গত শুক্রবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লি থেকে বারাণসীর উদ্দেশ্যে ছুটে গিয়েছিল ট্রেনটি৷ পরদিন শনিবার ফেরার পথে উত্তরপ্রদেশের টুন্ডলা জংশন থেকে ১৫ কিমি দূরে রেললাইনের উপর থাকা একটি গরুর সঙ্গে ট্রেনটির ধাক্কা লাগে৷ এই ঘটনায় ট্রেনটিতে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয়৷ ট্রেনের শেষ চারটি কোচে বিকট শব্দ শুরু হয় এবং সেখান থেকে ধোঁয়া ও জ্বালানির গন্ধ বের হতে শুরু করে৷ এছাড়া সবকটি কোচ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল৷ ট্রেনের গতিও তখন অত্যন্ত ধীর হয়ে পড়েছিল৷ পরে ঘণ্টায় ৪০ কিমি বেগে ট্রেনটি দিল্লি এসে পৌঁছয়৷ ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে আবার নতুন দিল্লি রেলস্টেশন থেকে বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু করেছে ট্রেনটি৷

৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‌বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১৮০ কিমি হলেও রেলপথের ক্ষমতার কথা মাথায় রেখে বর্তমানে সেটি ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে চলছে৷

মোদী সরকারের ‘‌মেক ইন ইন্ডিয়া' প্রকল্পের আওতায় দেশেই এই ট্রেন তৈরির দাবি করা হলেও বাস্তবে সম্পূর্ণ বিদেশি প্রযুক্তি ও প্রায় সবকটি যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করে ভারতে তৈরি হয়েছে ‌বন্দে ভারত এক্সপ্রেস৷

২০২২ সালে ‘‌বুলেট ট্রেন'‌ চালু হওয়ার আগে আপাতত শতাব্দী এক্সপ্রেসের কাছ থেকে ভারতের সবচেয়ে দ্রুতগামী ট্রেনের শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছে দেশের প্রথম ইঞ্জিনবিহীন এই ট্রেনটি৷

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সবুজ পতাকা নেড়ে ট্রেনটির উদ্বোধন করেছিলেন৷ বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু হওয়ার বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে হঠাৎ যান্ত্রিক গোলযোগে মাঝপথে আটকা পড়েছিল বন্দে ভারত এক্সপ্রেস! এই ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া'-‌র উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে বলে কটাক্ষ করে টুইট করেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী৷ যাত্রী সুরক্ষার স্বার্থে মোদীকে পুরো বিষয়টি আরও একবার গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি৷ তবে, কংগ্রেস সভাপতির এই টুইট-‌আক্রমণের জবাব দিয়ে পাল্টা রাহুলের দিকে তোপ দেগেছেন রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল৷

এসব ঘটনার ফলে আমজনতার মনে প্রশ্ন জেগেছে, একদিকে শতাব্দী প্রাচীন ভারতীয় রেলে আজও উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব অন্যদিকে, তাড়াহুড়ো করে দ্রুতগামী ট্রেন চালু করার হিড়িক৷ পেছনে কি শুধুই রাজনীতি?

‌‌

সাবেক রেল রাষ্ট্রমন্ত্রী অধীররঞ্জন চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‌‘আধুনিক দেশে ট্রেনের গতি বাড়ানো প্রয়োজন৷ কিন্তু, প্রয়োজন হলেই গতি বাড়ানো যায় না৷ তারজন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো প্রয়োজন৷ ভারতের মতো জনবহুল দেশে ‘‌ডেডিকেটেড করিডোর'‌ ছাড়া দ্রুতগতির ট্রেন চালানোর উদ্যোগ কখনওই সফল হতে পারে না৷ তার শেষতম উদাহরণ হলো, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা বন্দে ভারতের গতি রুখে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশের গো-‌মাতারা৷ সরকারের উচিত পরিকাঠামো নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা৷'‌‌'

‌তবে বন্দে ভারত ট্রেনটির ভালো-‌মন্দ দুই দিকই আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ রেল বিশেষজ্ঞ গুলশন খাতরি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‌‘‌এই ট্রেনের ভালো দিকটি হলো, আজ থেকে ৪০ বছর আগে কোচ আমদানি করেছিল ভারতীয় রেল৷ মেট্রো রেলের চেয়ে গতিশীল ট্রেন৷ কোনো স্টেশনে ট্রেন থামার পর খুব অল্প সময়ে পুনরায় দৌড়াতে শুরু করার ক্ষমতা রয়েছে এই ট্রেনে৷ অন্যদিকে, যে বিষয়গুলিতে সমালোচনা শুরু হয়েছে তা হলো, মাস দেড়েকের মধ্যে দেশের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে তাড়াহুড়ো করে এই ট্রেন চালু করা হয়েছে৷ যেকারণে ট্রেনটিতে প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যা রয়ে গেছে৷ তার জেরেই প্রথম দিনেই বিপত্তি দেখা দিয়েছিল৷ তাছাড়া দ্রুতগামী ট্রেন চালু করার আগে শতাব্দী প্রাচীন রেললাইনের আধুনিকীকরণ সবার আগে প্রয়োজন, তা করা হয়নি৷'‌'

‌মন্ত্রকের কর্তারা জানাচ্ছেন, ‌বন্দে ভারত এক্সপ্রেস প্রতিদিন সকাল ছয়টায় দিল্লি থেকে যাত্রা শুরু করে দুপুর দু'টায় বারাণসী পৌঁছানোর পথে কানপুর ও প্রয়াগরাজ স্টেশনে থামবে৷ আবার দুপুর আড়াইটায় বারাণসী থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে রাত সাড়ে ১০টায় দিল্লি পৌঁছবে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস৷