প্রযুক্তি এখন আর শুধু মানুষের জন্য নয়, পশুপাখির জন্যও ব্যবহার হচ্ছে৷ জার্মানরা এখন গোয়াল ঘরে ব্যবহার করছেন রোবট৷ গরুকে খাওয়ানো থেকে শুরু করে দুধ দোয়া, এমনকি গোসল সবই করে দিচ্ছে মেশিন৷
বিজ্ঞাপন
গোয়াল ঘরে রোবট ব্যবহারের কথা ভেবেছেন কখনো? হয়ত না, তবে ইউনো নামের এক রোবট জার্মানির এক গোয়াল ঘরে দিব্যি কাজ করছে৷ গরুদের খাবার দেয় সে৷ আল্ট্রাসাউন্ডের ভিত্তিতে নিজের রাস্তা খুঁজে নেয় ইউনো৷ তবে কোথায়, কতবার সে যাবে তা আগেই প্রোগ্রাম করা থাকে৷
জার্মানির এক দুগ্ধ খামারের ম্যানেজার লিসা রুসিশ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমাদের ইউনো বেশ করিৎকর্মা৷ সে দিনে ১২ বার গরুর জন্য খাবার নিয়ে আসে৷ আগে থেকে করা প্রোগ্রাম অনুযায়ী কাজ করে সে৷
‘‘গরুরা তাকে অনেক ভালোবাসে৷ এভাবে গরুকে প্রয়োজনমত, নিয়ম মেনে খাবার সরবরাহ সম্ভব হয়৷ যা দুধের উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক৷''
গরুর দুধ দোয়াতেও ব্যবহার করা হয় রোবট৷ এটি শুরুতে দুধের বোঁটা পরিষ্কার করে৷ এরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে দুধ দোয়ানোর কাজ শুরু হয়৷ এভাবে প্রতিটি গরু থেকে প্রতিদিন ৬০ লিটার দুধ বের করে নেয় রোবট৷ আর গরুর ঘাড়ে একটি ট্রান্সপন্ডার লাগানো আছে৷ ফলে রোবট সেটিকে চিনতে পারে৷
জীবন বাঁচাবে বাংলাদেশের রোবট
গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে রোবট নিয়ে কাজ হচ্ছে৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা এক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন৷
ছবি: RoboticsBD
আগুন নেভাবে রোবট
তৈরি পোশাক কারখানা সহ বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগার ঘটনা প্রায় ঘটে৷ এতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে৷ আগুন নেভাতে ছুটে যান দমকল বাহিনীর কর্মীরা৷ ভবিষ্যতে হয়ত তাদের সঙ্গে যোগ দেবে রোবট৷ বাংলাদেশেই এ ধরনের রোবট তৈরির কাজ চলছে বলে জানান শিবলী ইশতিয়াক৷ রোবট তৈরির উপকরণ পাওয়া যায় এমন একটি ওয়েবসাইট রোবটিক্সবিডি ডটকমের অ্যাডমিন তিনি৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
স্বয়ংক্রিয় বা রিমোট কন্ট্রোল
ইশতিয়াক বলেন, ‘‘বাংলাদেশে অনেক ফ্যাক্টরি আছে যেগুলো অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ততটা ভালো না৷ তাই কিছু কিছু রোবট ডেভেলপ করার চেষ্টা চলছে যেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগুন নেভানোর কাজ করবে৷ অথবা সেগুলো রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে চালানো যেতে পারে৷'' এ ধরনের রোবটকে কোথায়, কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে কথাবার্তা চলছে বলে জানান তিনি৷
ছবি: RoboticsBD
কোয়াডকপ্টার
ইশতিয়াক বলেন, বর্তমানে কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল তাদের অনুষ্ঠান নির্মাণকাজে কিংবা সরাসরি কোনো অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে বাংলাদেশে তৈরি কোয়াডকপ্টার ব্যবহার করছে৷
ছবি: Getty Images
সাগরে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা
কোয়াডকপ্টারের আরেকটি সম্ভাব্য ব্যবহারের কথাও জানান ইশতিয়াক৷ সাগরে ডুবে যাচ্ছে এমন কোনো ব্যক্তির কাছে কোয়াডকপ্টারের মাধ্যমে লাইফ জ্যাকেট ও ভেস্ট পাঠিয়ে তাঁর প্রাণ বাঁচানো যেতে পারে৷
ছবি: RoboticsBD
ঘরের কাজে রোবট
ভ্যাকুয়াম ক্লিনার সহ ঘরের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে এমন সব রোবট ডেভেলপ করতে গবেষণা করছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা৷
ছবি: AP
অনলাইনে রোবট তৈরির যন্ত্রপাতি
রোবটিক্সবিডি ডটকমে (http://store.roboticsbd.com/) গেলে রোবট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো পাওয়া যাবে৷ আগে এসব বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো৷
ছবি: store.roboticsbd.com
শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে
ইশতিয়াক জানান, সাইট চালুর শুরুর দিকে অর্থাৎ ২০১২ সালে তেমন একটা ব্যবসা করতে না পারলেও পরের দুই বছরে বিক্রি বেড়েছে প্রায় দুইশো শতাংশ৷ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘আজকাল শিক্ষার্থীরা ইউটিউব সহ অন্যান্য মাধ্যমে বিদেশে রোবট নিয়ে যেসব কাজ হচ্ছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারছে৷ ফলে তারাও এ বিষয়টির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে৷’’
ছবি: RoboticsBD
প্রশিক্ষণ
যারা রোবট বানানোর চেষ্টা করছেন তাদের আরেকটু সহায়তা করতে রোবটিক্সবিডি বেশ কিছু কোর্সও পরিচালনা করে থাকে৷
ছবি: RoboticsBD
8 ছবি1 | 8
বছর খানেক ধরে এই গোয়াল ঘরটি চালু আছে৷ এটি তৈরিতে স্থানীয় কৃষি উন্নয়ন সংঘের পাঁচ মিলিয়ন ইউরোর মতো খরচ হয়েছে৷ পাঁচশো গরুর জন্য এই বিনিয়োগ সার্থক বটে৷ গোয়ালটির অপারেশনন্স ম্যানেজার ডাগমার পোভলস্কি এবং তাঁর সহকর্মী লিসা রুসিশ প্রতিটি গরুর দিকেই নজর রাখেন৷ এই অটোমেশন গরুর জন্য নেতিবাচক কিছু নয়৷
এমনকি গরুর গোবরও নিয়মিত সরিয়ে নেয় একটি মেশিন৷ পোভলস্কি মনে করেন, গোয়ালঘরে কম মানুষ কাজ করলে ভালো৷ গরুরা তাহলে কম বিরক্ত হয়৷
এখানেই শেষ নয়৷ ছোট্ট একটি রোবট আবার প্রয়োজনমত তাজা বালু ছিটিয়ে দেয়৷ এমনকি গরুর পছন্দের গোসলের ব্যবস্থাও করে এটি৷