গবেষকরা এক কৃত্রিম উপাদন আবিষ্কার করেছেন, যার মধ্যে রক্তের স্টেমসেল বৃদ্ধি পায়৷ ভবিষ্যতে লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যানসারের চিকিৎসায় এই পদ্ধতি ব্যবহার যেতে পারে৷ এমনই আশা বিজ্ঞানীদের৷
বিজ্ঞাপন
রক্তের স্টেমসেল শুধু অস্থিমজ্জায় বৃদ্ধি পায়৷ সেখানে এটি আবার বিভিন্ন ধরনের রক্তকোষের সৃষ্টি করে৷ যেমন রক্তে লোহিত ও শ্বেত কণিকা তৈরি করে৷ লোহিত কণিকা অক্সিজেন পরিবহণের কাজ করে৷ শ্বেতকণিকা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখাশোনা করে৷
গবেষকরা অনুকরণ করার চেষ্টা করছেন
অনেক বছর ধরে গবেষকরা স্বাভাবিক হাড়ের মজ্জা অনুকরণ করার চেষ্টা করে আসছেন৷ জার্মানির কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা এক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রসর হয়েছেন৷ তাঁরা এক ধরনের সচ্ছিদ্র উপাদান তৈরি করেছেন, যেখানে রক্তের স্টেমসেল কমপক্ষে চার দিন ধরে বৃদ্ধি পেতে পারে৷
স্বাভাবিক অস্থিমজ্জার কাঠামোটা বেশ জটিল৷ এ জন্য একে অনুকরণ করাও কঠিন৷ এটির রয়েছে ত্রিমাত্রিক রন্ধ্রযুক্ত স্থাপত্য৷ অনেকটা বাথ-স্পঞ্জের মতো৷ এর মাঝখানে প্রোটিন থাকে৷ এই স্পঞ্জের রয়েছে নির্দিষ্ট আয়তন৷ আছে অনেক ধরনের কোষ, যেগুলি পরস্পর পরস্পরকে প্রভাবিত করে৷ রাসায়নিক মেসেঞ্জার ছড়িয়ে দেয়৷ এইসব একত্রে স্টেমসেলকে বিভক্ত হতে ও বৃদ্ধি পেতে প্রণোদিত করে৷
‘ধূমপান বর্জন করুন, ক্যানসারকে দূরে রাখুন’
ফুসফুসের ক্যানসার রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ জনই ধূমপায়ী
ছবি: Fotolia/Fotowerk
ধূমপান – বিষপান
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, সে কথা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা৷ তবে ধূমপান স্বাস্থ্যের ঠিক কতটা ক্ষতি করে, তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই৷ জার্মানির ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র ধূমপান করার কারণেই বছরে ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়৷ আর বছরে ৩,৩০০ জন মারা যায় ধূপায়ীদের কাছাকাছি থেকে সিগারেটের ধোঁয়া গ্রহণ করার কারণে৷
ছবি: AP
ফুসফুসের ক্যানসার
ধূমপান শরীরের যে কোনো অঙ্গেরই ক্ষতি করে, তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে ফুসফুস এবং হার্ট বা হৃদযন্ত্রের৷ ফুসফুসের ক্যানসার রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ জনই ধূমপায়ী৷
একদিনে দুই কোটিরও বেশি সিগারেট
জার্মানিতে মানুষ দিনে প্রায় আড়াই কোটি সিগারেট খায়৷ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে শতকরা ২৫ জন নিয়মিত ধূমপান করেন, মাঝে মাঝে করেন শতকরা চারজন৷ তার মধ্যে শতকরা ৩৫ জন পুরুষ এবং ২২ জন নারী৷ জার্মানিতে সবচেয়ে বেশি ধূমপান করেন কনস্ট্রাকশন বা নির্মাণ ক্ষেত্রের শ্রমিক, বাস বা ট্রাক চালক৷ আর সবচেয়ে কম ধূপায়ীদের মধ্যে রয়েছেন ডাক্তার, ফার্মেসি কর্মী এবং শিক্ষক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মহিলা ধূমপায়ীদের সংখ্যা বাড়ছে
গত ২০ থেকে ৩০ বছরে জার্মানিতে মহিলাদের মধ্যে ধূমপান করার প্রবণতা অনেক বেড়েছে৷ জার্মানিতে মহিলাদের গড় আয়ু পুরুষদের চেয়ে বেশি৷ তবে এখন মহিলারা যেভাবে ধূমপান করেন, তা অব্যাহত থাকলে শীঘ্রই মহিলাদের গড় আয়ু পুরুষদের সমান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷
ছবি: Picture-Alliance/KEYSTONE
সিগারেটের বিজ্ঞাপন অনেকটা দায়ী
কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ধূমপান উপভোগ করার চেয়ে স্মার্টনেস দেখানোই যেন বড় কথা৷ তবে সিগারেটের বিভিন্ন বিজ্ঞাপনই এদের ধূমপান করতে প্রভাবিত করে থাকে৷ সুখের কথা, জার্মানিতে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সম্মিলিত প্রচেষ্টা
ধূমপান ছেড়ে দেওয়া সহজ নয়, তবে চেষ্টা করলে পারা যায়৷এর জন্য রয়েছে নানা ওষুধপত্র,গ্রুপ থেরাপি৷মনোবিজ্ঞানী, গবেষক এবং কেমনিৎস শহরের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ধূমপান বিরোধী কেন্দ্রের প্রধান প্রোফেসার স্টেফান ম্যুলিশ বলেন, ধূমপান ছাড়ার ২৪ ঘণ্টা পর থেকেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমতে শুরু করে৷তিনি একটি গ্রুপ থোরাপিও পরিচালনা করেন৷তাঁর মতে, ‘একা চেষ্টার চেয়ে গ্রুপের মাধ্যমে ধূমপান ছাড়ার চেষ্টায় সফলতা বেশি’৷
ছবি: Privat
ঘরের বাইরে ধূমপান
বেশ কয়েক বছর থেকে জার্মানিতে বিভিন্ন জায়গায় ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷বিভিন্ন রেস্তোরাঁ বা অফিস-আদালতের মতো ডয়চে ভেলেতেও অফিস ঘরে ধূমপান পুরোপুরি নিষিদ্ধ৷ তবে ঘরের বাইরে, অর্থাৎ বারান্দায় প্রায়ই কর্মীদের ধূমপান করতে দেখা যায়, এমনকি বাইরের তাপমাত্রা মাইনাস ১০ ডিগ্রি হলেও৷
ছবি: picture-alliance/Coleman/Photoshot.
প্রোফেসর ড. এলিজাবেথ পট
‘ধূমপায়ীরা মাত্র কয়েক সপ্তাহ ধূমপান থেকে বিরত থাকুন৷ নিজেরাই বুঝতে পারবেন যে আপনাদের ফুসফুস আরো ভালোভাবে কাজ করছে’৷ একথা বলেছেন প্রোফেসর ড. এলিজাবেথ পট, যিনি ১৯৮৬ সাল থেকে জার্মানির স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় দফতরের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছেন৷
ছবি: dapd
শেষ কথা
মানুষ তার আয়ু নিজেই নির্ধারণ করতে পারেনা তা ঠিক, তবে ধূমপান করে ইচ্ছে করে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবারও কোনো যুক্তি নেই৷ শুধু তাই নয়, যারা ধূপায়ীদের আশেপাশে থাকে তারা আক্রান্ত হয় স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যায়৷ আর সন্তানসম্ভবা মায়েরা ধূমপানের সময় ভাবুন তাদের অনাগত শিশুর স্বাস্থ্যের কথা৷ এমনটাই বলেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Fotolia/Fotowerk
9 ছবি1 | 9
কার্লসরুহের ইন্সটিটিউট ফর টেকনোলজির গবেষক কর্নেলিয়া লি থেডিক ও তাঁর সহকর্মীরা এ পর্যন্ত অস্থিমজ্জা ও স্টেমসেলের পছন্দের পরিবেশ সম্পর্কে যা জানা গেছে, তা তাঁদের গবেষণার অন্তর্ভুক্ত করেছেন৷ এই প্রসঙ্গে কর্নেলিয়া লি থেডিক বলেন, ‘‘আমরা চাই কৃত্রিম অস্থিমজ্জা সুলভ মূল্যের উপাদান দিয়ে তৈরি করতে৷ যা যে কোনো জীববিজ্ঞানীর ল্যাবরেটরিতে থাকে৷''
বর্তমানে মানুষের (দাতার) অস্থিমজ্জা বা রক্ত থেকে সুস্থ স্টেমকোষ সংগ্রহ করা হয়৷ ভবিষ্যতে রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করার জন্য গবেষণাগারে এটি প্রস্তুত হতে পারে৷
ড্রেসডেন ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের মার্টিন বর্নহয়সার বলেন, ‘‘খুব অল্প রক্তের স্টেমসেল থেকেও বয়স্ক রোগীর জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক স্টেমসেল তৈরি করা যেতে পারে৷ শিশুর জন্মের পর নাভিরজ্জুর রক্ত থেকেও স্টেমসেল তৈরি করা যায়৷ এরপর এটি জমাট করে বিশেষ রক্ত ভাণ্ডারে রেখে দেওয়া যেতে পারে৷
কৃত্রিম অস্থিমজ্জার ক্ষেত্রে পরিধিটা আরো বিস্তৃত৷ ‘‘আমাদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হলো, একটি উপযোগী কাঠামো তৈরি করে সেখানে রক্তের স্টেমসেলগুলি ঢুকিয়ে দেওয়া৷ যেন ঐ জায়গায় তারা বাড়তে পারে৷ আমরা পরে সেই স্টেমসেলগুলিকে তুলে এনে রোগীর প্রয়োজনে লাগাতে পারি'', বলেন গবেষক লি থেডিয়েক৷
তবে এই গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে৷ এই পদ্ধতি থেকে উপকার পেতে রোগীদের কমপক্ষে আরো ১৫ বছর লাগবে৷''