হয়েছিল, তা বিস্মৃত হয়েছে৷ দেশের জরুরি অর্থনৈতিক সমস্যাগুলিও উপেক্ষিত হচ্ছে৷ অন্যভাবে বলতে গেলে, বড় বড় নীতিগত বিতর্কগুলোর সাথে সাথে রাজনীতির বাকি সাদামাটা, দৈনন্দিন কর্তব্যগুলির দিকে নজর দেবার মতো সময় কারো নেই৷

‘‘ফেলুল''

অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাবার জন্য ইসলামপন্থিদের ‘‘ফেলুল''-রা আছে৷ এরা হল ক্ষমতাচ্যুত মুবারকের সমর্থক৷ তারাই নাকি গণতান্ত্রিক প্রগতির পথে নানা প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করছে৷ অথচ সাবেক প্রশাসনের জ্ঞাত বা অজ্ঞাত প্রতিনিধিরা যে আজ কতোটা সক্রিয় বা প্রভাবশালী, তা কারোরই জানা নেই৷ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাদ গাদ'এর মতে মুবারক প্রশাসনের আসল উত্তরাধিকার হল দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ - ও সেই সঙ্গে পুলিশি নিপীড়ন৷ অপরদিকে অর্থনীতি, বিচার বিভাগ কিংবা নিরাপত্তা বিভাগে মুবারক সমর্থকরা রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে রয়েছে৷ সাধারণ মানুষদের মধ্যেও সহানুভূতির অভাব নেই: মুবারকের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমেদ শাফিক গতবছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্যায়ে মুরসি'র বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪৮ শতাংশ ভোট পান৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ