গোপালগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা পেয়েছিলেন দুই লাখ ২৯ হাজার ৫৩৯ ভোট৷ সেখানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি’র এসএম জিলানী পেয়েছিলেন মাত্র ১২৩ ভোট৷ গত নির্বাচনে কোনো আসনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পাওয়া এটাই সবচেয়ে কম ভোট৷

সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম করোনায় মারা যান৷ এই আসনে উপ-নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয়৷ শাকিল এক লাখ ৮৮ হাজার ৩২৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন৷ তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সেলিম রেজা পেয়েছেন ৪৬৮ ভোট৷

সংগীতশিল্পী কনকচাঁপা কম ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে আছেন তিন নম্বরে৷ সিরাজগঞ্জ-১ আসনে উপ নির্বাচন না হলে তিনি দুই নম্বরেই থাকতেন৷ একই আসনে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নাসিম পেয়েছিলেন তিন লাখ ২৪ হাজার ৪২৪ ভোট৷ তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা পেয়েছিলেন ১,১১৮ ভোট৷

বরিশাল-১ আসনে আওয়ামী লীগের আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ দুই লাখ ৫ হাজার ৫০২ ভোট পেয়েছিলেন৷ ধানের শীষের জহিরউদ্দিন স্বপন পেয়েছিলেন ১,৩০৫ ভোট৷

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে আওয়ামী লীগের এবি তাজুল ইসলাম দুই লাখ ৭৮ ভোট পেয়েছিলেন৷ নিকটতম বিএনপি মনোনীত ঐক্যজোট প্রার্থী ধানের শীষের আব্দুল খালেক পেয়েছিলেন ১,৩২৯ ভোট৷

শরীয়তপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের এ কে এম এনামুল হক শামীম পেয়েছিলেন দুই লাখ ৭৩ হাজার ১৭১ ভোট৷ বিএনপির মো. সফিকুর রহমান কিরণ পেয়েছিলেন ২,১১৩ ভোট৷ 

চট্টগ্রাম-৬ আসনে আওয়ামী লীগের এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী পেয়েছিলেন দুই লাখ ৩০ হাজার ৪৭১ ভোট৷ নিকটতম বিএনপির জসিম উদ্দিন সিকদার পেয়েছিলেন ২,২৪৪ ভোট৷

মাদারীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের শাজাহান খান পেয়েছিলেন তিন লাখ ১১ হাজার ৭৪০ ভোট৷  নিকটতম বিএনপি প্রার্থী মিল্টন বৈদ্য পেয়েছিলেন মাত্র ২,৫৮৮ ভোট৷ 

শরীয়তপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের নাহিম রাজ্জাক ২ লাখ ৭ হাজার ২২৯ ভোট৷ নিকটতম বিএনপির হানিফ মিয়া পেয়েছিলেন ২,৭৩৫ ভোট৷ 

মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের আব্দুস সোবাহান গোলাপ দুই লাখ ৫২ হাজার ৬৪১ ভোট পেয়েছিলেন৷ বিএনপি প্রার্থী আনিসুর রহমান খোকন তালুকদার পেয়েছিলেন মাত্র ৩,২৯৬ ভোট৷

চট্টগ্রাম-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মাহফুজুর রহমান মিতা এক লাখ ৬২ হাজার ৩৫৬ ভোট পেয়েছিলেন৷ নিকটতম বিএনপির মোস্তফা কামাল পাশা ৩,১২২ ভোট পান৷

কোনো জায়গায় কাউকে আনন্দ মিছিল না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ দেশের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ‘‘এখন আনন্দ মিছিল করার সময় নয়, দেশ গঠনের সময়৷’’

কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন৷ রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিও জানান তিনি৷

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মনে করেন, নির্বাচনে জনগণের ‘স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও গণজোয়ার’ প্রমাণ করেছে জনগণ প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ‘খুবই খুশি’ হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘সকাল থেকে সারা দেশে নারী, পুরুষ এবং তরুণ ভোটাররা ব্যাপকভাবে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়েছেন৷’’

নির্বাচনের নামে ‘নিষ্ঠুর প্রহসন’ করা হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে পাঁচ বছর আগের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিকই ছিল৷’’

বিভিন্ন কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্ট নেই কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা করলেন পালটা প্রশ্ন৷ তিনি বলেছেন, ‘‘ধানের শীষের এজেন্টরা কেন্দ্রে না আসলে কী করার? তাঁরা কেন্দ্রে কেন আসেননি বা কেন কোনো এজেন্ট নেই, সেটা প্রার্থীর নির্ধারিত এজেন্টরাই বলতে পারবেন৷’’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়েও বিএনপির নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য কর্মীদের অনাস্থাকে দায়ী করছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু৷ ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছেন, ‘‘দলটি এখন মুসলিম লীগের পরিণতির দিকে এগোচ্ছে৷’’

সকালে নির্বাচন শুরু হওয়ার সময়ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রত্যাশা ছিল বলে মন্তব্য বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের৷ তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনের নামে এই অর্থহীন তামাশার কোনো প্রয়োজন ছিল না৷ রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে একটা গেজেট জারি করে নিলেই হতো যে, নৌকা ২৯৯ আসন পেয়ে গেছে৷’’

আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক মনে করেন, বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্টকে প্রত্যাখ্যান করেছে জনগণ৷ তিনি বলেন, ‘‘জনগণের রায় প্রত্যাখ্যান করার অধিকার কারও নেই৷’’

রোববারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার তার প্রতিশ্রুতি রেখেছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী৷ ভোটগ্রহণ শেষে ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকায় বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তিনি৷

সারা দেশে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ৷ কমিশনের ফলাফল পরিবেশন কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা উদ্বোধন করে তিনি বলেন, ‘ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে’ নির্বাচন হয়েছে৷

বগুড়ার এক হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম৷ সিংহ প্রতীকে নির্বাচনে থাকা এ প্রার্থীর অভিযোগ, বিভিন্ন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের লোকজন ভোটারদের, এজেন্টদের বের করে দিয়েছে, নন্দীগ্রামে তাঁর ওপর হামলা হয়েছে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও তাঁকে কোনো সহায়তা করেনি৷