ব্রিটেনের এক গবেষণা অনুযায়ী করোনা সংকটের কারণে লকডাউনের ফলে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে৷ সংক্রমণের আসল চিত্র পুরোপুরি স্পষ্ট না হলেও সরকারি পদক্ষেপ সফল হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যারা করোনা সংকটের কারণে কার্যত গৃহবন্দি হয়ে রয়েছে, তাদের মনে প্রশ্ন জাগছে – লকডাউনের ফলে কি আদৌ কোনো লাভ হচ্ছে? নাকি ঘর থেকে বের হয়ে সাবধানে থাকলেই চলতো? লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের গবেষণা অনুযায়ী লকডাউনের মাধ্যমে সত্যি অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে৷ মার্চের শেষ পর্যন্ত ইউরোপের ১১টি দেশে ৫৯,০০০ মানুষ প্রাণে বেঁচে গেছেন বলে গবেষণা রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে৷ তাছাড়া লকডাউনের কারণে ভাইরাসের প্রসার নাটকীয় মাত্রায় কমে গেছে৷ এমনকি স্বাস্থ্য পরিষেবা অবকাঠামোর উপর চাপ সত্ত্বেও লকডাউনের ফলে আখেরে উপকার হচ্ছে৷
ইউরোপে ইটালি ও স্পেনের মতো করোনা সংকটে জর্জরিত দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গবেষকরা দুই পরিস্থিতির মধ্যে তুলনা করেছেন৷ বর্তমান পরিস্থিতি এবং স্কুল-কলেজ, বড় অনুষ্ঠান ইত্যাদি বন্ধ না করলে কী হতো, সেই অবস্থার সম্ভাব্য পরিণাম খতিয়ে দেখা হয়েছে৷ গবেষণা অনুযায়ী স্পেনে প্রায় ১৬,০০০ মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে৷ ফ্রান্সে সেই সংখ্যা আড়াই হাজার৷ বেলজিয়ামে ৫৬০, জার্মানিতে ৫৫০, ব্রিটেনে ৩৭০ জন মানুষ প্রাণে বেঁচে গেছেন৷
গবেষণার রিপোর্টের ভিত্তিতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার একেবারে কমে আসা পর্যন্ত লকডাউন চালিয়ে যাবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ এভাবে আরও মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে৷ বিশ্বের বাকি অংশে লকডাউনের ফলে কত মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে, সে বিষয়ে এখনো কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় নি৷
লন্ডনের গবেষকদের মতে, করোনা সংকটের ক্ষেত্রে সংক্রমণের মাত্রা সরকারি হিসেবের তুলনায় বাস্তবে অনেক বেশি হতে পারে৷ তাঁদের ধারণা, ২৮শে মার্চ পর্যন্ত সম্ভবত জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের শিকার হয়েছে৷ ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার সম্পর্কে পরিসংখ্যান বর্তমানে নিখুঁত নয় বলে ধরেন নেওয়া হচ্ছে৷ তা সত্ত্বেও লকডাউনের ইতিবাচক প্রভাব খাটো করে দেখা যায় না৷
এসবি/কেএম (এএফপি/রয়টার্স)
করোনা ভাইরাস: ইউরোপের কোথায় কেমন ‘লকডাউন’?
কোভিড-১৯ যেন ছড়াতে না পারে, সেজন্য ইউরোপের সর্বত্র জনজীবনের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে৷ কিন্তু সেই কড়াকড়িগুলো কেমন? চলুন দেখে নিই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Ben Ari
ইটালি
ইটালিতে গত ৯ মার্চ সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়৷ এর ছয় কোটি জনগোষ্ঠীকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়৷ অন্যথায় চারশ’ থেকে তিন হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা গুণতে হবে৷ সুপারমার্কেট, ব্যাংক, ফার্মেসি ও পোস্ট অফিস ছাড়া বাকি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়৷ আপাাতত এই ঘোষণা ৩ এপ্রিল পর্যন্ত কার্যকর থাকলেও তা ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে৷
ছবি: Imago Images/Zuma Wire
স্পেন
গত ১৪ মার্চ সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে৷ দেশের চার কোটি ৬০ লাখ মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হয়৷ ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এই অবস্থা কার্যকর থাকবে৷ হাজার হাজার পুলিশ ও সেনাবাহিনি মোতায়েন করা হয়েছে৷ স্পেনও তার ইউরোপীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে সীমান্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে৷
ছবি: AFP/J. Jordan
ফ্রান্স
ফ্রান্সে ১৭ মার্চ লকডাউন ঘোষণা করা হয়৷ চলবে ১ এপ্রিল পর্যন্ত৷ কিন্তু বাড়ানো হতে পারে৷ ঘর থেকে বেরোতে হলে একটি ফর্ম পূরণ করে কারণ ব্যাখ্যা করতে হয়৷ দিনে একবার শরীরচর্চা করতে এক ঘন্টার জন্য একা বের হওয়া যাবে৷ এছাড়া ঘরের এক কিলোমিটারের মধ্যে হেঁটে আসা যাবে৷ না মানলে ১৩৫ ইউরো থেকে ৩৭০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা৷
ছবি: Getty Images/G. Souvant
জার্মানি
ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো জার্মানি তার ৮ কোটি জনগণের জন্য অত কড়াকড়ি আরোপ করেনি৷ তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে নিয়ম করে দিয়েছে, যেমন, ঘরের বাইরে ভিন্ন পরিবারের দু’জনের বেশি একসঙ্গে থাকতে পারবেন না৷ ২০ এপ্রিল পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা না মানলে কোনো কোনো রাজ্য ২৫ হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে৷
ছবি: DW/M. Müller
যুক্তরাজ্য
২৩ মার্চ লকডাউনের ঘোষণা দেয় যুক্তরাজ্য৷ চলবে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত৷ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহ বা যাদের অফিসে যেতেই হবে তারা বাইরে যেতে পারেন৷ তবে কোনর কাগজ দেখাতে হবে না৷ বড় আকারের জমায়েত বন্ধ রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/R. Pinney
অস্ট্রিয়া
অস্ট্রিয়াও কিছুটা শিথিল৷ ৯০ লাখ মানুষের দেশটিতে গত ১৬ তারিখ থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে, যা বলবৎ থাকবে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত৷ মানুষ জরুরি কাজে কিংবা শরীরচর্চা করতে ঘরের বাইরে যেতে পারবেন৷ তবে পাঁচ জনের বেশি একসঙ্গে থাকতে পারবেন না৷ অন্য দেশগুলোর মতো তারাও সব রেস্টুরেন্ট, বার এসব বন্ধ রেখেছে৷ কেউ নিষেধাজ্ঞা না মানলে ৩৬০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে৷
ছবি: AFP/H. Neubauer
বেলজিয়াম
গত ১৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল অব্দি লকডাউন ঘোষণা করে বেলজিয়াম৷ তবে তা আট সপ্তাহ বা এর বেশিও হতে পারে৷ এক কোটি ১৪ লাখ মানুষের দেশটিও ডাক্তার দেখানো, জরুরি কাজ, কিংবা হালকা শরীরচর্চা ছাড়া জনগণকে ঘরেই থাকতে বলেছে৷ রাস্তায় পুলিশ টহল দিচ্ছে৷ তারা নিয়ম না মানলে যে কাউকে জরিমানা করতে পারে৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
পর্তুগাল
১৯৭৬ সালে গণতন্ত্র ফেরত পাবার পর এই প্রথম জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে পর্তুগাল৷ ২ এপ্রিল পর্যন্ত থাকবে তা৷ জরুরি অবস্থার আওতায় সরকার সেনা মোতায়েনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামসহ বেশিরভাগ বিষয়ই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে৷ লোকজনকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে৷ ব্যাংক, ফার্মেসি ও খাদ্যদ্রব্যের দোকান খোলা রয়েছে, তবে রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷