রবিবার তুরস্কে সংবিধান পরিবর্তন নিয়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে৷ এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে৷ সবশেষ জরিপে ‘হ্যাঁ’ ভোট ‘না’ এর চেয়ে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছে৷
বিজ্ঞাপন
সংবিধানে মোট ১৮টি সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ ফলে প্রায় ৭০টি আইনে পরিবর্তন আসতে পারে৷
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, ‘হ্যাঁ' ভোট ‘না' এর চেয়ে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছে৷ তবে ‘না' ভোটের পক্ষে যাঁরা প্রচারণা চালাচ্ছেন তাঁদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ তাঁদের কাজে বাধা দিচ্ছে৷
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংশোধনী প্রস্তাব হচ্ছে:
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিলুপ্ত করে দেয়া হবে৷ প্রেসিডেন্ট মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট (নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যার উল্লেখ নেই) নিয়োগ দেবেন৷
মন্ত্রিসভার অনুমোদন ছাড়া প্রেসিডেন্ট জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন৷
বাজেটের খসড়া প্রণয়ন করবেন প্রেসিডেন্ট, যা এখন করে থাকে সংসদ৷
সাংবিধানিক আদালত প্রেসিডেন্টের বিচার করতে পারবে৷ ঐ আদালতের ১২ জন সদস্য নিয়োগ দেবেন প্রেসিডেন্ট৷ বাকি তিনজনকে নিয়োগ দেবে সংসদ৷
পাঁচ বছর করে সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন প্রেসিডেন্ট৷ তবে দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে যদি সংসদ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে সেই নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট৷
২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে সংশোধনীগুলো বাস্তবায়ন শুরু হবে৷ সেই সময় একই দিনে প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷
আংকারার বস্তির ভোটারদের মাঝে অনিশ্চয়তা
আংকারার নিম্ন আয়ের মানুষরা আগের তুলনায় প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের আমলে সামাজিক এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি পেয়েছেন৷ তাসত্ত্বেও আসন্ন গণভোটে এর্দোয়ানের ক্ষমতা বাড়ানো উচিত কিনা – সে সম্পর্কে নিশ্চিত নন তাঁরা৷
ছবি: DW/D. Cupolo
ধোঁয়ার মধ্যে বসবাস
তুরস্কের নিম্ন আয়ের মানুষরা যে এলাকায় বাস করেন, সেখানকার আকাশ শীতের মাসগুলোয় ধোঁয়ায় ঢাকা থাকে৷ মূলত ঘর গরম রাখতে যে কয়লা ব্যবহার করা হয়, তারই ধোয়া জড়ো হয়ে থাকে এভাবে৷ এর্দোয়ান নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য বিনা পয়সায় কয়লার সংস্থান করে দিয়েছেন, দিয়েছেন অন্যান্য সুবিধাও৷ অবশ্য এতেও তাঁর পকেটে ভোট পড়বে কিনা, তা নিশ্চিত নয়৷
ছবি: DW/D. Cupolo
দ্বিধান্বিত ভোটাররা
আগামী রবিবার তুর্কিরা এক গণভোটে অংশ নেবেন, যার মাধ্যমে তুরস্কের সংসদীয় ব্যবস্থা বদলে গিয়ে আদৌ এর্দোয়ান এবং তাঁর একেপি দলের নেতৃত্বাধীন প্রেসিডেন্সিয়াল ব্যবস্থায় রূপ নেবে কিনা – তা নির্ধারণ করা হবে৷ তবে গণভোটে এর্দোয়ানের জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় কিছু কম নয়৷
ছবি: DW/D. Cupolo
গরিবের দল
‘‘আমার স্বামী যখন বেকার ছিলেন, তখন আমি ঘর গরম রাখার কয়লা কোথায় পাবো, তা নিয়ে শঙ্কায় ছিলাম৷ একেপি আমাদের বিনা পয়ায় কয়লা দিয়েছে৷ এর মাধ্যমে আমি বুঝতে পেরেছি যে, দলটি গরিবের জন্য৷’’ এ কথা বলেন তিন সন্তানের মা এমেল ইলদিরিম৷ তিনি আরো বলেন, ‘‘আগে ডাক্তার দেখানো অনেক কঠিন ছিল৷ কিন্তু এখন হাসপাতালগুলো গরির রোগীদের নেওয়ার ব্যাপারে অনেক উদার৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
কুর্দদের ভোট
ইলদিরিম, যিনি কুর্দ, তুরস্ক রাষ্ট্র এবং কুর্দি যোদ্ধাদের মধ্যকার সংঘাত সম্পর্কেও উদ্বিগ্ন৷ ‘‘এর্দোয়ান যদি ‘হ্যাঁ’ ভোট পান, তাহলে পরিস্থিতি ভালো হতে পারে৷ তিনি বলেছেন, তিনি শান্তির পক্ষে,’’বলেন ইলদিরিম৷ তবে ‘‘সেলাহাতিন দিমিত্রাসকে (কুর্দি বিরোধী নেতা) যদি জিজ্ঞাসা করেন তাহলে তিনি বলবেন যে, এর্দোয়ান কুর্দিদের তাঁদের রক্তের মধ্যে ডুবিয়া মারবে৷ তাই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া আমার জন্য কঠিন’’, বলেন তিনি৷
ছবি: DW/D. Cupolo
সংশয় বাড়ছে
ক্যাম্পেইনের ব্যানার দিয়ে একটি কোওচ ঢেকে রাখা হয়েছে৷ আংকারার এই এলাকায় এর্দোয়ানকে নিয়ে মিশ্র অনুভূতি রয়েছে৷ কলিজার স্যান্ডউইচ বিক্রেতা ২৫ বছর বয়সি আলী বলেন, ‘‘গত ১৫ মার্চ তারা এখানকার মানুষকে কয়লার ব্যাগ দিয়েছে৷ কিন্তু বসন্তে কয়লা কেন? শীত তো শেষ৷ এটা নিঃসন্দেহে তারা করেছে গণভোটে জেতার জন্য৷ এই হলো ভোটের রাজনীতি৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
সিস্টেমে সমস্যা
আলী বলেন, তাঁর কাছে বড় সমস্যা সরকারের দুর্নীতি৷ ‘‘আমি ঠিক জানি না যে, সমস্যাটা সিস্টেমে নাকি যাঁরা সিস্টেম ব্যবহার করেন তাঁদের মধ্যে৷’’ ডয়চে ভেলেকে তিনি আরো বলেন, ‘‘ইসলাম নিয়েও আমার একই প্রশ্ন রয়েছে৷ এটা কি ধর্ম নাকি যাঁরা এই ধর্মের অনুসারী, তাঁরাই নানা সমস্যা তৈরি করছেন? আমার কথা শুনলে মনে হতে পারে যে, আমি ‘না’ ভোট দেবো৷ তবে আসল কথা হলো, আমি এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
স্বামীর মতই তাঁর মত
তিন বছর বয়সি আয়েশা তার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে৷ তাঁর মা, যিনি নাম জানাতে চান না বা ছবি তুলতে চান না, বলেছেন যে তিনি ‘হ্যাঁ’ ভোট দেবেন শুধুমাত্র এইজন্য যে, তাঁর স্বামীও ‘হ্যাঁ’ ভোট দেবেন৷
ছবি: DW/D. Cupolo
বিনিয়োগ দরকার স্কুলে
আংকারার বস্তির মুস্তফা তুহরান (ছবিতে নেই) জানান, আশেপাশের স্কুলগুলোর উন্নতি করা হয়নি৷ ফলে ভালো মানের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিনা পয়সায় কয়লা পাই, কেননা রাষ্ট্র আমাদের কাছ থেকে কর আদায় করে৷ এটা বিনিময়ে কিছু দেওয়ার মতো ব্যাপার৷ কিন্তু আমরা চাই, শিক্ষাখাতে আরো বেশি করে বিনিয়োগ করা হোক, যাতে আমাদের জন্য আরো সম্ভাবনা তৈরি হয়৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
8 ছবি1 | 8
প্রায় ৯৪ বছর আগে কামাল আতাতুর্ক যেসব মতাদর্শের ভিত্তিতে আধুনিক তুরস্ক গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যেপ এর্দোয়ানের আমলে সেই পরিস্থিতি অনেকখানি বদলে গেছে বলে মনে করেন ‘না' এর পক্ষে প্রচারণা চালানো কর্মীরা৷ তাঁরা বলছেন, পশ্চিমা মূল্যবোধ, গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা থেকে তুরস্ককে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এর্দোয়ান৷
তবে এর্দোয়ানের সমর্থকরা গণভোটে ‘হ্যাঁ' ভোট দিয়ে তাঁকে পুরস্কৃত করতে চান৷ কারণ, তাঁরা মনে করেন, এর্দোয়ান তুর্কিদের জীবনে ইসলামি মূল্যবোধ ফিরিয়ে এনেছেন৷ ধর্মভীরু শ্রমিক শ্রেণির ভোটারদের কাছেও এর্দোয়ান বেশ জনপ্রিয়৷ এছাড়া তাঁর আমলে বিমানবন্দর থেকে শুরু করে হাসপাতাল, স্কুল – এ সব অবকাঠামো গড়ে উঠেছে বলে জানান ‘হ্যাঁ' সমর্থকরা৷
জেডএইচ/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)
নতুন তুরস্ক গড়ার অঙ্গীকার দিলেন এর্দোয়ান
ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর টানা তিন সপ্তাহ ধরে এর্দোয়ানের পক্ষে ব়্যালির পর, তুরস্কের ৮০টি শহরে গত রবিবার চূড়ান্ত বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়৷ আঙ্কারা থেকে জানাচ্ছেন ডিয়াগো কুপোলো৷
ছবি: DW/D. Cupolo
রাজপথে নামার আহ্বান
গতমাসে সেনা অভ্যুত্থানের সময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান তাঁর সমর্থকদের রাজপথে নেমে ক্ষমতাসীনদের রক্ষায় সেনাবাহিনীকে হটাতে সহায়তার আহ্বান জানান৷ সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সত্যিই রাস্তায় নামেন অসংখ্য মানুষ এবং সেনাবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়৷ এরপর এর্দোয়ান প্রতিরাতে তাঁর সমর্থকদের রাস্তায় থাকতে আহ্বান জানিয়েছিলেন৷
ছবি: DW/D. Cupolo
লাখো মানুষের উপস্থিতি
রবিবার চূড়ান্ত ব়্যালিতে ইস্তানবুলে হাজির ছিলেন ২০ লাখের মতো মানুষ৷ আঙ্কারায় ছিলেন দশ হাজার৷ তুরস্কের মোট ৮০টি শহরে এ সময় বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়৷ এর্দোয়ানের একেপি হচ্ছে প্রথম দল, যেটি ইসলামিক মনোভাব প্রদর্শন সত্ত্বেও একটি সেনা অভ্যুত্থান ঠেকাতে পেরেছে৷ এর্দোয়ানের সমর্থকরা একে দেশটির ইতিহাসরচনাকারী সেনাবাহিনী এবং ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের বিপরীতে বড় জয় মনে করছে৷
ছবি: DW/D. Cupolo
এক নতুন তুরস্ক নিয়ে আশাবাদ
ইস্তানবুল থেকে দেয়া বক্তব্যে এর্দোয়ান নতুন এক তুরস্ক গড়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন এবং তাঁর সমর্থকরাও এ ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন৷ আঙ্কারার রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী লালে আলিচি সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে আয়োজিত প্রতিটি ব়্যালিতে অংশ নিয়েছেন৷ তিনি জানান, অভ্যুত্থানে জড়িতদের শাস্তি দেয়ার পর তুরস্ক দ্রুত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে, কেননা তখন সরকারকে বাধা দেয়ার আর কেউ থাকবে না৷
ছবি: DW/D. Cupolo
‘‘আমরা বড় শক্তি হবো’’
ইন্টেরিয়র ডিজাইনার আতালে জানান, তিনি এর্দোয়ানকে সমর্থন দিয়েছেন কেননা তিনি তুরস্ককে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে গেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এর্দোয়ান বিশ্বকে জানিয়েছেন, আমরাও আছি এবং শীঘ্রই বড় শক্তিতে পরিণত হবো৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
এইচডিপিকে নেয়া হয়নি
যদিও রবিবারের ব়্যালিতে অংশ নেয়া অনেকে দাবি করেছেন, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে রাস্তায় নেমেছেন তারা, তাসত্ত্বেও বিরোধীরা জানিয়েছেন, সেদেশের তৃতীয়-বৃহত্তম রাজনৈতিক দল কুর্দিপন্থি ডেমোক্রেটিক পার্টি (এইচডিপি)-কে ব়্যালিতে যোগ দিতে দেয়া হয়নি৷ এক কুর্দ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘কুর্দ হিসেবে আমি সেখানে যেতে পারি না, কেননা আমি নিরাপদ বোধ করছি না৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের উত্থান
জাতীয় জরুরি অবস্থায় সাধারণত ব্লক করা থাকলেও ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে৷ এর্দোয়ানের ‘ফেসটাইম’ বক্তব্য থেকে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা দেখানো ‘পেরিসকোপ’ ভিডিও অবধি সবকিছুই অনেক গুরুত্ব পেয়েছে৷ বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, সরকার নিজেদের জন্য লাভজনক মনে করায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বাধা সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ নেয়নি৷