1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাম্পা, নান্দু এবং গরু

ভেরা ফ্রাইটাগ/এসি২ অক্টোবর ২০১৫

পশুপালনের ক্ষেত্রে আর্জেন্টিনা বিশ্বের প্রথম সারির দেশ৷ পাম্পা বা তৃণভূমির হাজার হাজার হেক্টার জমি প্রধানত লক্ষ লক্ষ গরুর পালের চারণভূমি৷ কিন্তু পশুপালন আর পরিবেশ সুরক্ষা, দুই-ই কি সম্ভব?

Artikelbild Global Ideas
ছবি: David Haynes

পশুপালনের ক্ষেত্রে বিশ্বে প্রথম আর্জেন্টিনা?

05:11

This browser does not support the video element.

প্রতিদিন গাউচোর দল গরুর পাল তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ান৷ মাক হাইনেস হলেন এই খামারে চতুর্থ প্রজন্মের প্রতিনিধি৷ তাঁর পিতামহ যখন ইংল্যান্ড থেকে আর্জেন্টিনায় আসেন, তখন তাঁর সম্বল ছিল মাত্র একটি গরু৷ আজ সেখানে তিন হাজার গরু চরছে, জাবর কাটছে৷

মাক হাইনেস তাঁর স্টক বুল বা ব্রিডিং বুল, অর্থাৎ প্রজননের ষাঁড়গুলির জন্য খ্যাত৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকার অন্যান্য দেশেও তাঁর ষাঁড় বিক্রি হয়৷ গরুর পাল যখন খামারের একাংশে চরে বেড়ায়, তখন অপর একটি অংশে ঘাসপাতা নতুন করে গজানোর সময় পায়৷ এ ধরনের পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি যে আর্জেন্টিনার সর্বত্র প্রচলিত, এমন নয়৷ মাক হাইনেস জানান, ‘‘আমি পরিবেশকে একমাত্র রক্ষা করতে পারি, যদি আমি পশুপালন এবং প্রজননের কাজ করে যাওয়ার সুযোগ পাই৷ একদিকে এমন একটি ব্রিডিং প্রণালী, যা থেকে প্রকৃতির যতদূর সম্ভব কম ক্ষতি হয়; অপরদিকে এমন পরিবেশ সংরক্ষণ, যা আমাদের কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করবে না – এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য চাই৷ অন্য কোনো পন্থা নেই৷''

গরুর চারণভূমি...ছবি: picture alliance / blickwinkel/K. Fitzmaurice-Brown

পাম্পার পুনর্বনানীকরণ

আর্জেন্টিনার উত্তর-পূর্বের বিস্তীর্ণ তৃণভূমিকে বলে ‘পাম্পা'৷ এই দিগন্তবিস্তৃত তৃণভূমি ও চারণভূমির আবহাওয়া প্রায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয়, এখানকার মাটিও খুব উর্বর৷ এখানে এমন সব জীবজন্তু আছে, যা অন্য কোথাও দেখা যায় না৷ যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার অস্ট্রিচ বা উটপাখি, স্থানীয় ভাষায় যার নাম নান্দু৷ তবে আসল বিষয় হলো এই লক্ষ লক্ষ গরু৷ আর্জেন্টিনার অর্থনীতির মেরুদণ্ড হল সারা বিশ্বে মাংস রপ্তানি৷

পরিবেশ সংরক্ষণবাদী গুস্তাভো মারিনো বেশ কিছুদিন ধরে একটা নতুন প্রবণতা দেখছেন, যা তাঁকে চিন্তিত করে তুলেছে৷ নব্বই-এর দশক থেকেই এখানে পুনর্বনানীকরণ, অর্থাৎ গাছ লাগানো চলেছে৷ কিন্তু সে গাছ হল প্রধানত পাইন কিংবা ইউক্যালিপ্টাস, যা কিনা খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে৷ সেই গাছ লাগানোর জন্য আবার সরকারি ভরতুকিও পাওয়া যায়৷ কাঠ বেচেও ভালো রোজগার হয়৷

‘আভেস আর্হেন্টিনাস' বা ‘আর্জেন্টিনার পাখি' সংগঠনের গুস্তাভো মারিনো বললেন, ‘‘আর্জেন্টিনার চারণভূমি চিরকালই শুধুমাত্র লাভের কথা ভেবে ব্যবহার করা হয়েছে, টেকসই ভাবে নয়৷ যে সব গাছ লাগানো হয়েছে, তার অধিকাংশ এখানকার গাছ নয়, বরং পৃথিবীর অন্যান্য জায়গা থেকে আনা৷ খামারমালিকরা স্বভাবতই তাই করেন, যা থেকে আরো বেশি পয়সা আসবে৷ কাজেই চারণভূমির ভালোমন্দ তাদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়নি৷''

কৃষি অর্থনীতিবিদ গুস্তাভো মারিনো ‘আভেস আর্হেন্টিনাস' পক্ষী সংরক্ষণ সংগঠন গড়ে তুলে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেছেন৷ জমির মালিক যাঁরা, তাঁরাই এ কাজে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন: যেমন হাইনেস পরিবার৷ তাঁরা মোট পাঁচ হাজার হেক্টার জমির মালিক৷

কৃষি অর্থনীতিবিদ গুস্তাভো মারিনো জানালেন, ‘‘আমরা এমন একটা মডেল খুঁজেছি, যাতে পরিবেশ সংরক্ষণ আর কৃষি উৎপাদন, অর্থাৎ পশুপালন – দুই-ই একসঙ্গে চলতে পারে৷ আমরা খেয়াল করেছি, যে সব জায়গায় বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীদের দেখতে পাওয়া যায়, ঠিক সেখানেই গরুর পাল চরছে৷ এ থেকে বোঝা গেছে যে, কৃষি আর পরিবেশের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই, দুই লক্ষ্যের সহাবস্থান খুবই সম্ভব৷''

চারণভূমি সুরক্ষা

প্রকৃতিকে বাঁচানোর জন্য পরিবেশ সংরক্ষণকারীরা পশুপালকদের সঙ্গে একযোগে একটি ‘চারণভূমি সুরক্ষা জোট' গঠন করেছেন৷ যেহেতু পশুপালকরা তাদের জমির একাংশ ফেলে রাখেন, সেহেতু সেখানে আজ নানা ধরনের বিরল পাখি দেখতে পাওয়া যায়৷ যেমন এই লালগলা টাইরান্ট পাখিটি৷

খামার কর্ত্রীপাট্রিসিয়া হাইনেস বললেন, ‘‘চারণভূমি সুরক্ষা জোট-এর সদস্য হিসেবে আমরা শিখেছি যে, বিশেষ কষ্ট না করেই যা আছে, তা রক্ষা করা যায়৷ আর যেহেতু আমরা প্রকৃতিকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি, সেহেতু আমাদের গোড়া থেকেই বিশ্বাস ছিল যে, এতে কাজ হবে৷''

অপরদিকে হাইনেস পরিবারকে অর্থোপার্জনের কথাও ভাবতে হবে – নয়ত খামার ও তার বাদবাকি আনুষঙ্গিক চলবে কী করে? পরিবেশ সংরক্ষণকারীরা খামার মালিকদের নতুন সব ব্যবসার আইডিয়া দিয়েও সাহায্য করছেন৷ কয়েক বছর হলো হাইনেসরা তাঁদের খামারে টুরিস্টদের আসার ব্যবস্থা করেছেন৷ আজ যেমন একদল এসেছেন খামারের চারপাশে বিরল পাখি দেখার আশায়৷ ‘এস্তানসিয়া ভিরোকাই' খামারের কর্ত্রী পাট্রিসিয়া হাইনেস জানান,: ‘‘আমি উপলব্ধি করেছি যে, পরিকল্পনা করে কাজ করলে এ থেকে ভালো রোজগার করা যেতে পারে৷ এছাড়া কিছু কিছু জায়গায় প্রকৃতি যেমনভাবে আছে, তেমনভাবে ফেলে রাখার একটা ভালো কারণ পাওয়া যায়৷''

গুস্তাভো মারিনো ও তাঁর সহকর্মীরা খামার মালিকদের পাখি দেখতে শেখাচ্ছেন, যাতে তারা টুরিস্টদের পাখি দেখাতে পারেন৷ অপেশাদার পক্ষিবিশারদদের কাছে খামারটি হলো একটি স্বর্গ, যেখানে আর্জেন্টিনার ‘পাম্পা'-র সব সম্পদ এক নজরে দেখতে পাওয়া যায়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ