সুইজারল্যান্ডে ল্যাবে তৈরি হচ্ছে চকলেট৷ আর সেই চকলেটের স্বাদ নাকি প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত চকলেটের মতোই৷ বৈশ্বিক উষ্ণতাসহ নানা কারণে প্রাকৃতিকভাবে কোকোর উৎপাদন কমছে৷ তাই ট্যাংকে কোকোর উৎপাদন বাড়ানো চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা৷
সুইজারল্যান্ডে ল্যাবে তৈরি হচ্ছে চকলেটছবি: picture-alliance/Photocuisine
বিজ্ঞাপন
চকলেট! অপ্রতিরোধ্য চকলেট! কে এটা ভালোবাসে না? তবে চাহিদা যেমন বাড়ছে, চকলেট উৎপাদনের প্রতি হুমকিও তেমন বাড়ছে৷
প্রথমে চলুন আরেকটি উদ্ভাবনের কথা বলি: ট্যাংকে বেড়ে ওঠা চকলেট৷ ঠিকই শুনেছেন৷ ক্রিস্টিয়ান শাওবের স্টার্টআপ ফুড ব্রুয়ার এখানে কোকো তৈরি করেন৷ ট্যাংকে রয়েছে পানি, চিনি এবং পুষ্টি উপাদান৷ আরো রয়েছে ক্রমবর্ধমান কোকো কোষ সংস্কৃতি৷
ফুড ব্রুয়ারের প্রধান বিজ্ঞানী আদ্রিয়ানা গ্যাজেগো বলেন, ‘‘আসলে আপনি কোষের টুকরোগুলো বিচ্ছিন্ন করে সেগুলোকে সেরা পুষ্টিকর পরিবেশে বৃদ্ধি করতে পারেন৷ সেগুলো শুধু মনে করে যে সেগুলো উদ্ভিদ কোষ এবং আপনি যখন সেগুলোকে উপযুক্ত পরিবেশ দেবেন তখন বৃদ্ধি পেতে থাকবে৷ ফুড ব্রুয়ারে আমরা এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়েছি৷ আমরা কোষগুলোকে সেরা পরিবেশ দেই এবং সেগুলোকে বাড়তে থাকে৷''
ল্যাবে তৈরি হবে চকলেট?
04:07
This browser does not support the video element.
উৎপাদন প্রক্রিয়ার শেষের দিকে ট্যাংকে থাকা তরল শুকানো এবং ভাজা হয়৷ আর তার ফলাফল কোকো পাউডার৷ বড় আকারের চাষাবাদ বা পরিবহনের ঝামেলা ছাড়াই এই প্রযুক্তি যেকোনো ধরনের কোকো তৈরি করতে পারে৷ ক্রিস্টিয়ান শাওবের দাবি, এভাবে উৎপাদিত আর প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত চকলেটের মধ্যে পার্থক্য নেই৷
ক্রিস্টিয়ান শাওব বলেন, ‘‘এটা অপ্রাকৃতিক নয়৷ বরং খুবই প্রাকৃতিক৷ আমাদের পন্থায় উৎপাদিত কোকোও আসল, প্রকৃত কোষ৷ সেগুলো সুস্বাদু৷ তাছাড়া এগুলো দূষিত নয়৷ এসবে কোনো ভারী ধাতু নেই৷ এগুলো ভালো এবং দূষণমুক্ত৷ ঐতিহ্যগতভাবে ক্লাসিক খামারে উৎপাদিত কোকোর চেয়ে এগুলো ভালো মনে করি৷''
কিন্তু ভোক্তারা কী বলে জানতে চাই আমরা৷ আমরা সুইজারল্যান্ডের রাস্তায় যেখানে একজন মানুষ বছরে গড়ে নয় কেজি চকলেট গ্রহণ করেন৷ তারা কি ল্যাবে তৈরি চকলেট কিনবেন?
এক চকলেটপ্রেমী বললেন, ‘‘ভালো দামের চকলেটের স্বাদ ভালো হতে হবে৷''
আরেকজনের কথায়, ‘‘আসলে আমি কিনবো না৷''
উনবিংশ শতাব্দীতে মিল্ক চকলেটের উদ্ভাবনের পর চকলেটের কেন্দ্রে পরিনত হয় সুইজারল্যান্ড৷ সেখানে বিভিন্ন উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে ওঠে৷ বিশ্বসেরা ব্র্যান্ডগুলো এখনো সুইজারল্যান্ডভিত্তিক৷ এখানে উৎপাদিত চকলেট গোটা বিশ্বে রপ্তানি হয়৷
অবশ্যই সুইজারল্যান্ডে কোকো বীজ উৎপাদন হয় না৷ মূলত ওয়েস্ট আফ্রিকা থেকে আমদানি করা হয়৷ বিশ্বের সত্তর শতাংশ কোকো সেখানে উৎপন্ন হয়৷ রেইনফরেস্টের অনেক অংশ পরিষ্কার করে ফেলা হয়েছে৷ বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে আবাদযোগ্য জমি কমে যাওয়ায় এবং মজুরি কম হওয়ায় অনেক কোকো কৃষক এই ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন৷
ফুড ব্রুয়ার মনে করে, চকলেটের ভবিষ্যত পডে নয়, ট্যাংকে৷ তারা একই এলাকায় অল্প খরচে ৫০ হাজার গুণ বেশি কোকো উৎপাদনের আশা করছে৷ তবে সেই প্রযুক্তি এখনো অনুমোদন পায়নি৷
ফুড ব্রুয়ারের সহপ্রতিষ্ঠাতা ক্রিস্টিয়ান শাওব বলেন, ‘‘পণ্যটি এখন খুব ভালো, ফলে আমাদের যেটা করত হবে তাহচ্ছে আমাদের এটা সহজলভ্য করতে হবে৷ উৎপাদন বাড়াতে হবে৷ আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা মজাদার এই চকলেট পর্যাপ্ত উৎপাদন করতে পারবো৷ এবং সেগুলো বিক্রি হবে৷ আমি মনে করি আমরা এখন যা সরবরাহ করতে পারছি তারচেয়ে বাজারে চাহিদা বেশি৷''
আপনি কি মনে করেন? উদ্ভাবন কি আমাদের প্রিয় চকলেট বাঁচাতে পারবে? এবং ট্যাংকের চকলেট কি আসল চকলেট?
প্রতিবেদন: গ্যনা কেটেলস/এআই
সুইজারল্যান্ড কেনো যাবেন?
সুইজারল্যান্ডের বিশেষত্ব কী? এর বিশেষত্ব এক কথায় বলে শেষ করা যাবে না৷ হাইডি থেকে আল্পস, চকলেট থেকে টানেল একনজরে দেশটির বিশেষত্ব জেনে নিন৷
ছবি: picture alliance/Prisma/C. Sonderegger
পাহাড়ের ডাক
আল্পস ঘেরা সুইজারল্যান্ডের যেদিকে তাকানো যায়, মনে হয় যেনো পোস্টকার্ডে আঁকা ছবি৷ গরুদের চারণভূমিগুলো ভীষণ সুন্দর৷ হাইকারদের জন্য স্বর্গ হিসেবে পরিচিত সুইজারল্যান্ডে ঘুরতে গেলে ইয়ুংফ্রাও, মোনশ বা আইগের চূঁড়া দেখতে যাওয়া উচিত৷ আর আছে ‘ম্যাটারহর্ন’: উচ্চতা ৪ হাজার ৪৭৮ মিটার, বিশ্বে যে পাহাড়ের ছবি সবচেয়ে বেশিবার তোলা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/Flowerphotos/M. Peuckert
সুউচ্চ এবং দ্রুতগামী
ছোট্ট এই দেশটিতে ১৮শ’রও বেশি রেললাইন রয়েছে৷ সবচেয়ে বিখ্যাত হল সেরমাট থেকে সেন্ট মরিৎসগামী গ্ল্যাসিয়ার এক্সপ্রেস৷ বিশ্বের অন্যতম সুন্দর রেলপথ এটি৷ ২০০৮ থেকে এটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত হয়েছে৷
ছবি: swiss-image.ch/Jeroen Seyffer
গরু এবং গরুর ঘণ্টা
‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবিটির কারণে সুইজারল্যান্ডের এই গরুর ঘণ্টা ভারতীয় উপমহাদেশে এখন সুপরিচিত৷ এই দেশে সুন্দর গরুর প্রতিযোগিতা, গরুর দৌড় প্রতিযোগিতাসহ গরুকে ঘিরে নানা আয়োজন হয়ে থাকে এবং গরুকে কোনো রকম আঘাত করা যাবে না৷
ছবি: picture-alliance/H. Lade Fotoagentur GmbH
পনীরের দেশ
সুইজারল্যান্ডকে পনীরের দেশ বলা যেতে পারে৷ বছরে সেখানকার মানুষ ২০ হাজার টন চিজ বা পনীর খায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone/P. Klaunzer
আলপাইন সাউন্ডস
আল্পহর্ন এখন সুইজারল্যান্ডের জাতীয় প্রতীক হিসেবে বিবেচিত৷ কাঠের তৈরি এই বাঁশি থেকে যে শব্দ বের হয় তা ১০ কিলোমিটার দূর থেকে শোনা যায়৷ বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা আল্পহর্ন এর দৈর্ঘ্য ৪৭ মিটার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Pinauda
বন্ধুত্বপূর্ণ এবং ভালো প্রকৃতির কুকুর
আল্পসের সবচেয়ে সুপরিচচিত কুকুর হল সেন্ট বার্নার্ডস৷ এদের মধ্যে ব্যারি নামের একটু কুকুর তারকা খ্যাতি পেয়েছে৷ ১৮১৪ সালে মৃত্যুর আগে কুকুরটি অন্তত ৩০ জনের জীবন বাঁচিয়েছে৷ বার্নের ন্যাচরাল হিস্ট্রি জাদুঘরে গেলে ব্যারিকে দেখতে পারবেন আপনি৷
ছবি: iriskuerschner.com
হাইডির বিশ্ব
সুইজারল্যান্ডের এই মেয়েটির গল্প পুরো বিশ্বের কাছে পরিচিত৷ মাইয়েনফেল্ড গ্রামের মেয়ে হাইডিকে নিয়ে উপন্যাসটি লিখেছিলেন ইয়োহানা স্পিরি, যা এখন পর্যন্ত ৫ কোটি কপি বিক্রি হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images GmbH/De Meester, J.
চকলেট
সুইজারল্যান্ডের চকলেট পৃথিবী বিখ্যাত এর মিষ্টতা এবং মসৃণভাবের জন্য৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images/J. Kruse
সুইস আর্মি নাইফ
১৮৯৭ সালে প্রথম তৈরি হয় সুইস ছুড়ি৷ তখন এটি ছিল ‘অফিসার্স পকেট নাইফ’৷ আর এখন সুইজারল্যান্ডের সর্বত্র পাওয়া যায় এই চাকু৷ এমনকি গোলাপি রঙের এবং ইউএসবি স্টিকযুক্ত৷
১৮৯৭ সালে প্রথম তৈরি হয় সুইস ছুড়ি৷ তখন এটি ছিল ‘অফিসার্স পকেট নাইফ’৷ আর এখন সুইজারল্যান্ডের সর্বত্র পাওয়া যায় এই চাকু৷ এমনকি গোলাপি রঙের এবং ইউএসবি স্টিকযুক্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kembowski
টানেলের দেশ
সুইজারল্যান্ডে ১৩শ’রও বেশি টানেল রয়েছে৷ যেগুলো দিয়ে ডেনমার্ক থেকে সিসিলি অব্দি যাতায়াত করা যায়৷ গটহার্ড বেস টানেল ৫৭ কিলোমিটার লম্বা এবং বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ রেলওয়ে টানেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Flueeler
সুইজারল্যান্ড আছে অন্যখানেও
ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে সুইজারল্যান্ডের মত দৃশ্য আছে এমন জায়গাগুলোর নাম রাখা হয় দেশটির নামে৷ যেমন: জার্মানিতে সাক্সন সুইজারল্যান্ড (ছবিতে দেখা যাচ্ছে) এবং যুক্তরাষ্ট্রে লিটল সুইজারল্যান্ড৷ বর্তমানে বিশ্বের ২০০টিরও বেশি এলাকা আছে সুইজারল্যান্ডের নামে৷