২০ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর ইডি-র হাতে গ্রেপ্তার হলেন পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার দিনভর তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সঙ্গে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চলেছে। গভীর রাতে তাকে বাড়ি থেকে সিজিও কমপ্লেক্সে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যায় ইডি। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। বাড়ি থেকে বেরনোর সময় বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।
রেশন বন্টন মামলায় ইডি গ্রেপ্তার করেছে জ্যোতিপ্রিয়কে। এখন বনমন্ত্রী হলেও দীর্ঘদিন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ইডি জানিয়েছে, মন্ত্রীর বাড়ি থেকে রেশন বন্টন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি মিলেছে। তারই ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ইডি জানিয়েছে, এর আগে রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল রাকিবুর রহমান নামে জনৈক ব্যক্তিকে। তাকে জেরা করেই এই মামলায় নাম উঠে আসে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। সেই সূত্রেই বৃহস্পতিবার ভোরে মন্ত্রীর সল্টলেকের তিনটি বাড়িতে তল্লাশি অভিযান শুরু করে ইডি। প্রায় ২০ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি অভিযান এবং জেরার করার পর রাত তিনটে নাগাদ জ্যোতিপ্রিয়কে নিয়ে যাওয়া হয় ইডি দপ্তরে।
ইডির বিরুদ্ধে অভিষেক, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাম, চাকুরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ
কলকাতায় রাজভবনের বাইরে প্রতিবাদ দেখাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ইডি-সিবিআই ও অভিষেকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখালো সিপিএম। তার কিছুটা দূরেই হবু শিক্ষকরা প্রায় তিন বছর ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
রাজভবনের সামনে
কলকাতায় রাজভবনের সামনে মঞ্চ তৈরি করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লিতেই তিনি রাজভবন অভিযানের ঘোষণা করেছিলেন। বুধবার সেই অভিযানও করেন। কিন্তু রাজ্যপাল তখন কলকাতা ছিলেন না। অভিষেক ঘোষণা করেন, রাজ্যপাল না আসা পর্যন্ত তারা ওখানেই অবস্থান করবেন। দিল্লিতে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে হেনস্থা ও ইডি-সিবিআই যেভাবে কাজ করছে, তার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বন্যা দেখতে রাজ্যপাল
অভিষেক যখন রাজভবন অভিযান করছেন, তখন রাজ্যপাল বন্যা পরিস্থিতি দেখতে উত্তরবঙ্গে। সেখান থেকে তিনি দিল্লি চলে যান। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত তিনি কলকাতা ফেরেননি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অভিষেক বিক্ষোভে
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এখনো বিক্ষোভ দেখিয়ে যাচ্ছেন। রাতে তিনি বিক্ষোভস্থলের পিছনে চলে যান। বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ তিনি আবার মঞ্চে আসেন। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা না করে তিনি যাবেন না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রচুর পুলিশ মোতায়েন
বিক্ষোভস্থলে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে রাজভবনের সামনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কী করে মঞ্চ করে বিক্ষোভ দেখানোর অনুমতি দেয়া হলো, সে প্রশ্নও তুলছেন বিরোধীরা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অভিষেকের মঞ্চে নেতা-মন্ত্রী
অভিষেকের মঞ্চে তৃণমূলের প্রচুর নেতা-মন্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে। সেখানে গান-বাজনাও হচ্ছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কাছেই শিক্ষক-প্রার্থীদের বিক্ষোভ
অভিষেক যেখানে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তার থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে গত প্রায় তিন বছর ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের কথা তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীরা অবশ্য কানে নেন না বলে বিক্ষোভকারীদের দাবি। তারা সকলেই শিক্ষক হওয়ার পরীক্ষায় পাস করেছেন। কিন্তু দুর্নীতির জন্য চাকরি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এখনো বিক্ষোভ দেখিয়ে যাচ্ছেন
তারা এখনো বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। হাতে পোস্টার। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন তারা। তাদের বক্তব্য, রাজ্যের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে অভিষেক দিল্লি গিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, কলকাতায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তারাও তো এতদিন ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। কিন্তু তাদের কথা কেউ শোনে না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিপিএমের প্রতিবাদ
সিপিএমের নেতা সুজন চক্রবর্তীর দাবি, অন্য রাজ্যে ইডি-সিবিআই দুর্নীতির নামে বিরোধী দলের নেতাদের হেনস্থা করছে। আর পশ্চিমবঙ্গে তারা দুর্নীতির চাঁইদের ছেড়ে রাখছে। সেজন্যই সিজিও কমপ্লেক্সে অভিযানের ডাক দিয়েছিল সিপিএম। সেখানে কর্মী-সমর্থদের নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় সিপিএম।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিপিএমের প্রচার
এই বাম দল বেশ কিছুদিন বলো বিজেমূলের তত্ত্ব সামনে এসেছে। এর অর্থ, বিজেপি ও তৃণমূল আসলে গোপনে হাত মিলিয়ে চলেছে। বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, রবীন দেবরা সমাবেশে এই অভিযোগই করেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পশ্চিমবঙ্গে ইন্ডিয়া জোট নয়
সিপিএম আগেই জানিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে তারা তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাবে না। এখানে বিরোধীদের জোট হবে না। ভোটের আগে তারাও দুর্নীতির অভিযোগকে হাতিয়ার করে রাস্তায় নেমে পড়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
10 ছবি1 | 10
শুধু জ্যোতিপ্রিয় নয়, এদিন একই সঙ্গে মন্ত্রীর আপ্ত সহায়ক অমিত দে-র বাড়িতেও তল্লাশি অভিযানে যায় ইডি। তার একাধিক বাড়িতে রেড করা হয়। তবে দিনের বেলা অমিত বাড়ি ছিলেন না। বিকেলে ফেরেন। বিকেলের পরেই তার বাড়িতে তল্লাশি শুরু হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ''জ্যোতিপ্রিয় সুগারের রোগী। ওর যদি কিছু হয়, তাহলে ইডি এবং বিজেপির বিরুদ্ধে এফআইআর করব।'' মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, তল্লাশির নামে বাড়িতে ঢুকে ইডি চিনি, ঘিয়ের শিশি উল্টে দেয়। নারীদের শাড়ি, জামা কাপড়ের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। দৃশ্যত জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান নিয়ে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে বিজেপি নেতা সৌরভ শিকদার ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''জ্যোতিপ্রিয় যে রেশন দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আমরা অভিযোগ করেছি। এতদিনে তাকে গ্রেপ্তার করা হলো। উনি তো ত্রাণের জিনিসও চুরি করেছেন। তখন কোথায় ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী?''
শুক্রবার কলকাতা-সহ জেলায় জেলায়কার্নিভাল। এই দিন সমস্ত বড় দুর্গাপুজোর প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে। কলকাতার কার্নিভালে উপস্থিত থাকার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। সেই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেপ্তার নিয়ে মমতা কিছু বলতে পারেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে, এদিন সকালে ইডির তল্লাশি শুরু হওয়ার পর জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়ির সামনে পৌঁছে গেছিলেন তৃণমূলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা। কিন্তু ইডি তাদের কাউকেই বাড়ির ভিতর ঢুকতে দেয়নি। রাতের দিকে বাড়ির সামনের ভিড় সরাতে ব্যারিকেডও লাগিয়ে দেওয়া হয়।