গণতন্ত্র নেই সরকার নির্যাতক বলে বিরোধী দল দুর্বল
১৩ এপ্রিল ২০২২অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল নেই-এই কথা মানতে রাজি নয়। আর আবার কেউ বলছেন সরকার শক্তিশালী হলে বিরোধী দলও শক্তিশালী হয়।
শেখ হাসিনা ১১ এপ্রিল তার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মত বিনিময়ের সময় বলেন,"আমরা শক্তিশালী বিরোধী দল পাচ্ছি না। অপজিশন বলতে দুটি পার্টি আছে। দুটিই মিলিটারি ডিকটেটরদের হাতে গড়া। জনগণের কাছে তাদের অবস্থান নেই।”
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রধানমন্ত্রীর এই কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি বলেন,"আমাদের দলটি নিশ্চিতভাবেই জনবিচ্ছিন্ন দল নয়। আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যখন পদত্যাগ করেন তখন লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করে নির্বাচন দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। জনগণই তাকে কারাগার থেকে ছাড়িয়ে আনে। তিনি জেলখানা থেকে দুই দুই বার পাঁচটি আসনে নির্বাচিত হয়েছেন। আমরা জনবিচ্ছিন্ন দল নই। আমরাই আওয়ামী লীগকে অনেক সময় সহযোগিতা করেছি। তারা আমাদের সহায়তা নিয়েছে।”
তিনি দাবি করেন,"মিলিটারি ডিকটেটর বা কীভাবে দলটি এলো সেটা বিষয় নয়। জনগণ চায় সুশাসন। আমাদের দল দেশে সুশাসন দিয়েছে। আর সে কারণেই আমাদের দল এখনো টিকে আছে। মিলিটারি ডিকটেটর হলেই খারাপ এটা ঠিক না। এরশাদ সংবিধানের মধ্যে থেকেই সব কিছু করেছেন। তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করেননি।
দেশের শাসন ব্যবস্থাই এখন স্বৈরতান্ত্রিক। এজন্য বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ দুই দলই দায়ী। ১৯৯১ সালের পর সংবিধান পরিবর্তন করে এমন করা হয়েছেন যে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা সংবিধানের মধ্যেই ঢুকানো হয়েছে। ফলে সরকার প্রধান জবাবদিহি এবং আইনে ঊর্ধ্বে থাকেন।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,"দেশে এখন বিরোধী দল আন্দোলন গড়ে তুলতে কেন পারছে না তা দেশের মানুষ জানে। সারা বিশ্বের মানুষ জানে।”
একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিলেই বোঝা যাবে কারা জনবিচ্ছিন্ন। তাদের যদি জনসমর্থন থাকে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে এত ভয় পায় কেন? এই প্রশ্ন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তার কথা,"একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিলে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কার কতটুকু জনপ্রিয়তা আছে জেনেই তো খুন করা হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ৩৫ লাখ লোকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে।”
তিনি জাতীয় পার্টিকে কোনো রাজনৈতিক দল মনে না করলেও মিলিটারি ডিকটেটরশিপ প্রশ্নে বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাইলে বলেন," মিলিটারি ডিকটেটরশিপ? জিয়াউর রহমান সাহেবই তো বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন। তারা এক দলীয় শাসন কায়েম করেছিলো।”
তিনি দাবি করেন,"আওয়ামী লীগের আমলেই দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো। সেখান থেকে উদ্ধার করতে বিএনপির চার বছর লেগেছে। আর জঙ্গিবাদের দোহাই দিয়ে তারা বহুদিন চলেছে। এগুলো এখন আর চলবে না।”
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকির বিশ্লেষণ আলাদা। তিনি দাবি করেন,"দেশে একটি নির্যাতনকারী ফ্যাসিবাদী সরকার আছে। কিন্তু কোনো গণতান্ত্রিক শক্তিশালী সরকার নাই। বর্তমান সরকার বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রশক্তিকে পকেটে ঢুকিয়ে দমন-পীড়ন নির্ভর সরকার। এরকম একটি বাস্তবতায় রাজনৈতিক প্রক্রিয়াটিই প্রান্তিক হয়ে পড়ে। নানা ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এই প্রতিকূল পরিবেশে বিরোধী দলগুলো রাজনৈতিক প্রস্তাব নিয়ে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় নিয়ে যাবে তা বাধাগ্রস্ত হয়।”
তার কথা,"দেশে নির্বাচনকে নির্বাসনে দেয়া হয়েছে, গণতান্ত্রিক পরিবেশ নাই। রাজনৈতিক প্রক্রিয়া প্রান্তিক জায়গায়। ফলে যারা গণতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করতে চাইবে তাদের জন্য প্রতিকূল অবস্থা চলছে।”
আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শান্তনূ মজুমদার মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী যে মিলিটারি ডিকটেটর বা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলদারদের কথা বলেছেন সেটা ঠিকই বলেছেন। তবে তারা জনবিচ্ছিন্ন কী না সেটা তিনি জানেন না। তার কথা,"শক্তিশালী বিরোধী দল কেন নেই সেটা যদি মূলধারার দল বিএনপির কথা বলি তাহলে তাদের নেতৃত্বের শূণ্যতা, দিক নির্দেশনার অভাব এবং দলের মধ্যে অনেকগুলো ধারা। বিএনপি ভালো না খারাপ সেটা আমি বিবেচনা করছি না। আর জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধাপরাধীদের দল হিসেবে চিহ্নিত হওয়া এবং জঙ্গিবিরোধী প্রচণ্ড তৎপরতার কারণে তারা আপাতত নাক উঁচিয়ে টিকে থাকার নীতি গ্রহণ করেছে। এরশাদ ভালো লোক না খারাপ লোক সেই বিবেচনায় না গিয়ে বলা যায় জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ নির্ভর একটি দল। তাদের মধ্যে বিরোধী দলের চরিত্র এখন অনুপস্থিত। বিএনপির কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নাই।”
তিনি মনে করেন," বাংলাদেশে এখনো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দাঁড়ায়নি। তাই এখানে রাজনৈতিক দল ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সংকট আছে। তার প্রভাব বিরোধী রাজনীতি এবং সরকার দলীয় রাজনীতিতে দেখা যাচ্ছে।”