এপ্রিলের ১৬ তারিখ তুরস্কে গণভোট হবে৷ সংবিধান পরিবর্তন করে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়ানো উচিত কিনা, তা জানতে চাওয়া হবে৷ এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় শনিবার জনপ্রিয় এক সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ঐ সাংবাদিকের নাম ইরফান ডেগিরমেনসি৷ তিনি ‘কানাল ডি' টেলিভিশনের একজন জনপ্রিয় উপস্থাপক ছিলেন৷ টুইটারে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ১৭ লক্ষ৷ শুক্রবার বেশ কয়েকটি টুইট করে তিনি গণভোটে ‘না' ভোটের পক্ষে তাঁর সমর্থন জানান৷ একটি টুইটে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘তাঁর প্রতি ‘না', যিনি বিজ্ঞানী, শিল্পী, লেখক, কার্টুনিস্ট, শিক্ষার্থী, শ্রমিক, কৃষক, খনিশ্রমিক, সাংবাদিকসহ যাঁরা তাঁর আদেশ না মানেন, তাঁদের শত্রু ভাবেন৷''
এই টুইটের একদিন পরই ডেগিরমেনসিকে চাকরি থেকে অব্যহতি দেয়া হয়৷ এক বিবৃতিতে কানাল ডি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাঁকে চাকরিচ্যুত করার কারণ তিনি ‘যে বিষয় নিয়ে জনগণ বিতর্ক করছে, সেই বিষয়ে একটি পক্ষের প্রতি সমর্থন জানিয়ে' নীতি ভঙ্গ করেছেন৷ অনেক সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে হাস্যকর বলে মনে করছেন, কারণ, ফাতিহ সেকিরগে নামের এক সাংবাদিক প্রেসিডেন্ট ব্যবস্থার পক্ষে তাঁর সমর্থন জানালেও তিনি বহাল তবিয়তেই আছেন৷
উল্লেখ্য, গণভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ব্যবস্থা চালু হলে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যেপ এর্দোয়ানের ক্ষমতা অনেক বাড়বে৷ ফলে মন্ত্রীদের চাকরিচ্যুত করা, সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা, ডিক্রি জারি, জরুরি অবস্থা ঘোষণাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে ব্যক্তি নিয়োগের ক্ষমতা পাবেন তিনি৷
বাকস্বাধীনতা যেখানে যেমন
আপনার দেশে বাকস্বাধীনতা পরিস্থিতি কেমন? ডয়চে ভেলের দুই সাংবাদিক এই প্রশ্ন করেছিলেন সদ্য সমাপ্ত গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে আগত বিভিন্ন দেশের ব্লগার, সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্টদের৷
ছবি: DW/A. S. Brändlin
শাম্মী হক, অ্যাক্টিভিস্ট, বাংলাদেশ
‘‘বাংলাদেশের মানুষ তাদের মনের কথা বলতে পারেন না৷ সেখানে কোনো বাকস্বাধীনতা নেই এবং প্রতিদিন পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে৷ একজন সামাজিক অ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্লগার হিসেবে আমি ধর্ম নিয়ে লেখালেখি করি, যা ইসলামিস্টরা পছন্দ করেনা৷ তারা ইতোমধ্যে ছয় ব্লগারকে হত্যা করেছে৷ ফলে আমি দেশ ছাড়তে বাধ্য হই৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ভেনেজুয়েলা
‘‘বাকস্বাধীনতা হচ্ছে এমন এক ধারণা যার অস্তিত্ব আমার দেশে নেই৷ সাংবাদিকরা জরিমানা আর নিজের জীবনের উপর ঝুঁকি এড়াতে সরকারের সমালোচনা করতে চায়না৷ সরকারের সমালোচনা করলে সাংবাদিকদের বিচারের মুখোমুখি হতে হয়৷ এরকম পরিস্থিতির কারণে অনেক সাংবাদিক দেশ ছেড়ে চলে গেছেন৷ দেশটির আশি শতাংশ গণমাধ্যমের মালিক সরকার, তাই সাধারণ মানুষের মত প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
রোমান দবরোখটভ এবং একাতেরিনা কুজনেটসোভা, সাংবাদিক, রাশিয়া
রোমান: ‘‘রাশিয়ায় সরকার আপনাকে সেন্সর করবে৷ আমাদের ওয়েবসাইটটি ছোট এবং লাটভিয়ায় নিবন্ধিত৷ ফলে আমি সেন্সরশিপ এড়াতে পারছি৷ তা সত্ত্বেও সরকার মাঝে মাঝে আমাদের সার্ভারে হামলা চালায়৷’’ একাতেরিনা: ‘‘রাশিয়ায় বাকস্বাধীনতার কোনো অস্তিত্ব নেই৷ ইউরোপের মানুষ রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে স্বাধীন৷ আমি আশা করছি, রাশিয়ার পরিস্থিতিও বদলে যাবে৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, সিরিয়া
‘‘বেশ কয়েক বছর ধরেই সিরিয়ায় বাকস্বাধীনতার কোনো অস্তিত্ব নেই৷ এমনকি আসাদের শাসনামল সম্পর্কে অনুমতি ছাড়া মতামতও প্রকাশ করা যায়না৷ এটা নিষিদ্ধ৷ কেউ যদি সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাহলে খুন হতে পারে৷ আমি যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনামূলক কিছু লিখি, তাহলে বেশিদিন বাঁচতে পারবো না৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
আয়েশা হাসান, সাংবাদিক, পাকিস্তান
‘‘পাকিস্তানে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা’ শব্দ দু’টি খুবই বিপজ্জনক৷ এগুলোর ব্যবহার আপনার ক্যারিয়ার বা জীবন শেষ করে দিতে পারে৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
রাবা বেন দউখান, রেডিও সাংবাদিক, টিউনিশিয়া
‘‘আমাদের অভ্যুত্থানের একমাত্র ফল হচ্ছে বাকস্বাধীনতা৷ আমরা এখন আমাদের সরকারের সমালোচনা করার ব্যাপারে স্বাধীন৷ এবং আমি যখন আমাদের অঞ্চলের অন্য দেশের বাসিন্দাদের বাকস্বাধীনতার কথা জিজ্ঞাসা করি, তখন একটা বড় ব্যবধান দেখতে পাই৷ আমাদের দেশে দুর্নীতিসহ নানা সমস্যা আছে সত্যি, তবে বাকস্বাধীনতা কোনো সমস্যা নয়৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
খুসাল আসেফি, রেডিও ম্যানেজার, আফগানিস্তান
‘‘বাকস্বাধীনতা আফগানিস্তানে একটি ‘সফট গান৷’ এটা হচ্ছে মানুষের মতামত, যা সম্পর্কে সরকার ভীত৷ এটা চ্যালেঞ্জিং হলেও আমাদের প্রতিবেশীদের তুলনায় আমাদের অবস্থা ভালো৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
সেলিম সেলিম, সাংবাদিক, ফিলিস্তিন
‘‘ফিলিস্তিনে সাংবাদিকদের খুব বেশি স্বাধীনতা নেই৷ একটা বড় সমস্যা হচ্ছে, সাংবাদিকরা মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করতে পারে না৷ ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করছে৷ তারা যদি ফেসবুকে তাদের মতামত জানায়, তাহলেও সরকার গ্রেপ্তার করে৷ তবে সিরিয়া বা ইরাকের চেয়ে অবস্থা ভালো৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
অনন্য আজাদ, লেখক, বাংলাদেশ
‘‘আমাদের দেশে কোনো বাকস্বাধীনতা নেই৷ আপনি ইসলাম বা সরকারের সমালোচনা করে কিছু বলতে পারবেন না৷ ইসলামী মৌলবাদীরা ঘোষণা দিয়েছে, কেউ যদি ইসলামের সমালোচনা করে, তাহলে তাকে হত্যা করা হবে৷ আমি একজন সাংবাদিক এবং গত বছর আমাকে ইসলামিস্ট জঙ্গিরা হত্যার হুমকি দিয়েছে৷ ফলে আমাকে দেশ থেকে পালাতে হয়েছে৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
9 ছবি1 | 9
এর্দোয়ানের সমর্থকরা মনে করছেন, গত জুলাইয়ের ব্যর্থ অভ্যুত্থান ও কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে দেশটির এমন একজন নেতা প্রয়োজন যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন৷ তবে বিরোধীরা বলছেন, সংবিধানে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে একজন স্বৈরশাসকের ক্ষমতা আরও বাড়ানো হবে এবং এর মাধ্যমে তুরস্ক পুরোপুরি স্বৈরশাসনের আওতায় চলে যাবে৷
দেশটিতে ইতিমধ্যে নানানভাবে গণমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা চলছে৷ গত বছর বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এছাড়া কমপক্ষে দেড়শ' গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ ফলে অধিকাংশ সাংবাদিক এখন ‘সেল্ফ-সেন্সরশিপ' মেনে চলছেন৷
বর্তমানে তুরস্কের বেশিরভাগ শীর্ষ গণমাধ্যমের মালিক বড় বড় কোম্পানি, যারা সরকারের বড় প্রকল্পের কাজ পেতে নিজে থেকেই সরকার বিরোধী সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকে৷ যেমন আলোচিত ‘কানাল ডি'-র মালিক ‘দোয়ান হোল্ডিং'৷ সিএনএন টুর্কসহ বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক এই কোম্পানি৷ সংবাদ পরিবেশনে কিছুটা নিরপেক্ষ হিসেবে এই কোম্পানির আওতাধীন গণমাধ্যমের পরিচিতি রয়েছে৷
প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রধানদের ফোন করে কাভারেজের বিষয়ে অভিযোগ করে থাকেন৷
এদিকে, শনিবার এর্দোয়ান বলেছেন, যাঁরা প্রেসিডেন্ট ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, তাঁরা আসলে কুর্দিস্থান ওয়ার্কার্স পার্টি ও জুলাইয়ের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সমর্থক৷ কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইয়েলদিরিমও এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন৷