অনেক সংগ্রামের পর তোকে বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলাম৷ কয়েকটা বছর আমাদের সঙ্গে ভালোই ছিলি৷ কিন্তু তারপর একসময় তোকে আর পছন্দ হচ্ছিল না আওয়ামী লীগ নামে আমাদেরই এক বন্ধুর৷
বিজ্ঞাপন
তাই তো কীভাবে তোর ক্ষতি করা যায় সেই চেষ্টাই চলেছে গত কয়েক বছর ধরে৷ তোর বিভিন্ন অঙ্গে একের পর এক আঘাত করা হয়েছে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, স্বাধীন হয়ে কাজ করার কথা যে নির্বাচন কমিশনের তার উপরও নজর পড়েছিল আমাদের তথাকথিত ঐ বন্ধুর৷ আর যে অঙ্গের মাধ্যমে তুই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতিস, সেই গণমাধ্যমের দখলও একসময় নিয়ে নেয় আওয়ামী লীগ৷
একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ভোটাররা যা বললেন
বাংলাদেশে শেষ হলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ৷ কেমন ছিল নির্বাচন? দেখা যাক সাধারণ ভোটাররা কী বলেন...
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/A. Nath
আলী হোসেন
সত্তরোর্ধ আলী হোসেন জীবনে অনেক ভোট দেখেছেন, কিন্তু এবারের মতো ভোটের পরিবেশ জীবনে আর দেখেননি৷ জোর করে তাঁর ব্যালটে সিল মেরেছেন বুথের ভেতরে আগে থেকে অবস্থান করা অন্য একজন৷ শেষ বয়সে এসে হেনস্তা হওয়ার ভয়ে কিছুই বলতে পারেননি৷
ছবি: DW
এলিম মিয়া
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এলিম মিয়ার কেন্দ্রে ভোট হয়েছে ইভিএম পদ্ধতিতে৷ তিনি ৩০ জানুয়ারি সকালেই ভোট দিতে পেরেছেন৷ সকাল থেকেই কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষমান দেখেছেন তিনি৷ ভোটের পরিবেশও তাঁর কাছে সুষ্ঠু মনে হয়েছে৷
ছবি: DW
জুনায়েদ অমি
জীবনের প্রথম ভোটটি দিতে পেরে খুবই আনন্দিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী৷ ভোটের পরিবেশ বেশ ভালো বলে মনে হয়েছে তাঁর৷ তবে ভোট কেন্দ্রের আশপাশে ছাত্রলীগের কর্মীদের লাঠি হাতে উপস্থিতি এবং পুলিশের একপেশে ভূমিকা তাঁর ভালো লাগেনি৷
ছবি: DW
লামিয়া তাসনিম
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লামিয়া তাসনিম এবারই প্রথম ভোট দিলেন৷ বিষয়টি নিয়ে খুব উত্তেজিত ছিলেন৷ তবে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকার পরও নিজের ভোটকেন্দ্র খুঁজে বের করতে তাঁর দুপুর পর্যন্ত সময় লেগেছে৷ কেন্দ্রে গিয়ে দেখেন ফটক বন্ধ৷ জানানো হয়, মধ্যাহ্ণবিরতি চলছে৷ কিন্তু ভোটের সময় তো কেন্দ্রে কোনো বিরতি থাকার কথা নয়৷ তাই অনেক বিতণ্ডা করে শেষ পর্যন্ত ভেতরে ঢুকে নিজের ভোটটি দিতে পেরেছেন৷
ছবি: DW
মোহাম্মদ মামুন
খুব সকাল সকালই ভোট দিতে পেরেছেন তরুণ ভোটার মোহাম্মদ মামুন৷ ভোটের পরিবেশ নিয়েও তিনি বেশ সন্তুষ্ট৷
ছবি: DW
নূরুল্লাহ
বেসরকারি চাকরিজীবী নুরুল্লাহের দাবি, ঢাকার একটি কেন্দ্রে তিনি ভোট দিতে গিয়েছিলেন দুপুর ১২টার দিকে৷ গিয়ে দেখেন তাঁর ভোট এর আগেই দেয়া হয়ে গেছে৷ ফলে ভোট তো দিতে পারেনইনি, উলটে ভোটকেন্দ্রের এজেন্টরা তাঁর সঙ্গে নাকি দুর্ব্যবহার করেছেন৷ ভোট না দিয়েই তাই ফিরে এসেছেন তিনি৷
ছবি: DW
মো. শাহ জালাল
পিরোজপুরের ভোটার মোহাম্মদ শাহ জালাল দশম জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন নৌকা মার্কায়৷ এবারও ভোট দিতে গিয়েছিলেন, তবে ব্যালটে নিজে সিল মারতে পারেননি৷ জানালেন, নৌকা মার্কার এজেন্টই তাঁর হাত থেকে সিল নিয়ে নৌকা মার্কার ওপরে মেরে দিয়েছেন৷
ছবি: DW
সিরাজুল ইসলাম
সিরাজুল ইসলাম এলাকায় বিএনপির সমর্থক হিসেবে পরিচিত৷ তাই আগে থেকেই নাকি তাঁকে ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল৷ তাঁর দাবি, ভয়ে আর তিনি ভোট দিতে যাননি৷
ফলে নির্বাচনের বছর হওয়ায় ২০১৮ সালের শুরুতে আমরা যে আশা করেছিলাম, তোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা আবারও মজবুত হবে, তা আর হলো না৷ বরং তোকে চলেই যেতে হলো৷
অবশ্য এর জন্য শুধু এক বন্ধুর ঘাড়ে পুরো দোষ চাপিয়ে লাভ নেই৷ আমরা, মানে জনগণ, আর আমাদের আরেক বন্ধু বিএনপিও এর জন্য অনেকখানি দায়ী৷ কারণ, আওয়ামী লীগ যখন তোকে একের পর এক আঘাত করছিল, তখন আমরা আর বিএনপি, দুজনই চুপ করে ছিলাম৷ অথচ আমরা যদি তখন শক্ত প্রতিবাদ করতে পারতাম, তাহলে হয়ত আজ তোকে হারাতে হতো না৷
যাক, নতুন বছর এসেছে৷ এই বছরে আমরা আবার তোকে ফিরে পেতে চাই৷ আওয়ামী লীগ যদি সেটা হতে দিতে না চায়, তাহলে আমাদের আর বিএনপিকে চেষ্টা করে যেতে হবে৷ আওয়ামী লীগকে বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে যে, বন্ধু হিসেবে আমাদের তোকে দরকার আছে৷ বিশ্বের দরবারে দেশের ‘স্ট্যাটাস' বাড়াতে তোকে প্রয়োজন৷
তবে আওয়ামী লীগ হয়ত তাদের কথাকেই গুরুত্ব দেবে, যারা শক্তিশালী৷ বিএনপি এখন সেই অবস্থায় নেই৷ ফলে বিএনপির প্রথম কাজ হবে, তার শরীরটা ঠিক করা৷ শুরু হতে হবে মাথা থেকে৷ মস্তিষ্ককে সচল হতে হবে, অলস হলে চলবে না, ভয় পেলে হবে না৷ মাথাকে বুঝতে হবে, শরীরের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো তার কাছ থেকে সংকেত না পেলে, সাহস না পেলে নড়তে-চড়তে পারবে না৷
দেখা যাক, নতুন বছরে তোকে ফিরিয়ে আনতে আমরা কী করতে পারি৷ আমাদের জন্য দোয়া করিস৷
প্রিয় পাঠক, জাহিদুল হকের এই লেখাটি নিয়ে আপনার কি কিছু বলার আছে? তাহলে লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷