বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মন্ডলকে গরুপাচার মামলায় সমন পাঠাতে পারবে সিবিআই। রক্ষাকবচ তুলে নিল কলকাতা হাইকোর্ট।
বিজ্ঞাপন
বীরভূমে গরুপাচার কাণ্ডে এর আগে চারবার অনুব্রত মন্ডলকে সমন পাঠিয়েছে সিবিআই। সিবিআই জানিয়েছিল, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সিবিআইয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য অনুব্রত মন্ডলের আইনজীবী আদালতের কাছে রক্ষাকবচ চেয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, সিবিআই যদি জানায়, অনুব্রতকে গ্রেপ্তার করা হবে না, তাহলেই তিনি অফিসারদের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির একক বেঞ্চ সেই রক্ষাকবচ নাকচ করে দিয়েছে।
চাপের মুখে পুলিশ, নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা মমতার
প্রবল চাপের মুখে পড়ে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রেপ্তার রামপুরহাটে তৃণমূলের দাপুটে নেতা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পুলিশের বিরুদ্ধে
এক মাসের মধ্যে পরপর ঘটে যাওয়া চারটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন মমতা। আনিস খানের মৃত্যু, ঝালদায় কংগ্রেসের কাউন্সিলারকে হত্যা, পানিহাটিতে তৃণমূল কাউন্সিলার খুন এবং রামপুরহাটের তৃণমূল উপপ্রধান খুন ও বাড়িতে আগুন লাগিয়ে আটজনকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় স্থানীয় থানার পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বগটুই নিয়ে
বীরভূমের বগটুইয়ে গিয়েছিলেন মমতা। সেখানে গ্রামবাসীরা পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ করেন। মমতাও তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপর রামপুরহাট থানার আইসি ত্রিদীপ প্রামাণিক ও মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (এসডিপিও) সায়ন আহমেদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আনারুল গ্রেপ্তার
আনারুল হোসেন ছিলেন রামপুরহাট ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি। এলাকায় দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা বলে পরিচিত। বগটুইতে গিয়ে মমতা বলেন, আনারুলকে হয় আত্মসমর্পণ করতে হবে, নাহলে তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। এরপর পুলিশ একটি হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। উপরে ছবিটি আনারুলের বাড়ির।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আনারুলের অপরাধ কী?
মমতা জানিয়েছেন, গ্রামবাসীরা আনারুলকে ঘটনার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু তারপরেও আনারুল পুলিশকে সতর্ক করেনি। পুলিশ পাঠাবার ব্যবস্থা করেনি। আনারুল দায়িত্ব পালন করলে এতবড় ঘটনা ঘটত না। রাজ্যের সাবেক বিরোধী নেতা আব্দুল মান্নান বলেছেন, পুলিশ পাঠানো আনারুলের কাজ নয়, প্রশাসনের কাজ, পুলিশের কর্তাদের কাজ। আনারুলের উচিত ছিল পুলিশকে ঘটনার কথা জানানো।
ছবি: Prabhakar Mani Tewari/DW
অস্ত্র কারখানার খোঁজ
পরপর চারটি ঘটনার পর মমতা পুলিশকে নির্দেশ দেন, বেআইনি অস্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। তারপর পুলিশ সেই অভিযান শুরু করে এবং আসানসোলে একটি অস্ত্র কারখানার খোঁজ পায়। এখন বিভিন্ন জেলায় খোঁজ চলছে। বিরোধী নেতাদের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে বেআইনি অস্ত্রের রমরমা নিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার। গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের আগে তারা বারবার অভিযোগ করেছেন। কিন্তু ফল হয়নি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
'লোক দেখানো ব্যবস্থা'
পশ্চিমবঙ্গের সাবেক বিরোধী নেতা আব্দুল মান্নান ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী লোক দেখানো ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তিনি লোকের চোখে ধুলো দিতে চাইছেন। অতীতেও বারবার তিনি এই কাজ করেছেন। নিছক সাসপেন্ড করা, ক্লোজ করা অর্থহীন। ২১ জুলাইয়ের গুলি-কাণ্ডে অভিযুক্ত পুলিশ কর্তাকে মমতা দলে নিয়ে মন্ত্রী পর্যন্ত বানিয়েছেন। মান্নানের প্রশ্ন, হাওড়ার এসপি-র বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হলো না?
ছবি: DW/P. Samanta
বগটুইতে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ
গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছেন, এসডিপিও-র বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটারও নয়। মূল রাস্তায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। ভাদু শেখকে হত্যা করার আধঘণ্টা, চল্লিশ মিনিট পরে এতগুলো বাড়ি পুড়িয়ে মানুষ মারা হলো। বগটুই গ্রাম মোটেই শান্তিপূর্ণ এলাকা নয়। তারপরেও পুলিশ কিছুই টের পেলো না? তারা সময়ে এলো না?
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ভাদু শেখের বাড়িতে নয়
মুখ্যমন্ত্রী বগটুই গ্রামে গেলেও ভাদু শেখের বাড়িতে যাননি। ভাদু শেখ ছিলেন তার দলের নেতা। এর ফলে ভাদু শেখের স্ত্রী কেবিনা বিবি ক্ষুব্ধ। তার বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল করতে গিয়েই আমার স্বামী খুন হয়েছে। ভেবেছিলাম মুখ্যমন্ত্রী আমাদের বাড়িতে আসবেন। কেন তিনি এলেন না আমি জানি না।’’ ভাদুর বাবা মারফত শেখ বলেছেন, ‘‘১৭টি গ্রামের মাথা ছিল আমার ছেলে। বখরার ভাগ দিতে পারেনি বলেই সে খুন হয়ে গেল!’’
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পুলিশ নিয়ে আসে
ভাদু শেখের হত্যার পর তার পরিবার গ্রাম ছেড়েছিলেন। বৃহস্পতিবার পুলিশি পাহারায় তারা বাড়ি ফেরেন। ভাদুর অনুগামীরাও সেখানে আসেন। মুখ্যমন্ত্রী না আসায় তারাও হতাশ। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ভাদু তো আর ভোট করতে পারবেন না। তাই মুখ্যমন্ত্রী তার বাড়ি যাননি। তিনি এখন নতুন মানুষের খোঁজ করছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিজেপি প্রতিনিধিদল
বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা বগটুইয়ের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেয়ার জন্য চার সদস্যের প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিলেন। সেই প্রতিনিধিদলে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ছিলেন। আর ছিলেন তিন সাবেক আইপিএস অফিসার। তারা বগটুইয়ে গিয়ে গ্রামের মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
10 ছবি1 | 10
আদালত জানিয়েছে, যে কোনো মামলায় তদন্তকারী সংস্থার হাত-পা বেঁধে দিতে রাজি নয় আদালত। তদন্তকারী সংস্থার স্বাধীনভাবে তদন্ত করার অধিকার আছে। ফলে অনুব্রত মন্ডল যে রক্ষাকবচ চাইছেন, তা দেওয়া হবে না। তাকে সিবিআই ডাকলে হাজিরা দিতে হবে। ফলে এবার সিবিআই অনুব্রতকে ডাকলে তাকে হাজির হতেই হবে। এর আগে হাইকোর্টের অন্য বেঞ্চও একই রায় দিয়েছিল।
গরুপাচার মামলায় অনুব্রতকে সিবিআই ডাকার পর তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সিবিআইয়ের মুখোমুখি হননি। তারই মধ্যে রক্ষাকবচ চেয়ে আদালতের কাছে গেছিলেন অনুব্রতের আইনজীবী। শেষপর্যন্ত সেই রক্ষাকবচ তিনি পেলেন না।
বীরভূমের অনুব্রত মন্ডল বরাবরই বিতর্কে জড়িয়ে থাকেন। ক্যামেরার সামনে পুলিশকে হুমকি দিয়েছেন তিনি। প্রকাশ্য জনসভায় পুলিশের উপর বোমা মারার কথা বলেছেন, বিরোধীদের ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। সম্প্রতি রামপুরহাট-কাণ্ডেও তার নাম উঠে এসেছে।
কী ঘটেছিল রামপুরহাটের গ্রামে
03:26
রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে তদন্ত করতে গিয়ে সিবিআই জানিয়েছে, এই ঘটনার পিছনে বালি, পাথর এবং গরু পাচারের বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে তাদের অনুমান। আপাতত সেই বিষয়টিকে সামনে রেখেই তারা তদন্ত চালাচ্ছে। সিবিআইয়ের এক অফিসার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, এলাকার স্থানীয় নেতাদের রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তাদের ভাবাচ্ছে। পাচারের কাঁচা টাকা জেলার বিভিন্ন স্তরের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছাতো বলে তাদের সন্দেহ। বস্তুত, এর আগে বীরভূমে গরু পাচারের তদন্তে নেমে বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মন্ডলকে চারবার সমন পাঠিয়েছিল সিবিআই। এবার রামপুরহাট-কাণ্ডেও সরাসরি তার নাম জড়িয়ে যেতে পারে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন।
রামপুরহাট-কাণ্ডে নিহত এক ব্যক্তির পরিবারও অভিযোগ করেছে, এই ঘটনার সঙ্গে গরু এবং বালি পাচারের যোগ আছে। এবং অনুব্রত মন্ডল সরাসরি তার সঙ্গে জড়িত। অনুব্রত অবশ্য জবাবে বলেছেন, তাঁকে ফাঁসানোর জন্যই এসব কথা বলা হচ্ছে।
বগটুইয়ের ঘটনা ঘটার পর অনুব্রত বলেছিলেন, সেখানে টিভি ফেটে আগুন লেগেছে। এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বগটুইয়ে যান। সেখানেও মুখ্যমন্ত্রীর গাড়িতে ছিলেন অনুব্রত।
এদিন আদালত তার উপর থেকে রক্ষাকবচ তুলে নেওয়ায় মামলাটি নতুন দিশা পেতে পারে বলে মনে করছেন সিবিআইয়ের অফিসাররা।