1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘গরুর মাংস ৫২৫ টাকায় কোথায় পাওয়া যায়?'

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৬ মে ২০১৯

এবার রমজানে সিটি কর্পোরেশন প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ৫২৫ টাকা৷ আর খাসির মাংস ৭৫০ টাকা৷ কিন্তু অনেক নগরবাসীর প্রশ্ন– এই দামে গরুর মাংস কোথায় পাওয়া যায়?

Rinderhälften im Schlachthof
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Krato

যতই হম্বিতম্বি করা হোক না কেন, রামাজানের শুরুতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না৷ মাছ-মাংস, শাক-সবজি, ছোলা, পিঁয়াজ রসুন, ফল সব কিছুরু দামই বাড়তি৷ এই পরিস্থিতিতে রমজান মাসে গরুর মাংস ও খাসির মাংসের দাম বেঁধে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন৷ গরুর মাংস প্রতি কেজি ৫২৫ এবং খাসির মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা৷ দুপুরে নগর ভবনে মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে মাংসের দাম নির্ধারণ করেন মেয়র সাঈদ খোকন৷

পিঁয়াজ এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৫ টাকা, এখন ৩৫ টাকা কেজি: জামাল হোসেন

This browser does not support the audio element.

এ বিষয়ে কথা হয় শুক্রাবাদের চা দোকানদার জামাল হোসেনের সঙ্গে৷ তিনি ক্ষোভের সঙ্গে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগে গরুর মাংসের দাম একটু কম ছিল৷ কিন্তু রমজানের আগে আজ (সোমবার) ৬৫০ টাকায় এক কেজি গরুর মাংস কিনেছি৷ সিটি কর্পোরেশন আমাদের বলে দিক কোথায় ৫২৫ টাকায় গরুর মাংস পাওয়া যায়৷ আমরা সবাই সেখানে গিয়ে মাংস কিনবো৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘এখন খাসির মাংসের কেজি সাড়ে ৮শ' টাকা৷ সিটি কর্পোরেশনের দামে মাংস চাইলে আমাদের দোকানদাররা ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেবে৷''

তিনি জানান, ‘‘গত রমজানেও সিটি কর্পোরেশন গরুর মাংসের কেজি সাড়ে ৪শ' টাকা ঠিক করে দিয়েছিল৷ কিন্তু তখন আমাদের মাংস কিনতে হয়েছে সাড়ে ৫শ' টাকা করে৷'' 

৫২৫ কেন, চাঁদাবাজী বন্ধ হলে সাড়ে ৩শ’ টাকা কেজিতেও মাংস বিক্রি করতে পাবব:রবিউল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

সিটি কর্পোরেশন মহিষের মাংসের কেজি নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজি ৪শ' ৮০ টাকা৷ ভেড়া বা ছাগীর মাংসের প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা৷ কিন্তু বাজারে মহিশের মাংস বলে কিছু পাওয়া যায় না৷ সবই নাকি গরুর মাংস৷ এর আগে একবার মাংসের দোকানে গরুর মাংস রাখা বাধ্যতামূলক করা হলেও তা কার্যকর হয়নি৷ ঢাকায় প্রতিদিন প্রচুর মহিষ এলেও মাংসের দোকানে মহিষের মাংস নেই৷ ভেড়া বা ছাগীর মাংসও কোনো দোকানে পাওয়া যায় না৷

এসব বিষয়ে মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘৫২৫ কেন, যদি চাঁদাবাজী বন্ধ হয়, তাহলে আমরা সাড়ে ৩শ' টাকা কেজিতেও মাংস বিক্রি করতে পাবব৷ ঘাটে ঘাটে চাঁদা দেয়ার পর একটি গরু যখন ঢাকার গাবতলি গরুর হাটে আসে, তখন ইজারাদার ট্যাক্সের নামে আরো একদফা চাঁদা আদায় করে, যার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি৷ ফলে একটি গরুর প্রকৃত যে দাম, তার চেয়ে দুই গুণ-আড়াই গুণ বেশি দামে আমাদের একটি গরু কিনতে হয়৷ আমরা এটা বন্ধের দাবি জানিয়েছি৷ তা হলে নির্ধারিত দামেই গরুর মাংস বিক্রি করতে পারবো৷ না হলে দাম যেভাবে ফ্রি-স্টাইল চলছে, সেভাবেই চলবে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘এখন গরুর মাংসের কেজি ৬শ' সাড়ে ৬শ' টাকা৷ এটা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে৷ নিম্নবিত্ত মানুষ কোনো উৎসব অনুষ্ঠানে বাধ্য হলে মাংস কেনে, তার বাইরে নয়৷ আমাদের অনেক দোকানও বন্ধ হয়ে গেছে৷''

এবার তরমুজের দাম বেশি, সাধারণ মানুষ কিনতে পারে না: জামিলা আক্তার

This browser does not support the audio element.

জামাল হোসেন জানান, রমজানের আগে সব কিছুর দামই বেড়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘পিঁয়াজ এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৫ টাকা, এখন ৩৫ টাকা কেজি৷ ৮০ টাকার আদা এখন ১২০ টাকা৷ বুটের ডাল ছিল ৭০ টাকা, এখন হয়েছে ৯০ টাকা৷ ছোলার দামও কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে৷ চিনির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা৷''

তবে কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা আব্দুর রহিম মনে করেন, ‘‘রমজানের আগে ভোগ্য পণ্যের দাম যে পরিমাণ বাড়ার কথা, সেরকম বাড়েনি৷ কিছু কিছু পণ্যের দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়েছে৷ মশুরের ডাল কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে৷ আর যারা বলছে বেড়েছে, তারা গত বছরের রমজানের সঙ্গে তুলনা করছেন না৷ মাঝে  কমেছিল৷ তার সঙ্গে তুলনা করছেন৷''

রমজানের আগে ভোগ্য পণ্যের দাম যে পরিমাণ বাড়ার কথা, বাড়েনি:আবদুর রহিম

This browser does not support the audio element.

তিনি আরো বলেন, ‘‘রমজানকে সামনে রেখে লোকজন একটু বেশি ভোগ্যপণ্য কিনছেন, যার লাগে এক কেজি সে কেনে ৫ কেজি৷ সে কারণেও দাম একটু বেড়েছে৷''

তবে ভোগ্যপণ্যের পাইকারি ব্যবসায়ী শুক্কুর ট্রেডার্সের মালিক শফিকুল ইসলাম দাবি করেন, ‘‘রমাজানের আগে সব ধরনের ভোগ্যপণ্য ও ভোজ্য তেলের দাম পাইকারি পর্যায়ে বাড়েনি৷ আমাদের সরবরাহ স্বাভাবিক আছে৷ খুচরা পর্যায়ে কেন দাম বাড়ছে তা আমাদের জানা নেই৷ হয়তো লোডিং-আনলোডিংয়ের সমস্যা, অথবা রমাজানের আগে চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে এরকম হতে পারে৷''

আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী মোহসীন আহমেদ বলেন, ‘‘অজুহাতের তো শেষ নেই, খুচরা বিক্রেতারা নাকি ঘুর্ণিঝড় ফণীর কারণে পণ্য দোকানে তুলতে পারেনি৷''

এদিকে মাছ, শাক-সবজি ও ফলের দামও রামজানের আগে বেড়ে গেছে৷ কলাবাগানের গৃহিণী জামিলা আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এবার তরমুজের দাম বেশি৷ ছোট একটি তরমুজের দাম ১৮০ টাকা৷ তরমুজের কেজি ৮০-৯০ টাকা৷ বড় একটি তরমুজের দাম ৫-৬ শ' টাকা৷ সাধারণ মানুষ কিনতে পারে না৷ কমলা আপেল, মালটা, খেজুর সব ফলের দামই বাড়তি৷ খেজুরের কেজি ৩৫০ টাকা থেকে শুরু৷ মাছের দাম বেড়ে গেছে৷ ১৫-২০ টাকার নীচে কোনো ধরনের এক আঁটি শাক পাওয়া যায় না৷''

আমাদের ব্যবসায়ীদের মধ্যে অতি মুনাফা করার প্রবৃত্তি কমছে না: গোলাম রহমান

This browser does not support the audio element.

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এবং দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের ব্যবসায়ীদের মধ্যে অতি মুনাফা করার প্রবৃত্তি কমছে না৷ ফলে সরবরাহ ঠিক থাকলেও তারা নানা অজুহাতে রমজান বা কোনো উৎসবের আগে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়৷ তবে আমাদের ক্রেতাদেরও সচেতন হতে হবে৷ একসঙ্গে সব কেনার মানসিকতা ছাড়তে হবে৷ আর কোনো পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিলে তার ব্যহার কমিয়ে দিতে হবে৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘শুধু আইন করে বা নির্দেশ দিয়ে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়৷ প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন এবং মনিটরিং৷ বাজারের বাস্তবতার সঙ্গে মিল না রেখে কোনো পণ্যের দাম যদি বেঁধে দেয়া হয়, বাস্তবে তা কার্যকর হয় না৷ গরুর মাংসের দাম বেঁধে দেয়ার ক্ষেত্রেও তাই হবে৷''

রমাজানের আগে সব ধরনের ভোগ্যপণ্য ও ভোজ্য তেলের দাম পাইকারি পর্যায়ে বাড়েনি:শফিকুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

এদিকে এই রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম মনিটরিংয়ের জন্য মনিটরিং সেল খুলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়৷ সেল এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে৷ বাজারে যে-কোনো পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির তথ্য দেয়ার জন্য ফোন নাম্বার দিয়ে সেলে সেলে যোগাযোগ করতে বলা  হয়েছে৷ সেলের ফোন নম্বরগুলো হচ্ছে ৯৫৪৯১৩৩, ০১৭১২-১৬৮৯১৭, ৯৫১৫৩৪৪ ও ০১৯৮৭-৭৮৭২০৯৷

এর বাইরে রমজানে ডিএমপি ও সিটি কর্পোরেশন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করবে৷

আর রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে৷ তারা প্রতি কেজি চিনি ৪৭ টাকা, মসুরের ডাল ৪৪ টাকা এবং সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ৮৫ টাকায় বিক্রি করছে৷ ছোলা প্রতি কেজি ৬০ টাকা এবং খেজুর ১৩৫ টাকা৷ একজন ক্রেতা একবারে সর্বোচ্চ ৫ লিটার তেল কিনতে পারবেন৷ খেজুর কিনতে পারবেন ১ কেজি করে৷ ছোলা, চিনি ও ডাল ৪ কেজি করে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ