অগণতান্ত্রিক অ্যাজেন্ডার প্রতি সমর্থন আদায় করতে প্রচার চালানো কি গণতান্ত্রিক অধিকারের মধ্যে পড়া উচিত? তুরস্কের আসন্ন গণভোটের প্রচারের প্রেক্ষাপটে এই প্রশ্নটি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে জার্মানিতে৷
বিজ্ঞাপন
গোটা ঘটনাটির সূত্রপাত তুরস্কের আসন্ন গণভোটকে কেন্দ্র করে৷ সে দেশের প্রেসিডেন্ট পদের হাতে বিপুল ক্ষমতা তুলে দিতে সংবিধান পরিবর্তন করতে চান বর্তমান পদাধিকারী রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান৷ তবে শুধু সরকার ও সংসদের অনুমোদন নিয়ে সন্তুষ্ট নন তিনি, এক গণভোটের মাধ্যমে মানুষেরও সমর্থন আদায় করে বিষয়টি পাকাপোক্ত করতে চান৷ এই গণভোটের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত মানসম্মান জড়িয়ে রয়েছে৷ তাই ভোটারদের মন জয়ে প্রচারে কোনো ত্রুটি রাখতে চাইছেন না তিনি৷ জার্মানিতে তুর্কি ভোটারদের সমর্থন আদায় করতে তিনি তাঁর মন্ত্রীদের প্রচারে পাঠাতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু জার্মানির একের পর এক পৌর কর্তৃপক্ষ নির্বাচনি প্রচারের জনসভা বাতিল করে দেওয়ায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ এর্দোয়ান৷ জার্মানির বিরুদ্ধে অত্যন্ত আপত্তিকর মন্তব্য করে রোষ প্রকাশ করছেন তিনি৷ তাঁর সমালোচকদের বক্তব্য, পশ্চিমা বিশ্বে মত প্রকাশের অধিকার কাজে লাগিয়ে নিজের অগণতান্ত্রিক ক্ষমতা আরও জোরদার করতে চাইছেন এর্দোয়ান৷
এই প্রেক্ষাপটে জার্মানি তথা ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশগুলিতে বিদেশি মন্ত্রীদের নির্বাচনি জনসভা কতটা গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে৷ জার্মানিতে কিছু শহরের মেয়র মনে করছেন, এ ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের স্বার্থে তুর্কি মন্ত্রীদের নির্বাচনি জনসভায় বাধা দেওয়া উচিত নয়৷ তাঁদের বক্তব্য আপত্তিকর হলেও তাঁদের মত প্রকাশের অধিকারের মর্যাদা দেওয়া উচিত৷ জার্মানির পৌর সংগঠনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, জার্মানিতে গণতন্ত্র যথেষ্ট শক্তিশালী এবং সহনশীল৷
জার্মানির সবুজ দলের নেতা চেম ও্যজদেমির গণতান্ত্রিক অধিকারের নিরিখে জার্মানি ও তুরস্কের তুলনা করেছেন৷ তাঁর প্রশ্ন, জার্মানিতে চলতি বছর সংসদ নির্বাচনের প্রচারের স্বার্থে তিনি ইস্তানবুলে জনসভা করতে পারবেন কি? সেখানে কি সাংবাদিকরা বিনা বাধায় তাঁদের কাজ করতে পারবেন?
এসবি/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ)
যেভাবে এর্দোয়ানের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে তুরস্কের মানুষ
ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের রাতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান তাঁর সমর্থকদের রাস্তায় নামতে অনুরোধ করেছিলেন৷ আর তখন থেকেই রাস্তা দখলে রেখেছে তাঁর সমর্থকরা৷ আংকারা থেকে জানাচ্ছেন ডিয়েগো কুপোলো৷
ছবি: DW/D. Cupolo
‘এর্দোয়ান আমাদের কমান্ডার’
তারা প্রতিরাতে গাড়ি চালিয়ে আংকারার ‘ডেমোক্রেসি ওয়াচ’ ব়্যালিতে হাজির হন৷ ব়্যালিতে অনেকের মতো হাজির ছিলেন ২১ বছর বয়সি জয়নিপ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এর্দোয়ান যতদিন চাইবেন ততদিন আমি তাঁর প্রতি সমর্থন জানানো অব্যাহত রাখবো৷ তিনি আমাদের ‘কমান্ডার ইন চিফ’৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
অটল, তবে সহজ সমর্থন নয়
‘‘যদি দরকার হয় তাহলে কাজ থেকে ছুটি নিয়ে হলেও ব়্যালিতে থাকবো’’, বলেন ৩১ বছর বয়সি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাদিত৷ তুরস্কের মতো একটি উদ্বায়ী রাষ্ট্র শুধু এর্দোয়ানের পক্ষেই চালানো সম্ভব, মনে করেন তিনি৷
ছবি: DW/D. Cupolo
স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি ঘটানোয় এর্দোয়ানের প্রশংসা
যখন জানতে চাওয়া হয় কেন তিনি এর্দোয়ানের সমর্থক, তখন ২১ বছর বয়সি পাবলিক ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থী কামেল কায়া জানান, এর্দোয়ানের একেপি পার্টি তুরস্কের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিষেবার উন্নয়ন ঘটিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘(এর্দোয়ান) ক্ষমতায় আসার আগে হাসপাতালগুলোর খুব করুণ দশা ছিল৷ তিনি সেগুলোর সংস্কার এবং সামগ্রিক অবস্থা ভালো করেছেন৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
‘রাজনৈতিক ইসলামের’ জন্য চাপ
২২ বছর বয়সি ইসমাইল জানান, তিনি এর্দোয়ানকে সমর্থন দিচ্ছেন কেননা তিনি তুরস্কের সরকারকে দেশটির সমাজের ইসলামিক শেকড়ের কাছাকাছি নিয়ে গেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে কোনো সংবিধান চাই না, তবে আমরা এমন একটি চাই যেখানে ইসলামের জন্য আরো জায়গা থাকবে৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
এর্দোয়ানের সমর্থকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা
ব়্যালিতে আগতদের বিনামূল্যে খাবার, পানি এবং পরিবহন সেবা দেয়া হয়, জানান তুরস্কের কুর্দিপন্থি এইচডিপি পার্টির চেয়ার সেলাহাতিন দিমিত্রাস৷ তিনি বলেন, ‘‘অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া এর্দোয়ানের সমর্থকদের পানি এবং খাবর দিয়ে স্বাগত জানানো হয়৷ আর দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সেনাবাহিনীর দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আমার লোকেরা প্রতিবাদ করে তখন তাদের দিকে জলকামান ছোড়া হয়৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
এর্দোয়ানের চোখে রাষ্ট্রের শত্রু গুলেন
ফেতুল্লাহ গুলেনের একটি প্রতিকৃতি এভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ব়্যালিতে৷ সেটির বুকের উপরে লেখা: ‘‘ফেতু: তোমার অপরাধ রাষ্ট্রদ্রোহিতা৷’’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনে থাকা তুরস্কের ধর্মীয় নেতা গুলেনের বিরুদ্ধে এর্দোয়ানকে হঠাতে সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে৷ প্রতিক্রিয়ায় গুলেনের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে এর্দোয়ান৷
ছবি: DW/D. Cupolo
গ্রেপ্তার চলছেই
তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর এখনও পর্যন্ত ৬০ হাজার মানুষকে আটক, গ্রেপ্তার অথবা চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে৷ এখানকার মানুষ বিশ্বাস করে যে, তারা ন্যয়বিচার পাবে৷ এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনাকে অগ্রাহ্য করে ৩৪ বছর বয়সি শাহিন বলেন, ‘‘ইউরোপ আমাদের সমাজ নিয়ে শঙ্কিত৷ কেননা তারা জানে, আমরা শীঘ্রই বিশ্ব শক্তিতে পরিণত হবে৷ আর এ জন্যই তারা আমাদের সমালোচনা করে৷’’