1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গণপ্রহারের নেপথ্যে গভীর মনের অসুখ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৭ জুলাই ২০১৯

ফের গণপিটুনির ঘটনায় বাড়বাড়ন্ত৷ সন্দেহের বশে নিরপরাধ মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে উন্মত্ত জনতা৷ ভারত ও বাংলাদেশে সম্প্রতি এ ধরনের ঘটনা বাড়তে থাকায় আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ৷ কঠোর আইন করে সমস্যা মিটবে, না কি সারাতে হবে মনের অসুখ?

Indien Kalkutta Wahlkampf Zusammenstöße Diverser Anhänger
ছবি: Getty Images/AFP

ছেলেধরা অথবা চোর, কোনো মানুষকে বাইরে থেকে দেখে তার সম্পর্কে এতটা অনুমান নিশ্চয়ই করা যায় না৷ সন্দেহ জাগতে পারে, তাকে পাকড়াও করে প্রশ্ন করা যেতে পারে৷ একটি এলাকায় কী উদ্দেশ্যে সেই ব্যক্তি এসেছে, তা জানতে চাইতে পারে স্থানীয় বাসিন্দারা৷ জবাবে সন্তুষ্ট না হলে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া যায়৷ কিন্তু, স্রেফ সন্দেহের বশে একটি মানুষকে তারই মতো একদল মানুষ পিটিয়ে  মেরে ফেলছে৷ বাঁশ-লাঠি-রড দিয়ে মারধর করছে, তা তিনি মহিলা হোন বা প্রৌঢ়৷ মৃত্যু নিশ্চিত করতে পাথরের ঘায়ে থেঁতলে দেওয়া হচ্ছে মাথা৷

গণপ্রহারের শিকার ঢাকার তসলিমা বেগমের সঙ্গে তাই কোনো ফারাক নেই উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ির নিহত যুবকের৷ পেশায় বহুরূপী এই যুবক নাগরাকাটার সুখানি বস্তি এলাকায় গিয়েছিলেন ভিখারি সেজে৷ নানা ছদ্মবেশ ধরাই তাঁর পেশা৷ তাঁকে দেখে এলাকার মানুষের ছেলেধরা বলে সন্দেহ হয়৷ তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেন, ছেলে চুরি তাঁর উদ্দেশ্য নয়৷ তিনি বহুরূপী, সাজগোজ করে ভিক্ষে চাওয়া তাঁদের বংশানুক্রমিক পেশা৷ কিন্তু, উন্মত্ত জনতা অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের কথায় বিশ্বাস করেনি৷ তাঁকে পিটিয়ে, থেঁতলে খুন করেছে পুলিশের সামনেই৷ যদিও এই এলাকায় তিনি আগেও বহুরূপী সেজে এসেছেন৷ স্থানীয় কয়েকজন তাঁকে চিনতে পেরে আগ্রাসী মানুষদের বাধা দেন৷ কিন্তু, লাভ হয়নি৷ জনতাকে বাধা দিতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশও৷ একই ভাবে তসলিমাও তোছেলেধরা ছিলেন না, তবু তাঁকে প্রাণ দিতে হয়েছে অমানুষদের প্রহারে৷

সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের ঘটনা সামনে এসেছে৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ধর্মীয় বিভেদমূলক৷ নিশানা করা হচ্ছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের৷ ঝাড়খণ্ডে এক যুবককে গরু পাচারকারী সন্দেহে মারধর করা হয়েছে৷ তবে ধর্মের যোগ নেই, এমন ঘটনা ঘটছে নিয়মিত৷ অনেক ক্ষেত্রে গুরুতর আহত হচ্ছেন আক্রান্ত ব্যক্তি৷ চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ৷ অনেকে বেঁচে থাকলেও চিরকাল শারীরিক সমস্যা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন৷

গ্লানি দূর করতে মানুষ অন্যের উপর আক্রোশ প্রকাশ করে: সমীরচন্দ্র দাস

This browser does not support the audio element.

একটি অসহায় মানুষকে দল বেধে প্রহার করার মানসিকতার মধ্যে অসুস্থতা আছে, তা বোঝাই যায়৷ মনস্তত্ত্ববিদরা কি বলছেন? কলকাতার বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সমীরচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘কোনো একটা মানসিক অবস্থা দিয়ে গণপ্রহারের ব্যাখ্যা দেওয়া যাবে না৷ একাধিক কারণ রয়েছে এর পিছনে৷ তাঁর মতে, মানুষের মধ্যে ধ্বংসাত্মক প্রবণতা নিহিত থাকে৷ থাকে হিংসাত্মক চরিত্রও৷ মানুষ যখন অবসাদ থেকে বেরোনোর পথ খোঁজে, তখন হিংসার আশ্রয় নেয়৷'' অর্থাৎ, নিজের গ্লানি দূর করতে অন্যের উপর আক্রোশ প্রকাশ করে৷

চলতি সপ্তাহে ভারতের ৪৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে লেখা চিঠিতে ধর্মপরিচয়ের জন্য উৎপীড়নের পাশাপাশি গণপিটুনি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ শ্যাম বেনেগাল, আদুর গোপালকৃষ্ণন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষ, অপর্ণা সেন, মণিরত্নম প্রমুখরা চিঠিতে লিখেছেন, মুসলিম, দলিত ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে গণপিটুনির ঘটনা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার৷ প্রধানমন্ত্রীকে তাঁদের প্রস্তাব, ‘আপনি সংসদে গণপিটুনিকে বিরোধিতা করেছেন ঠিকই৷ তবে সেটা যথেষ্ট নয়৷ এ ধরনের অপরাধকে জামিন-অযোগ্য করা উচিত৷'

বহু ক্ষেত্রে জনতা পুলিশ-প্রশাসনের উপর অনাস্থা থেকে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে অসহিষ্ণু মানুষ৷ তাই গণপ্রহার বন্ধে আইন কঠোর করা দরকার, এই ভাবনাকে অনেকে সমর্থন করছেন৷ কিন্তু, মানুষের মনের অসুখ সারবে কিভাবে? চিকিৎসক সমীরচন্দ্র দাসের বক্তব্য, ‘‘এক্ষেত্রে আত্মসংযম ও পরিচালনা বিশেষ জরুরি৷ যাঁরা নিজেদের আবেগ সফল ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তাঁদের মধ্যে হিংসার প্রকাশ কম দেখা যায়৷ ছোটবেলায় কে কেমন শিক্ষা পেয়েছে, তার উপর এটা অনেকটাই নির্ভর করে৷ জীবনে হতাশা দূর করা না গেলে হিংসা রোখা সম্ভব নয়৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ