গত আট বছরকে বিশ্বের উষ্ণতম সময় বলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু নিরীক্ষণ বিষয়ক সংস্থা দ্য কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সিথ্রিএস)।
বিজ্ঞাপন
যেদিন থেকে বিশ্বের তাপমাত্রার রেকর্ড রাখা শুরু হয়েছে, সেদিন থেকে এখন পর্যন্ত ধারণকৃত তথ্য বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে এসেছে তারা৷
মঙ্গলবার প্রকাশিত সিথ্রিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাপমাত্রার রেকর্ড রাখা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ২০২২ সাল ছিল ইউরোপের দ্বিতীয় উষ্ণতম বছর, আর বিশ্বের পঞ্চম উষ্ণতম বছর। গত মাসটি ছিল ইউরোপ অঞ্চলের সপ্তম উষ্ণতম ডিসেম্বর। ১৯৯১ সাল থেকে ২০২০ সাল নাগাদ সময়কে আবহাওয়ার স্বাভাবিক অবস্থা বিবেচনা করে আবহাওয়াবিদরা উষ্ণতার এ তুলনামূলক চিত্র তৈরি করেছেন।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন ও ইতালিতে গড় তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড ধারণ করা হয়েছে গত বছর। এ সময় মধ্যপ্রাচ্য, চীন, এশিয়ার মধ্যাঞ্চল ও আফ্রিকার উত্তরাঞ্চলে নজিরবিহীন গরম পড়ে।
মেরু অঞ্চলেও গরমের নতুন রেকর্ড হয়েছে গত বছর। অ্যান্টার্কটিকায় আবহাওয়া গবেষণা সংস্থা ভোস্টক স্টেশন সেখানে গত ৬৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ তাপমাত্রা, মাইনাস ১৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে। গ্রিনল্যান্ডে গত সেপ্টেম্বরের গড় তাপমাত্রা অন্যান্য বছরের তুলনায় আট ডিগ্রি বেশি ছিল।
জলবায়ুর উত্তপ্ত হয়েওঠার পেছনে কার্বন ডাই অক্সাইড ও মিথেনের মতো গ্রিনহাউজ গ্যাসের প্রভাবকেও দায়ী মনে করা হচ্ছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে নির্গত হয়ে এসব গ্যাস বায়ুমণ্ডলে এক হাজার বছর পর্যন্ত আটকে থাকতে পারে। গত এক দশকে বায়ুমণ্ডলে এসব গ্যাস রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন ও যানবাহন চালানোর জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারও বৈশ্বিক উষ্ণতার আরেকটি বড় কারণ।
কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের সামান্থা বার্গেস বলেছেন, ‘‘২০২২ সালে ইউরোপসহ পুরো বিশ্বের চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ পরিণতির বার্তাই দিচ্ছে।”
এসএফ/ এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
পরিবেশ সম্মেলনে অভিনব প্রতিবাদ
স্কটল্যান্ডে চলা কপ ২৬ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সেখানে সমবেত জনতার সমালোচনা দেখা যাচ্ছে৷ ছবিঘরে দেখুন এই সম্মেলনকে ঘিরে অভিনব প্রতিবাদের ছবি...
ছবি: Dominika Zarzycka/NurPhoto/picture alliance
মাথার চুল ছেঁড়া
জো বাইডেন ও বরিস জনসনের মতো বিশ্বনেতাদের আদলে সেজে পরিবেশকর্মীরা গ্লাসগোর পথে নামেন৷ পরিবেশকর্মীদের আশঙ্কা, কপ২৬ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বৈশ্বিক উষ্ণায়নের উর্ধ্বসীমা এক দশমিক ৫ হলেও, তার বাস্তবায়নে সফল হবে না বিশ্বের নেতৃত্ব৷ এবিষয়ে নিজেদের হতাশা প্রকাশে পরিবেশকর্মীদের দেখা যাচ্ছে মাথার চুল ছিঁড়তে৷
ছবি: Ben Stansall/AFP/Getty Images
পরিবেশের জন্য একজোট
এই সম্মেলনে অংশ নেন বিশ্বের ২০০টি রাষ্ট্রের ও সংগঠনের নেতৃত্ব৷ এদের ওপর চাপ দিতে গ্লাসগোর পথে নামেন হাজার হাজার প্রকৃতিপ্রেমী৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে গ্লাসগোর একটি রাস্তার ছবি, যেখানে নানা ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন হাতে দেখা যাচ্ছে প্রতিবাদীদের৷
ছবি: Danny Lawson/dpa/picture alliance
জ্বলছে পৃথিবী
ছবিতে দেখা যাচ্ছে জ্বলন্ত পৃথিবীর একটি প্রতীক, যা পরিবেশকর্মীরা গ্লাসগোর রাস্তায় সাজিয়েছেন৷ জ্বলন্ত পৃথিবীকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছেন বিশ্বের তাবড় নেতৃবৃন্দ৷ কিন্তু যত দ্রুত এই আগুন নেভাতে যাওয়া উচিত, ততটা তৎপর নয় বিশ্ব নেতৃত্ব৷ এটাই বোঝাচ্ছে ওপরের দৃশ্য, যা তৈরি করেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অক্সফামের কর্মীরা৷
ছবি: Scott Heppell/AP Photo/picture alliance
লালরঙা প্রতিবাদ
এক্সটিংশন রেবেলিয়ন নামের একটি গোষ্ঠী বিশ্বজুড়ে অহিংস পন্থায় পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা ছড়ানোর কাজ করে থাকে৷ তাদের স্ট্রিট পারফর্মান্স দল ‘রেড লেবেল ব্রিগেড’ কপ২৬ চলাকালীন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে অংশ নেয়৷ তাদের গায়ের লাল পোশাক ‘বিশ্বের সকল মানুষের রক্তের রঙের’ প্রতীক৷
ছবি: Jeff J Mitchell/Getty Images
‘শুধু মিছে কথা, ছলনা’
গ্রেটা থুনবের্গের মতো ‘ফ্রেন্ডস অফ দ্য আর্থ’ সংস্থার কর্মীরা মনে করেন যে বিশ্বের নেতারা শুধুই মিথ্যা আশ্বাস দিতে থাকেন৷ তাদের দাবি, উত্তর সাগরে তেল ও গ্যাসের খোঁজ অবিলম্বে বন্ধ করা হোক৷ আর আশ্বাস নয়, এবারে কাজ দেখতে চান তারা৷
ছবি: Jane Barlow/PA Wire/empics/picture alliance
প্রতিবাদে পিকাচু
বিখ্যাত জাপানি কার্টুন চরিত্র পিকাচুর মতো সেজে প্রতিবাদীরা কয়লা শিল্পের পেছনে থাকা জাপানি সরকারের সমালোচনা করেন৷
ছবি: Kyodo/dpa/picture alliance
মাৎস্যন্যায়ের মতো...
ওশান রেবেলিয়ন সংস্থার কর্মীরা চান আরো বিশ্বের মৎস্য চাষের বাজার আরো পরিবেশবান্ধব হোক, কমুক এই খাতে বাড়ন্ত দুর্নীতি৷ এই দাবিতে তারা মাছের মতো সেজে পথে নামেন৷
ছবি: Andy Buchanan/AFP/Getty Images
পৃথিবী বদলাবে যারা
প্রোজেক্টিং চেইঞ্জ প্রকল্পের সাথে জড়িত রয়েছেন নামীদামী শিল্পী, অ্যাক্টিভিস্ট ও লেখকেরা৷ ফরাসি শিল্পী জেআর এভাবেই সাজিয়ে তুলেছেন তার প্রতিবাদ, যেখানে স্থান পেয়েছে এই প্রকল্পের সাথে জড়িত থাকা শিল্পীদের ছবি৷
ছবি: Jeremy Sutton-Hibbert/#ProjectingChange/Getty Images
আগে পৃথিবী, পরে মুনাফা
গ্লাসগোতে প্রতিবাদী জনতার সব অংশ সব বিষয়ে একমত না হলেও একটা বিষয়ে তাদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই৷ সব গোষ্ঠীই চান নেতাদের আরো বেশি করে দায়িত্বগ্রহণ৷ কার্যকরী নীতি প্রণয়ণ করে বিশ্বনেতৃত্ব বোঝাক আসলেই তাদের কাছে বাজারের তুলনায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ পৃথিবী ও তার পরিবেশ, এমনটাই আশা এই অভিনব প্রতিবাদীদের৷