ভূমধ্যসাগর পাড়ের দেশগুলোতে তাপমাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকায় অনেক পর্যটক এখন নরওয়ে, সুইডেনের মতো দেশগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
কিন্তু পর্যটকদের আগমন স্থানীয় জলবায়ুর উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে৷
নরওয়ের নিগটসব্রেন গ্লেসিয়ার ইউরোপের সবচেয়ে বড় হিমবাহ নেটওয়ার্কের অংশ৷ জায়গাটির একটি জাদুকরী আবেদন আছে৷
স্টাইনার ব্রুহাইম ৪০ বছর ধরে পর্যটকদের ঐ হিমবাহ সফরে নিয়ে যাচ্ছেন৷ গত তিন-চার বছর থেকে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা তাদের জলবায়ু পর্যটক বলি, কারণ, তারা দক্ষিণ ইউরোপের উচ্চ তাপমাত্রা এড়াতে এখানে এসেছেন৷ এখানকার তাপমাত্রা হয়ত মাত্র ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সঙ্গে বৃষ্টিও আছে৷ তারপরও তারা এখানে এসেছেন৷''
হানেকে বেখটহ্যুম ও কারিন স্মিট জলবায়ু পর্যটক৷ এই দুই ডাচ বন্ধু তাদের সন্তানদের নিয়ে ডেনমার্ক ও নরওয়ে ঘুরছেন৷ দক্ষিণ ইউরোপ কি তাদের জন্য খুব গরম?
হানেকে বেখটহ্যুম বলেন, ‘‘হ্যাঁ, কিছু মানুষের জন্য তা-ই৷ আমার মনে হয় বেশিরভাগ মানুষ রোদের দেশে যায়৷ তবে আমাদের জন্য স্পেন ও ইটালি এখন খুব গরম৷ সেসব জায়গা দিন দিন আরও উষ্ণ হয়ে উঠছে৷ খুব গরম পরিবেশ আমার ভালো লাগে না৷''
জলবায়ু পর্যটনের চাপে বিপর্যয়
04:08
নিগটসব্রেন হিমবাহ এলাকাও দিন দিন গরম হয়ে উঠছে৷ মাত্র ৫০ বছর আগেও হিমবাহটা একেবারে কাছে অবস্থিত লেক ঘেঁষে ছিল৷
কিন্তু এখন বরফ গলছে৷ শুধু ২০১৮ সালেই হিমবাহের আকার প্রায় ১০০ মিটার কমে গেছে৷
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কি স্ক্যান্ডিনেভিয়ার পর্যটন লাভবান হচ্ছে? ইইউর এক জরিপ তেমনটাই বলছে৷ তাপমাত্রা বাড়ায় আরও বেশি পর্যটক ইউরোপের শীতল এলাকায় যেতে চান৷
ইতিমধ্যে এই বিষয়টির বাজারজাত শুরু করেছে সুইডেন৷ তারা গরমে অতিষ্ট পর্যটকদের ‘কুলকেশন' এর প্রতি আগ্রহী করে তুলছে৷
ভিজিট সুইডেন কর্মকর্তা সুজান অ্যান্ডারসন বলেন, ‘‘‘কুলকেশন' সম্পর্কে তথ্য দেওয়া শুরুর পর আমরা পর্যটকদের আগ্রহ বাড়া টের পাচ্ছি৷ কেউ যদি শীতল এলাকায় ঘুরতে আগ্রহী হয়, তাহলে সুইডেনে এলে কী কী করা যেতে পারে, তা আমরা ওয়েবসাইটে তুলে ধরেছি৷ আমরা এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি খোঁজা ‘কুলকেশন' স্পটগুলোর একটি৷ আসলে সুইডেন এক নম্বরে আছে৷''
অভূতপূর্ব গতিতে গলছে পর্বতমালার হিমবাহ
দক্ষিণ অ্যামেরিকার আন্দেস পর্বতমালার হিমবাহ অভাবনীয় গতিতে গলছে৷ এমন পরিস্থিতিতে বিপন্ন হাজার হাজার মানুষের জীবন৷
ছবি: Ivan Alvarado/REUTERS
নাটকীয় গতিতে
অ্যামেরিকার সর্বোচ্চ পর্বতটি পেরুর উত্তর আন্দেসে অবস্থিত৷ তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে পর্বতটির ছয় হাজার ৭০০ মিটার চূড়ার হিমবাহ গলে যাচ্ছে৷ আর এর ফলে হুমকিতে স্থানীয়দের জীবনযাত্রা৷
ছবি: REUTERS
উপরেও তাপমাত্রা বাড়ছে
গলে পড়ছে সেখানকার নেভাদো পাস্তোরুরির ওপরের হিমবাহও৷ গবেষণা বলছে, আন্দেস পর্বতমালায় এক হাজার থেকে ১৫শ মিটার উচ্চতার তাপমাত্রা দিনের বেলায় ২০০০ সালের পর থেকে প্রতি দশকে শূন্য দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে বাড়ছে৷ আর পাঁচ হাজার মিটারের উপরের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৭ ডিগ্রি করে বাড়েছে৷
ছবি: Angela Ponce/REUTERS
গঠনে পরিবর্তন
তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে পেরুর মাতেও পর্বতে সৃষ্টি হয়েছে বেশ কিছু লেক৷ পর্বতটির চূড়ায় উঠতে কয়েকবছর আগেও হিমবাহ পেরিয়ে যেতে হতো৷ আর এখন সেখানে পাথরের স্লোপ তৈরি হয়েছে৷
ছবি: Angela Ponce/REUTERS
বোঝা মুশকিল
প্রায় দুই দশক ধরে আন্দেস এবং আর্কটিক অঞ্চলের হিমবাহ নিয়ে গবেষণা করছেন চিলির প্রকৌশলী পাবলো ওয়াইনস্টাইন৷ তিনি বলেন, যে পরিবর্তন আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা সাম্প্রতিক মাসন ইতিহাসে অপ্রত্যাশিত৷’’ এই হিমবাহ নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি, কারণ, পর্বতমালাগুলো অনেক বড় এবং অনেক দূরে, জানালেন তিনি৷
ছবি: Angela Ponce/REUTERS
৫ হাজার মিটার উপর থেকে বৃষ্টির ফোঁটা!
শীতকালে আন্দেসের হিমবাহ থেকে জমা হয় তুষার ওবং বরফ৷ এরপর বসন্তকালে বরফ গলতে থাকে৷ এখানে অনেক উঁচু থেকে বৃষ্টিপাত হয়৷ যেমন, পেরুর নেভাদো পাস্তোরুরি৷ এখানে পাঁচ হাজার মিটার উপর থেকে বৃষ্টিপাত হয় যা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়৷
ছবি: Angela Ponce/REUTERS
হুমকিতে জনজীবন
প্রতিবছর এখানে পরিবর্তন দেখা যায়, মন খারাপ করা পরিবর্তন, জানালেন স্থানীয় বাসিন্দা ফ্রান্সিসকো গালার্দো৷ ১৪ বছর বয়স থেকে এল প্লোমো এলাকায় খচ্চর চড়ান তিনি৷ ৬০ বছরের গালার্দো জানালেন, পরিস্থিতি এমন যে, মনে হচ্ছে তার পরিবার হয়তো আর ১০ বছর এখানে থাকতে পারবে৷ জীবনযাপনের জন্য এরপর হয়তো নতুন কোনো এলাকার সন্ধান করতে হবে তাদের৷
ছবি: Ivan Alvarado/REUTERS
হিমবাহ থেকে বনাঞ্চল
৫০ বছর ধরে এল প্লোমোতে পর্বতারোহীদের উদ্ধারের কাজ করেন ওসভালদো সেগুন্দো ভিলেগাস৷ নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানালেন, এখানকার পাতাগোনিয়া অঞ্চলে একসময়ে হিমবাহের উপস্থিতিতি ছিল৷ এখন এখানে জেগে উঠেছে বন৷
ছবি: Ivan Alvarado/REUTERS
রাস্তাঘাটে চলাচলের ঝুঁকি
সান্তিয়াগোর নিকটে লো কুরো পর্বতের চূড়ায় যাওয়ার পথটি হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে৷ কিন্তু হাজার বছরের এই পুরনো পথটিতে সম্প্রতি তৈরি হয়েছে নতুন ঝুঁকি৷ আর তা হলো, হিমবাহ গলার কারণে পথের উপর পাথর পড়ার এবং ভূমিধসের ঘটনা ঘটছে৷