1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সমুদ্রের সৌন্দর্য

Debarati Guha২৬ জুন ২০১২

স্বচ্ছ নীল সমুদ্র৷ যার কাছে এসে দাঁড়ালে একেবারে নীচ অবধি দেখা যায়৷ আর সেখানেই বাস করে বর্ণিল এক ধরণের জীব৷ সূর্যের আলো ঠিকরে পড়লে আরো সুন্দর, আরো রহস্যময় হয়ে ওঠে এইসব ‘সাগর রত্ন’৷

ছবি: Fotolia/vlad61_61

আমাদের এই পৃথিবীপৃষ্ঠে অহরহ ঘটে চলেছে নানা ঘটনা৷ তাদের নিয়েই ব্যস্ত আমরা৷ অথচ ভূ-পৃষ্ঠ থেকে অনেক নীচে, সাগর-মহাসাগরের তলায় যে একটা আশ্চর্য, রহস্যময় জগত আছে – তার কথা আমরা যেন ভুলেই গেছি৷ এখানে মানুষ বসবাস না করলেও, আছে বিচিত্র সব প্রাণী, হরেকরকম জীব৷ আর তাদেরই অন্যতম ‘কোরাল' বা প্রবাল – এক ধরণের অমেরুদণ্ডী প্রাণী৷

মজার ব্যাপার, বিশ্বে যখন মানুষে-মানুষে দ্বন্দ্ব, মারামারি, হিংসা...তখন বর্ণিল এই প্রাণীগুলো শুধু সারাটা জীবন নয়, মরণের পরও সংঘবদ্ধ হিসেবে বাস করে৷ সমাজের একটা অংশ হিসেবেই থেকে যায়৷ তবে এখানেই শেষ নয়, মৃত কোরাল'এর দেহ স্তূপাকারে জমা হয়ে নানা আকৃতির কাঠামো তৈরি করে৷ আমরা যাকে বলি ‘কোরাল রিফ' বা প্রবাল দ্বীপ৷ অবশ্য কোরাল রিফ গঠন নির্ভর করে সাগরতলের পরিবেশের ওপর৷ বিশেষ করে তাপমাত্রা ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীবের উপস্থিতিই জানান দেয় যে সেখানে এই ‘সাগর রত্ন' আদৌ তৈরি হবে কিনা৷

কোরাল নিয়ে গবেষণা করছেন জার্মান গবেষক প্রফেসার মিশায়েল শুলৎস৷ তিনি বলেন, ‘‘কোরাল কার্বোনেট অফ লাইম দিয়ে তৈরি৷ এছাড়া অন্যান্য প্রাণীর অংশ, এমনকি শৈবালও দেখা যায় কোরাল'এ৷''

ছবি: AP

প্রফেসার শুলৎস জানান, ‘‘কোরাল রিফ মৃত কোরালের একটি আকৃতি৷ যা সাধারণত গঠিত হয় ট্রপিক্যাল সাগরে৷ ২২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা কোরাল রিফ গঠনে সবচেয়ে সহায়ক৷ যেহেতু অগভীর অঞ্চলেই এহেন তাপমাত্রা বজায় থাকে, সেহেতু ১১ মিটার থেকে ৪০ মিটার গভীর সমুদ্রে কোরাল রিফ'এর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি৷ সাগরের পানিতে এমন তাপমাত্রা থাকলে প্রচুর ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন জন্মায়৷ ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন হচ্ছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভিদ৷ ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন খেয়ে জুপ্ল্যাঙ্কটন নামের এক ধরণের অতি ক্ষুদ্র প্রাণী বেঁচে থাকে৷ আর কোরাল'এর প্রধান খাদ্যই হচ্ছে জুপ্ল্যাঙ্কটন৷''

কোরাল লাইম অফ কার্বোনেট দিয়ে তৈরি হলেও, রিফ'এ কিন্তু ম্যাগনেসিয়াম, স্ট্রনসিয়ামের মতো ধাতুও থাকে৷ অবাক করার বিষয়, প্রশান্ত মহাসাগরের কোরাল'এ নাকি ২.১৭ পিপিএম ইউরেনিয়ামও পাওয়া যায়৷ তবে কোরাল রিফ ছাড়াও সমুদ্র গভীরে অন্য আরেক ধরণের কোরাল বা ‘সাগর রত্ন' জন্মায়৷ একে বলা হয় কোরাল ব্যাংক৷ সাগরের ৬০ মিটার থেকে ২০০ মিটার গভীর অঞ্চলে এরা বাস করে৷

প্রফেসার শুলৎস'এর কথায়, ‘‘৪ ডিগ্রি থেকে ১৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা এই কোরাল ব্যাংকগুলির জন্য খুবই উপযোগী৷ নরওয়ে থেকে কেপ ভার্দের উপকূল বরাবর পূর্ব অ্যাটলান্টিক হলো এদের উৎপত্তিস্থল৷ এছাড়া, নাইজার নদীর বদ্বীপ অঞ্চল, মেক্সিকো উপসাগর এবং নিউজিল্যান্ডের ক্যাম্পবেল মালভূমি এলাকায় এদের দেখা যায়৷ পাওয়া যায় জাপানের অদূরে উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরেও৷ অবশ্য আরও গভীর ও শীতল পরিবেশ, যেমন অ্যান্টার্কটিকা, পাতাগোনিয়া, ফকল্যান্ড দ্বীপেও দেখা যায় এদের৷''

কোরাল রিফ গঠনে সমুদ্রে দ্রবীভূত অক্সিজেনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ কারণ, প্রবাল দ্বীপ সাধারণত বেশি গভীরতায় তৈরি হয় না৷ প্রফেসার মিশায়েল শুলৎস জানান, ‘‘সাগরের গভীরতা বৃদ্ধি পেলে আলোর স্থায়িত্ব কমে যায়৷ এবং তার ফলে মারা যায় সাগরতলের সবচেয়ে সুন্দর, মনমুগ্ধকর এই জীব৷''

বলা বাহুল্য, সাগরের সৌন্দর্যের জন্য কোরাল'এর ভূমিকা অপরিসীম৷ অথচ জলবায়ু পরিবর্তন এবং দূষণের কারণে ধীরে ধীরে এই ‘সাগর রত্ন' হারিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের বুক থেকে৷ তাই একে রক্ষা করা না গেলে সেটা হবে প্রকৃতির জন্য মারাত্মক এক ক্ষতি৷

প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ