বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদ এবং এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি সহ অন্যান্য দাবিতে গণ জাগরণমঞ্চের যশোর অভিমুখে রোডমার্চ – এমন সব বিষয় নিয়ে লিখছেন ব্লগার আর ফেসবুক ব্যবহারকারীরা৷
বিজ্ঞাপন
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশে ফিরেছিলেন৷
দিনটিকে স্মরণ করে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী তাদের কাভার ফটো হিসেবে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ছবি ব্যবহার করেছেন৷
সামহয়্যার ইন ব্লগে মোরতাজা দিবসটি স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের একটি অংশ তুলে দিয়েছেন৷ সেই অংশটিতে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘‘...বাংলার মানুষ প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠলো৷ আমি শান্তিপূর্ণ সংগ্রাম চালিয়ে যাবার জন্য হরতাল ডাকলাম৷ জনগণ আপন ইচ্ছায় পথে নেমে এলো৷ কিন্তু কি পেলাম আমরা? বাংলার নিরস্ত্র জনগণের উপর অস্ত্র ব্যবহার করা হলো৷ আমাদের হাতে অস্ত্র নেই৷ কিন্তু আমরা পয়সা দিয়ে যে অস্ত্র কিনে দিয়েছি বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্যে, আজ সে অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে আমার নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য৷ আমার দুঃখী জনতার উপর চলছে গুলি৷''
মোরতাজা লিখেছেন, ‘‘এমন মুক্তির বাণী যাঁর কণ্ঠে, সেই জনতার মুক্তির জন্য লড়াকু মানুষটির স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ৷ শ্রদ্ধা, ভালোবাসা তাঁর জন্য৷ আজকের মৃত্যু, খুন, লুট এবং নিরাপত্তাহীন জীবনে এ ভাষণের গুরুত্ব উপলব্ধি করলে আমরা উপকৃত হবো৷ দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হবে না বাংলাদেশের স্বাধীনচেতা মানুষ৷ জয় হোক মানুষের, সব শঙ্কার অবসান হোক৷''
পুলিশি নির্যাতনের শিকার গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা
পাকিস্তানের সঙ্গে অস্থায়ী কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা৷ এতে নারীসহ বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন৷ প্রতিবাদে নতুন আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ৷
ছবি: REUTERS
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের দাবি
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় গত ১২ ডিসেম্বর কার্যকর হয়৷ এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর পাকিস্তানে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়৷ এমনকি সেদেশের জাতীয় পরিষদে নিন্দা প্রস্তাবও পাস হয়৷ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে পাকিস্তানের এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে সরব হয় গণজাগরণ মঞ্চ৷
ছবি: DW
‘নাক গলানোর’ প্রতিবাদ
কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে পাকিস্তানের ‘নাক গলানোর’ প্রতিবাদে ১৮ ডিসেম্বর ঢাকায় সেদেশের দূতাবাসের সামনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা৷ কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা পুলিশের বাধার কারণে সফল হয়নি৷ তাই গুলশানে পাকিস্তান দূতাবাসের কাছাকাছি জায়গায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
সম্পর্ক ছিন্নের আল্টিমেটাম
গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা বুধবারের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আপাতত স্থগিত রাখতে সরকারকে ২০ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়৷ এই সময়ের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন না করলে পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাও করার ঘোষণাও দেয় তারা৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাও চেষ্টা
আল্টিমেটাম অনুযায়ী, ২০ ঘণ্টা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর আবারো সক্রিয় হন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা৷ কিন্তু পাকিস্তান দূতাবাস অভিমুখে তাদের মিছিলে লাঠিপেটা করে পুলিশ৷ ফলে দূতাবাস অবধি পৌঁছানো আর সম্ভব হয়নি তাঁদের পক্ষে৷
পুলিশের লাঠিপেটায় আহতদের মধ্যে রয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার৷ পুলিশ তাঁকে মিছিল থেকে একাধিকবার আটকের চেষ্টা করে বলে দাবি করেছেন মঞ্চের কর্মীরা৷ কিন্তু কর্মীদের বাধার মুখে ইমরানকে আটক করতে পারেনি পুলিশ৷ গণজাগরণ মঞ্চের মারুফ রসুল এই বিষয়ে বলেন, ‘‘ইমরানকে পুলিশ দু’দফায় লাঠিপেটা করলে তিনি মাথা, বুক ও পিঠে আঘাত পান৷ তাঁকে প্রথমে ল্যাবএইড এবং পরে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
বাদ যায়নি নারী কর্মীরাও
পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের নারী কর্মীরাও৷ এক নারী কর্মীকে পুরুষ পুলিশের পেটানোর এবং টানাহ্যাঁচড়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে৷ পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, তারা গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা বা নির্যাতন করেনি৷ ঐ এলাকা কূটনৈতিক পল্লি হওয়ায় স্পর্শকাতর এলাকা থেকে গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে৷
ছবি: DW
‘পুলিশের লাঠিপেটা গ্রহণযোগ্য নয়’
গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের উপর পুলিশের লাঠিপেটা প্রসঙ্গে অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেছেন, ‘‘গণজাগরণ মঞ্চ যে অবস্থান থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিতের দাবি জানিয়েছে তা ঠিকই আছে৷ কিন্তু সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় সবদিক বিবেচনা করে৷ তবে গণজাগরণ মঞ্চের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে পুলিশের লাঠিপেটা গ্রহণযোগ্য নয়৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
‘সাত দিনের মধ্যে বিচারের দাবি’
এদিকে, কর্মীদের ওপর হামলাকারী পুলিশের ৭ দিনের মধ্যে বিচার না হলে আগামী শুক্রবার কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ৷ শুক্রবার শাহবাগে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে একথা জানান তাঁরা৷ এসময় বাংলাদেশিদের প্রতি পাকিস্তানের পণ্য বর্জনের আহ্বানও জানায় গণজাগরণ মঞ্চ৷
ছবি: DW/M. Mamun
গণজাগরণ মঞ্চ
উল্লেখ্য, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কাদের মোল্লাসহ অন্যান্য অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে শাহবাগে সমবেত হন অসংখ্য মানুষ৷ শাহবাগের এই সমাবেশ থেকেই সৃষ্টি হয় গণজাগরণ মঞ্চ, যাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আপিলের চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড হয় জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার৷
ছবি: REUTERS
10 ছবি1 | 10
এদিকে, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস রোধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করে আলাদা আইন প্রণয়ন সহ তিনটি দাবিতে যশোর অভিমুখে রোড মার্চ শুরু করেছে গণ জাগরণমঞ্চ৷ ‘ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক বিওএএন'-এর ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত তথ্য ও ছবি নিয়মিত আপডেট করা হচ্ছে৷
গণজাগরণ মঞ্চের ফেসবুক পেজে তাঁদের অন্য যে দুটে দাবির কথা বলা হয়েছে সেগুলো হলো, সাম্প্রতিক প্রতিটি নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও গোষ্ঠিকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং সারা দেশে আক্রান্ত পরিবারগুলোর ক্ষতি নিরূপণ করে তাঁদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে৷ এই দাবিগুলো পূরণে সরকারকে আগামী এক মাসের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছে গণ জাগরণমঞ্চ৷