1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘গত ১০-১৫ বছরে নির্বাচন কমিশন তাদের সকল ওজন হারিয়ে ফেলেছে’

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৪ অক্টোবর ২০২২

সম্প্রতি একজন নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের সময় ডিসি-এসপিদের বক্তব্য ছিল ঔদ্ধত্যপূর্ণ, শিষ্টাচার বর্হিভূত৷

বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ভবন
ছবি: bdnews24.com

বেপরোয়া আচরণ করা এই কর্মকর্তাদের দিয়ে আগামী নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা সম্ভব? কিভাবেই বা আমলাদের শৃঙ্খলায় ফেরানো যাবে? এসব বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে  কথা বলেছেন সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার৷

ডয়চে ভেলে : মাঠ পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের আচরণ কি একটু বেশি বেপরোয়া মনে হচ্ছে না?

আলী ইমাম মজুমদার : আপনি প্রশ্নটি করেছেন, কয়েকদিন আগে নির্বাচন কমিশনে ডিসি এসপিদের যে বৈঠক হয়েছে সেটাকে কেন্দ্র করে৷ এখানে কিন্তু মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ব্যাপারটা যেমন ছিল, ইলেকশন কমিশনের ব্যাপারটাও ছিল৷ সেখানে যারা ডিসি-এসপি ছিলেন তাদের আচরণ অবশ্যই আমার কাছে বেপরোয়া মনে হয়েছে৷ কারণ যেটা আমার মনে হয়েছে, ইলেকশন কমিশন কোন হোমওয়ার্ক করা ছাড়া এখানে কাজ করতে গেছে৷ এই বিষয়গুলো যেভাবে হ্যান্ডেল করতে হয় সেটা তারা রপ্ত করতে পারেনি৷ 

গত ৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান ডিসি-এসপিদের উদ্দেশ্যে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা কি যৌক্তিক নয়?

আনিছুর রহমান মূলত টাকা পয়সা নিয়ে ডিসি-এসপিদের কথাটা বলেছিলেন৷ নিশ্চয়ই উনি সকলকে কেন্দ্র করে বলেননি৷ কাউকে কাউকে কেন্দ্র করে হয়ত বলেছেন৷ যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তার কাছে লিখিত ব্যাখা চাইতে পারতেন? তার কন্ট্রোলিং মিনিস্ট্রিতে বলতে পারতেন৷ তার প্রত্যাহার চাইতে পারতেন৷ শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থাও নিতে বলতে পারতেন৷ কিন্তু যেখানে সবাই একত্রিত সেখানে উত্তপ্ত পরিবেশের মধ্যে ঢালাওভাবে এমন কথা বলা উচিৎ হয়নি বলে আমি মনে করি৷ 

‘ডিসি-এসপিদের আচরণ অবশ্যই আমার কাছে বেপরোয়া মনে হয়েছে’

This browser does not support the audio element.

যেভাবে তারা প্রতিবাদ করেছেন সেটা কি শিষ্টাচার বর্হিভূত নয়?

হ্যাঁ, সেটাও শিষ্টাচার বর্হিভূত৷ কারণ হিসেবে আমি যেটা বলব, তাদের পক্ষের জন্য না৷ গত ১০-১৫ বছরে নির্বাচন কমিশন তাদের সকল ওজন হারিয়ে ফেলেছে৷ তাদের সকল গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে৷ এটা জনগণের কাছে এবং তাদের অর্ধস্তনদের কাছেও৷ আজকেও দেখেন গাইবান্ধায় একটা উপনির্বাচন হচ্ছে৷ একটা মাত্র উপনির্বাচন হচ্ছে, সেখানেও ভোট স্থগিত করতে হয়েছে৷ এখানে রিটার্নিং অফিসার কিন্তু নির্বাচন কমিশনের লোক৷ নির্বাচন কমিশন একটা নির্বাচনি এলাকায় একদিনে ভোট সফলভাবে করতে পারছে না৷ এখানে কিন্তু সাপোর্ট দেওয়ার জন্য পুলিশ থেকে শুরু করে মোবাইল কোর্টও আছে৷ কিন্তু করতে পারেনি৷ সুতারাং আমি যেটা মনে করি, যারা এটা করেছেন তারা সঠিক আচরণ করেনি৷ নির্বাচন কমিশন চাইলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারতেন৷ সেখানে তো জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবও উপস্থিত ছিলেন৷ পুলিশের বিষয়টি তিনি দেখতে পারতেন৷ আর ডিসিদের ব্যাপারে উনারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখতে পারেন৷ নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে আমি বলব, তারা নিজেদের অবস্থান দুর্বল করে ফেলেছেন৷ 

ডিসি-এসপিদের এমন ঔদ্ধত্য আচরণে কী মাঠ প্রশাসন আরও বেপরোয়া হয়ে যাবে না? তাদের নিয়ন্ত্রণ কী কঠিন হয়ে যাবে না?

না, মোটেই না৷ ডিসি-এসপিরা যখন বুঝবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো কর্তৃপক্ষ আছে বা লোক আছে তখন তারা সঠিক আচরণই করবে৷ আমরা নির্বাচন কমিশনকে ফেস করেছি ডিসি হিসেবে৷ রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নির্বাচন করেছি৷ তখন আমরা বুঝেছি, কোনভাবে যদি তারা আমাকে পক্ষদুষ্ট হিসেবে সন্দেহ করেন তাহলে আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে৷ এটা যখন আমি বুঝেছি তখন সিরিয়াসলি নিরপেক্ষ থেকেছি৷ শুধু আমি না, আমার সব সহকর্মীরা৷ তখন নির্বাচন কমিশন আমাদের যে নির্দেশ দিয়েছে আমরা সেটা শুনে গেছি, তামিল করেছি৷ নির্বাচন কমিশন নিয়ে তখন আমাদের ধারণা ছিল, তারা আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন৷ তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে পরিচালনা করার মতো কর্তৃত্ব রাখেন৷ কিন্তু গত ১০-১২ বছরে নির্বাচন কমিশন সেই অবস্থা হারিয়ে ফেলেছে৷ এই কর্মকর্তারা আগের দু'টো নির্বাচন দেখেছেন৷ তখন হয়ত তারা ডিসি এসপি ছিলেন না৷ জুনিয়র অফিসার ছিলেন৷ ফলে তারা দেখেছেন নির্বাচন কমিশন একটা ঠুঁটো জগন্নাথ৷ তারপরও আমি মনে করি, এটা অনাকাঙ্খিত৷ হওয়া উচিত হয়নি৷ নির্বাচন কমিশন চাইলে এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লিখতে পারেন৷ 

প্রশাসনের এই কর্মকর্তাদের দিয়ে আগামী নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করা সম্ভব?

এখানে প্রতিষ্ঠান হিসেবে আর ব্যক্তি হিসেবে দু'টো ব্যাপার আছে৷ আমি মনে করি, শুধু প্রশাসনের কর্মকর্তা না, আগামী নির্বাচনের আগে সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কেও ভিন্নভাবে ভাবতে হবে৷ সরকার ব্যবস্থার মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে৷ তখন অটোমেটিকালি এসব কর্মকর্তার মধ্যে পরিবর্তন আসবে৷ সেই নির্বাচনের আগে ডিসিও পরিবর্তন হবে, এসপিও পরিবর্তন হবে৷ যদি সঠিকভাবে ইলেকশন করতে হয়৷ তখন তারা আচরণও করবে ঠিকভাবে৷

আমলারা বেশি ক্ষমতাধর হয়ে পড়লে দেশ কী বিরাজনীতিকরণের দিকে চলে যায় না?

আমার মনে হয়, আপনি আমলাদের উপর নির্দয় হচ্ছেন৷ আমলাদের শাসন করার মতো হাতিয়ার তৈরি করেন, আমলারা বেপরোয়া হবেন না৷ যেসব কর্মকর্তা পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের জন্য অভিযুক্ত হয়েছেন তাদের এখান থেকে বদলি করতে হবে৷ এখন তো জেলা পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে৷ পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের জন্য একজন ডিসিকে বদলি করা হয়েছে৷ এটা যথেষ্ট না৷ পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের জন্য তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের সুযোগ আছে৷ নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য এমন বেপরোয়া আচরণের দিকে যাচ্ছে৷ এই আচরণের আমি বিরোধিতা করি৷ আমি মনে করি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন কন্ট্রোলিং মিনিস্ট্রিতে কোন চিঠি লেখেনি৷ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে তো? নির্বাচন কমিশন তো সেই ব্যবস্থা নিচ্ছে না৷

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির কারণেও এতদিন দুদক সরাসরি গ্রেফতার করতে পারেনি৷ যদি উচ্চ আদালতে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রায় হয়েছে৷ বর্তমানে এই রায় স্থগিত আছে৷ ফলে আমলারা দুর্নীতি করেও কী সুরক্ষা পাচ্ছেন না?

দুদক আইনে সরকারি কর্মচারী সুরক্ষা দেওয়ার জন্য একটা বিধান করা হয়েছিল সত্যি৷ উচ্চ আদালত অনেক আগেই তো এটা বাতিল করে দিয়েছে৷ যদিও এটা স্থগিত আছে৷ কিন্তু দুদক ঘুস-দুর্নীতির অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করছে না? এই যে জেলের একজনডিআইজির বাসায় কয়েক লাখ টাকা পাওয়া গেল তাকে গ্রেফতার করেনি? করেছে তো৷ আমার মনে হয় না এখানে দুদকের হাত বাঁধা আছে৷ কয়েকদিন আগে একজন যুগ্ম সচিবের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হল৷ এখানে দুদকের কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে তাদের কোর্টে যাওয়া উচিত৷ আমি চাই প্রতিবন্ধকতা না থাকুক৷ এই প্রতিবন্ধকতা কাটাতে অন্য সকলেসহ দুদককে সক্রিয় হতে হবে৷

আমলাতন্ত্রে বিশৃঙ্খলা আছে বলে মনে হচ্ছে না? থাকলে কীভাবে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব?

আমি মনে করি না, বিশৃঙ্খলা আছে৷ যারা পরিচালনা করছে তাদের কারণে যদি কোনো বিশৃঙ্খলা হয় সেটার কারণে এই দোষটা আমলাদের উপর দেওয়া হলে আমার মনে হয় অন্যায় হবে৷ আমলাতন্ত্র একটি সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠান৷ তাদের বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে যায় উপরে যারা রাজনৈতিক নেতৃত্ব থাকে তারা৷ তারা নিজেদের দলের পক্ষে আমলাদের দিয়ে কাজ করাতে চায়৷ সবাই এটা চাইতে গিয়ে শৃঙ্খলা নষ্ট করে৷ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমলাতন্ত্র নিরপেক্ষ এবং সুশৃঙ্খল৷

আমলাদের অনেকের আচরণই তো রাজনৈতিক নেতাদের মতো হয়ে যাচ্ছে?

দোষটা দিতে হবে যারা করাচ্ছে তাদের৷ একজন নির্বাচন কমিশনার বললেন, ডিসি-এসপিরা মন্ত্রীদের এমপিদের কথায় কাজ করছেন৷ ওই নির্বাচন কমিশনার সাহেব এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন৷ এসব অফিসারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যায়৷ আর বিভাগীয় ব্যবস্থা তো নেওয়া যায়ই৷ উনি কিন্তু কোনটাই নেননি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ