1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা : সূচকেও পরিস্থিতির অবনতির ইঙ্গিত

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩ মে ২০২৩

বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে৷ সাংবাদিকদের ওপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খড়গ আছে, সংবাদ প্রকাশের কারণে অনেকে হামলা ও ফৌজদারি মামলার শিকার হচ্ছেন৷

Bangladesch | Protets vor Nationalem Presseclub in Dhaka
ছবি: MOHAMMAD PONIR HOSSAIN/REUTERS

রিপোর্টার্স উইদাইট বর্ডারস (আরএসএফ)-এর বিশ্ব গণমাধ্যম স্বাধীনতার সূচকে বাংলাদেশ আগের বছরের তুলনায় এক ধাপ পিছিয়েছে৷ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষ্যে তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৩৷ স্কোর ৩৫.৩১৷ ২০২২ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬২, স্কোর ছিল ৩৬.৬৩৷ ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালের সূচকে বাংলাদেশের ১০ ধাপ অবনতি হয়েছিল৷ ২০২১ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫২, স্কোর ৫০.২৯৷ ২০২০ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫১, স্কোর ৫০.৬৩৷

সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ভারত, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, মালয়েশিয়া৷ সূচকে যুক্তরাজ্যের অবস্থান ২৬, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫৷ নরওয়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় শীর্ষে আছে৷

বাংলাদেশের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা এক হাজার ২৯৫টি মামলার তথ্য বিশ্লেষণ করেছে৷ তারা বলছে, ওই সব মামলার মধ্যে ২৭. ৪১ শতাংশ মামলা হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে৷ এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩৫৫ জন সাংবাদিককে৷

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ৫৬ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, মামলা, হুমকি ও পেশাগত দায়িত্ব পালনে গিয়ে বাধার শিকার হয়েছেন৷ তারা বলছে, "এই সময়ের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনির হেফাজতে মৃত্যু, জোরপূর্বক অপহরণ ও নিখোঁজ, রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে বাধা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দেয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে৷”

তাদের হিসেবে ২০২২ সালে ২৫৬ জন সাংবাদিক হামলা, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হন৷ একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷

সাংবাদিক নির্যাতনে যারা যুক্ত, তাদের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনি, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, অপরাধীরা এগিয়ে৷ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে জিজিটাল আইন ছাড়াও আরো অনেক ফৌজদারি আইনে মামলা হয়৷ প্রকাশিত খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্য ধর্ষণ, চাঁদাবাজিসহ আরো অনেক মামলার নজীর বাংলাদেশে আছে৷

আর্টিক্যাল নাইনটিনের পরিবেশন করা তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে চলতি বছরের ফেব্রæয়ারি মাস পর্যন্ত সারাদেশে ২২৩ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১১০টি মামলা হয়েছে৷ এসব মামলায় মোট ৫৪ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এই সময়ে সব মিলিয়ে ৫৭৩টি মামলা হয়েছে৷ গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪০৪ জনকে৷ ২০১৮ সালের অক্টোবরে মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকর হয়৷

শুধু সরকারকে এককভাবে দায়ী করা যাবে না: দীপ আজাদ

This browser does not support the audio element.

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বাংলাদেশে সাংবাদিক ও সরকারি নীতির সমালোচনাকারীদের ওপর ক্রমবর্ধমান আক্রমণে উদ্বেগ প্রকাশ করে তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে৷ তাদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরডাব্লিউসহ ছয়টি সংগঠনের উদ্বেগের কথা বলা হয়েছে৷ সংগঠনগুলো হলো: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ), কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে), রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন৷

বিবৃতিতে তারা বলছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে যে নির্বাচন হওয়ার কথা, তার আগে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে সীমিত করায় তা মুক্ত রাজনৈতিক বিতর্কের পরিবেশকে দুর্বল করছে৷

তারা বলছে, বাংলাদেশের সাংবাদিকরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তারের ঝুঁকিতে আছেন৷ তারা হয়রানি, নজরদারি ও সরকার-সমর্থকদের দ্বারা শারীরিক হামলার শিকার হচ্ছেন৷ ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশে ৫৬ জন সাংবাদিক সরকার ও তার সমর্থকদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন৷

তারা উদাহরণ দিয়ে বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গত ৩০ মার্চ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়৷ তাকে মধ্যরাতে আটক করা হয়৷ একই প্রতিবেদনের কারণে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়৷ পরে শামসুজ্জামান জামিনে মুক্তি পান৷

তারা বলছেন, বার্তাকক্ষগুলো আরো সেলফ সেন্সরশিপের দিকে যাচ্ছে৷ সরকারি কর্তৃপক্ষ সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইট থেকে প্রতিবেদন সরাতে বলছে৷

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অন্যান্য আইনও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস আইন ও দণ্ডবিধির আওতায় মামলার তদন্ত চলছে৷

কাকে শিক্ষা দিতে সাংবাদিক কারাগারে?

56:28

This browser does not support the video element.

তারা সরকারের কাছে পাঁচটি দাবি জানিয়েছে৷ দাবিগুলো হলো- জিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল বা স্থগিত করতে হবে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইনটি সংশোধন করতে হবে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সব ধরনের সহিংসতার দ্রুত, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও কার্যকর তদন্ত করতে হবে, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের কারণে যারা মামলার শিকার হয়েছেন সেইসব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে, বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার খর্ব করে এমন আইনের অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে৷

আর্টিক্যাল নাইনটিনের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান ফারুক ফয়সাল বলেন, "সামনে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সংবাদমাধ্যম এবং বাক স্বাধীনতা আরো সংকুচিত হচেছ৷ আমাদের অবস্থান এখন আফগানিস্তানেরও নীচে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকদের সুরক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা আছে৷ আইন আছে৷ আর বাংলাদেশে সাংবাদিকদের হয়রানি ও হেনস্থা করার আইন হয়৷ ডিএসএ তার একটি৷ সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে নড়বড়ে অবস্থায় আছে৷ তাই বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করতে চায়৷ কিছু প্রকাশ করতে দিতে চায় না৷”

"আমি বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এখন নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আছি৷ এখানেও বাংলাদেশের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে৷ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না, তথ্য প্রকাশ করা যাবে না০ এটা কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে হয় না৷ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকলে গণতন্ত্র থাকবে না,” বলেন ফারুক ফয়সাল৷

এদিকে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব দীপ আজাদ বলেন, " বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের এই অবস্থার জন্য শুধু সরকারকে এককভাবে দায়ী করা যাবে না৷ এখানে মালিকপক্ষের ব্যবসায়িক স্বার্থসহ নানা ধরনের স্বার্থ আছে৷ সেই স্বার্থের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা যেতে পারেন না৷ মুক্ত গণমাধ্যমের প্রথম সমস্যা হলো মালিকপক্ষ এটাকে তাদের ব্যবসা ও স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন৷ আবার অনেক সিনিয়র সাংবাদিকের ব্যক্তিগত স্বার্থ আছে৷ তারা বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের পিআর-এর কাজ করেন, তারাও খবর আটকে দেন৷ তারা মুক্ত গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে কাজ করেন৷ এর পরে আছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, বিশেষ করে গোয়েন্দা সংস্থা, তারাও মুক্ত গণমাধ্যমের অন্তরায়৷ বড় বড় শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ আছে গণমাধ্যমের ওপর৷”

তার কথা, "এসব নিয়ন্ত্রণ ও বাধার মধ্যেও বাংলাদেশের সাংবাদিকরা মুক্ত ও স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে চান৷ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতে চান৷ কিন্তু এর পথে প্রধান বাধা এখন জিজিটাল নিরাপত্তা আইন৷ আমরা তাই এই আইনের সুনির্দিষ্ট কয়েকটি ধারা বাতিলের দাবি জানিয়েছি৷ মুক্ত সাংবাদিকতার পথে যেসব আইন ও ধারা অন্তরায় আমরা সেগুলো বাতিল চাই৷”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ