গরম পড়লে মারামারি, অন্ধকারে চুরি
৩০ এপ্রিল ২০১১আবহাওয়া ও অপরাধের যোগসূত্র খোঁজার উদ্যোগ নতুন নয়৷ এমনকি মধ্যযুগ থেকে শুরু করে জার্মানি ও ফ্রান্সে আবহাওয়া অনুযায়ী অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার প্রস্তাবও শোনা গেছে৷ ইংল্যান্ডে নাকি পূব দিক থেকে বাতাস বইলে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়ে যায় – এমন একটা ধারণাও চালু ছিল৷
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এই যোগসূত্রের বৈজ্ঞানিক প্রেক্ষাপট খোঁজার চেষ্টা শুরু হয়৷ বর্তমান যুগে জার্মানিতে পুলিশ নিয়মিত আবহাওয়া পূর্বাভাষের দিকে নজর রাখে৷ এমনকি অপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রেও আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য বিবেচনা করতে হয়৷ হামবুর্গ শহরের পুলিশ এবার আবহাওয়া ও অপরাধের তদন্ত সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে জানার চেষ্টা করছে, অপরাধীদের আচরণের উপর আবহাওয়া কতটা প্রভাব ফেলে৷ একদিকে গত ২০ বছর ধরে প্রতি দিন, প্রতি ঘণ্টার আবহাওয়ার রেকর্ড রয়েছে – সংখ্যার বিচারে যা প্রায় ৩ কোটি ৬০ লক্ষ ফাইল৷ অন্যদিকে রয়েছে পুলিশের মহাফেজখানায় রাখা প্রায় ১৭৫,০০০ নথিপত্র৷ এত তথ্য ঘেঁটে দেখা প্রায় অসম্ভব৷ তাই এই সংগ্রহ থেকে ২০ লক্ষের মতো তথ্য বেছে নিয়ে বিশ্লেষণ করা হছে৷
ফলাফল বেশ চমকে দেওয়ার মতো৷ যেমন আবহাওয়ার এমন কোনো অবস্থা নেই, যখন আদৌ কোনো অপরাধ ঘটে না৷ রোদ-বৃষ্টি, শীত-গ্রীষ্ম – অপরাধ য়ে কোনো অবস্থায় ঘটতে পারে৷ ডাকাতি, দোকানের মধ্যে চুরি, গাড়ি চুরি, লোক ঠকানো এবং মাদক সংক্রান্ত অপরাধ – এসবেরও কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই৷ এছাড়া এমন কিছু অপরাধ আছে, যা সত্যিই আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে থাকে৷ যেমন কাউকে শারীরিকভাবে আহত করা৷ গরম যত বাড়ে, হাতও চলে তত বেশি৷ পরিসংখ্যানের বিচারে দেখা যাচ্ছে, যে তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে হামলার ঘটনা দিনে ০.৭ শতাংশ বেড়ে যায়৷ আরও কিছু বিষয় ধরলে দেখা যাবে যে অগাস্ট মাসের গরম কোনো শনিবারে দিনে ৮২টি এমন ঘটনা ঘটে৷ অন্যদিকে মার্চ মাসের মেঘলা ও ঠাণ্ডা কোনো মঙ্গলবার হামলার ঘটনা কমে ৫১এ নেমে যেতে পারে৷ গরমের দিনে যৌন অপরাধও বেড়ে যায়৷ দিন যত ছোট হয়, ঘরবাড়িতে চুরির ঘটনাও বেড়ে যায়৷ কিন্তু ঠাণ্ডা বাড়লে আবার চুরি কমে যায়৷
শুধু জার্মানির হামবুর্গ নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিস শহরের পুলিশ এমনকি আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে অপরাধের পূর্বাভাষ দেয়৷ অতীতের তথ্যের ভিত্তিতে ‘কম্পিউটার সিমুলেশন' পদ্ধতির মাধ্যমে তারা এই কাজ করে৷ ২০০৫ সাল থেকে ‘ব্লু ক্রাশ' নামের এই সফটওয়্যার ব্যবহারের ফলে শহরে অপরাধের ঘটনা প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক