স্বপ্নের শহর ভেনিস, যেখানে রাস্তার বদলে খাল, যে খালে চলে ভেনিসের অতি নিজস্ব নৌকা, যার নাম গন্ডোলা৷ কেমন লাগে সেই গন্ডোলার মাঝি হতে?
বিজ্ঞাপন
ভেনিসে যারা গন্ডোলা চালায়, তাদের বলে গন্ডোলিয়ার৷ একাদশ শতাব্দী থেকে রয়েছে চলে আসছে এই পেশা৷ ছই দেওয়া গন্ডোলায় চড়ে বড়লোকেরা ভেনিসের খালপথে এদিক সেদিক যেতেন৷ মালপত্রও বহন করা হতো এই গন্ডোলা দিয়ে৷ একসময়ে ভেনিসে নাকি দশ হাজার গন্ডোলা ছিল৷ আজ সেখানে বড়জোর পাঁচশ, তা-ও টুরিস্টদের কল্যাণে৷
কানাল গ্রান্দে বা বড় খাল৷ ওপরে সুবিখ্যাত রিয়াল্টো সাঁকো, নীচে লুচিয়ানো পেলিচিওলির গন্ডোলা৷ লুচিয়ানো পেলিচিওলি ২৫ বছর ধরে গন্ডোলার মাঝি৷ তাঁর কথায়, ‘‘সুপ্রভাত, সিনিওরা৷ ভাড়া পড়বে আশি ইউরো৷'' গন্ডোলায় চড়ে ৪৫ মিনিট বেড়ানোর ভাড়া৷
গন্ডোলার মাঝি
02:35
গন্ডোলার মাঝি হওয়া সহজ নয়, নিয়মকানুন খুব কড়া৷ লাইসেন্স পাওয়া গন্ডোলিয়াররা সকলেই একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, যার পাঠক্রমে ভেনিস শহরের ইতিহাস আর বিদেশি ভাষা শেখার ব্যবস্থা আছে৷লুচিয়ানো বলেন, ‘‘গন্ডোলার মাঝি হওয়ার স্বপ্ন থাকে অনেকেরই৷ মাত্র চারশ গন্ডোলিয়ারের এই পারমিট আছে৷ আমরা ভেনিসের অংশ৷ এই পেশায় যেন শহরটার সঙ্গে জড়িয়ে থাকি৷''
লুচিয়ানো দিনে ১৪ ঘণ্টা করে গন্ডোলা চালান যাত্রী আর খদ্দেরদের জন্য৷ তবে তিনি কোনোদিনই তাদের জন্য গান গাইবেন না৷ সেজন্য পেশাদার গাইয়েরা আছে৷ তারা যখন গায়, তখন লুচিয়ানো তাঁর নিজের গন্ডোলা থেকে সেই গান শোনেন...৷
কাগজের নৌকায় আনন্দভ্রমণ
ছোটবেলায় কাগজ দিয়ে নৌকা তো অনেকেই বানিয়েছেন৷ বড় হয়ে বানিয়েছেন? না, না, ছোট নয়৷ রীতিমতো যাত্রিবাহী নৌকা বানিয়েছেন কখনো? জার্মানির কয়েকজন শিক্ষার্থী কাগজের নৌকা বানিয়ে আনন্দভ্রমণও সেরে ফেলেছে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jasperse
ওরা ১০ জন
জার্মানির এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০ জন ছাত্র-ছাত্রী যা করে দেখালো, তা সত্যিই অবাক হওয়ার মতো৷ গত বছর থেকে ব্রেমারহাফেনের মেরিটাইম মিউজিয়ামে কাগজ আর কার্ডবোর্ড নিয়ে নৌকা বানানো শুরু করেছিল তারা৷ সঙ্গে অবশ্য নৌকা তৈরিতে পারদর্শী আক্সেল ডোরমানও ছিলেন৷ তাঁর তত্ত্বাবধানে ছাত্র-ছাত্রীরাই বেশির ভাগ কাজ করেছে৷ কষ্ট হয়েছে, সময়ও লেগেছে অনেক৷ তৈরি শেষ হলে ক্রেনে উঠিয়ে নৌকাটি নিয়ে আসা হয় নদীতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jasperse
‘নঙর ছাড়িয়া নায়ের দে রে দে মাঝি...’
নৌকা বানিয়ে রেখে দিলে তো হবে না৷ ওরা কাগজ আর কার্ডবোর্ড দিয়ে নৌকাটা বানিয়েছে তো ভ্রমণের আনন্দ উপভোগের জন্য৷ অবশেষে এলো সেই দিন৷ আক্সেল ডোরমান এবং মেরিটাইম মিউজিয়ামের কর্মকর্তা গেরো ক্লেমকে-কে সঙ্গে নিয়ে পাক্কা মাঝিদের মতো নৌকা ভাসালো দশজন কিশোর-কিশোরী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jasperse
তিন বছরের পরিকল্পনা
কাগজের নৌকা আগেও বানানো হয়েছে৷ তবে সেগুলো ছিল ছোট এবং স্বল্পস্থায়ী৷ সপ্তাহখানেক পানিতে রাখার পর আপনা-আপনিই নৌকার নানা অংশ ভিজে খসে খসে পড়তো৷ এবারের নৌকা সেগুলোর চেয়ে বড়৷ শুধু তাই নয়, ৩ দশমিক ২০ মিটার দীর্ঘ এই নৌকা টিকবেও বেশি দিন৷ গেরো ক্লেমকে আশা করছেন, তিন বছর অন্তত টিকবে এটি এবং মাঝে মাঝে এটা পানিতে ভেসেও বেড়াবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jasperse
যেভাতে তৈরি হলো....
প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা নৌকাটি তৈরি করাটা ছিল বড় রকমের চ্যালেঞ্জের মতো৷ আক্সেল ডোরমান এবং গেরো ক্লেমকে-র নেতৃত্ব এবং প্রেরণায় সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে সফলও হয়েছে গোর্চ-ফোক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jaspersen
৯ হাজার কাগজ আর ৮০টি বোর্ড
নৌকার কাঠামোর একটি অংশ অবশ্য কাঠ দিয়ে তৈরি৷ কাঠ একেবারেই ব্যবহার না করলে তো নৌকাটি মানুষের ওজনই নিতে পারতো না৷ যা হোক, ওই কয়েক টুকরো কাঠের বাইরে আর কী লেগেছে জানেন? খবরের কাগজের ৯ হাজারটি পৃষ্ঠা এবং ৮০ টুকরা ধূসর রঙের কার্ডবোর্ড৷ ছবিতে ক্লেমকে-র সঙ্গে কাগজে কাগজ জোড়া দিচ্ছে লিয়া৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jaspersen
কর্মযজ্ঞ
নৌকা তৈরির মূল কাজটা হয়েছে মেরিটাইম মিউজিয়ামের এই কক্ষে৷ এখানেই ৯ হাজার কাগজে আঠা লাগিয়ে লাগিয়ে দাঁর করানো হয় মূল কাঠামো৷ কাগজের ৩৪টি স্তর আঠা দিয়ে লাগিয়ে তৈরি করা হয় নৌকাটি৷ তৈরি শেষে নির্ধারিত দিনে ক্রেন দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ব্রেমারহাফেন শহরের নদীতে৷ আর তারপর? সেই আনন্দভ্রমণ!