গরু ঢেঁকুরের জন্য কর দিতে হয় যে দেশে
১৫ জানুয়ারি ২০২৫ঢেঁকুর তোলা গরুর বিরুদ্ধে সম্প্রতি ব্যবস্থা নিয়েছে ডেনমার্ক সরকার৷ কারণ সেগুলো ঢেঁকুরের সময় মিথেন গ্যাস ছাড়ে যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ ঢেঁকুর তোলা গরু পালায় তাই কৃষকদের বাড়তি কর দিতে হচ্ছে৷ গবাদি পশু পালনকারী ক্রিস্টিয়ান কখের সঙ্গে এই নিয়ে কথা বলেছে ডিডাব্লিউ, যার আবাস ক্রিস্টিয়ানসফিল্ড নামের এক ছোট্ট গ্রামে৷ একহাজার গরুর মালিক তিনি৷ শুরুতেই গরু কেন ঢেঁকুর তোলে সেকথা জানালেন কখ৷
তিনি বলেন, ‘‘মুশকিল হচ্ছে গরু জাবর-কাটা পশু৷ ফলে খাবার কয়েকটি পাকস্থলীর মধ্য দিয়ে যায়৷ আর এই প্রক্রিয়ায় মিথেন উৎপন্ন হয় যা ঢেঁকুর আকারে বের হয়ে যায়৷''
যেহেতু মিথেন পরিবেশের জন্য কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর, তাই ডেনমার্ক ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ গড়ে দশটি গরুর ঢেঁকুরে বছরে এক টন মিথেন নির্গত হয়৷ টন প্রতি এই মিথেনের উপর কর দশ ইউরো৷
এই পরিমান কর দিতে রাজি হয়েছে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলো৷ বিষয়টি নিয়ে সন্তুষ্ট ডেনমার্কের কৃষি মন্ত্রণালয়ও৷
দেশটির খাদ্য, কৃষি এবং মৎস বিষয়ক মন্ত্রী ইয়াকব ইয়েন্সন বলেন, ‘‘এক্ষেত্রে বার্তাটি হচ্ছে কৃষকদেরকে আরো পরিবেশবান্ধব খামার গড়তে হবে৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা খামারের কিছু জমি নিয়ে নেবো এবং সেখানে বন গড়বো৷ আর এটা দ্রুত করতে চাই আমরা৷ আমি বিশ্বাস করি কর সংক্রান্ত যে সমঝোতায় আমরা পৌঁছেছি সেটার কারণে এসব কিছু আগের চেয়েও দ্রুত গতিতে করা যাবে৷''
তবে ইউরোপের অন্যত্র এই বিষয়ে সদিচ্ছা অনেক কম৷ জার্মানি এবং ফ্রান্সে কৃষকরা ছোটখাট ইস্যুতেও বড় বড় প্রতিবাদ করেন৷
গবাদি পশু পালক ক্রিস্টিয়ান কখ বলেন, ‘‘আমি মনে করি ডেনমার্কের মানসিকতা একটু আলাদা৷ আমরা সাধারণ মানুষকে বিরক্ত করে ট্রাক্টর নিয়ে প্রতিবাদ করতে চাই না৷''
বন গড়তে আবাসযোগ্য জমি ছেড়ে দেয়াটা ডেনিশ কৃষকদের জন্য এক বড় সিদ্ধান্ত৷ কিন্তু দেশটির লেক আর সমুদ্রের খাঁড়ির মান উন্নয়নে এটা দরকার৷ বাড়াবাড়ি রকমের কৃষিকাজের কারণে সেগুলো দূষিত হচ্ছে৷ জলের আধারের কাছে কম কৃষির মানে পানি দূষণও কম৷
ক্রিস্টিয়ান কখ এটাও জানেন কম ঢেঁকুর উৎপাদন হয় এমন খাবার গরুকে দিলে এসংক্রান্ত করের বোঝাও কমবে৷
ডেনমার্কের পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ক সংঘ অবশ্য চায় না কৃষকরা গবাদি পশুর খাদ্য পরিবর্তন করুক৷ এটি মনে করে এসংক্রান্ত চুক্তি বেশ দুর্বল৷
ডেনিশ সোসাইটি ফর নেচার কনজারভেশনের ট্যুঁ ন্যুঁ গর বলেন, ‘‘বিশেষ করে এই অংশটা তত মজবুত নয় যতটা আমরা আশা করেছিলাম৷ আমরা আশঙ্কা করি কিছু কৃষকের হয়ত কোনো করই দিতে হবে না৷ তাই আমরা চুক্তিটি আরো মজবুত আশা করেছিলাম৷''
গরুর ঢেঁকুর সংক্রান্ত করের ব্যাপারে ভিন্নমত সত্ত্বেও অবশ্য সবপক্ষ বর্তমান সমঝোতায় সম্মতি দিয়েছে৷ খাদ্য, কৃষি এবং মৎস বিষয়ক মন্ত্রী ইয়াকব ইয়েন্সন বলেন, ‘‘ডেনমার্কে আমাদের একে অপরের সঙ্গে কথা বলার দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে৷ আমরা একটি ছোট্ট দেশ এবং আমাদের একটি ডেনিশ মডেল রয়েছে যার আওতায় আমরা সবপক্ষ একত্রে বসি৷ সরকার, বিভিন্ন সংগঠন, এক্ষেত্রে কৃষকরা এবং সবুজ সংগঠন মিলে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছেছে৷''
গ্রিনপিসের ক্রিস্টিয়ান ফ্রমবার্গ অবশ্য এই আলোচনার অংশ ছিলেন না৷ তিনি বেশ হতাশ৷ ফ্রমবার্গ বলেন, ‘‘এই চুক্তি গরু, শুকর এবং অন্যান্য প্রাণীর সংখ্যা অনেকটা স্থির পর্যায়ে রাখবে৷ এটি আসলে অনেক বেশি উদ্ভিদনির্ভর কৃষির বিপরীতে কোনো সমাধান দিচ্ছে না৷ অর্থাৎ এই চুক্তির ফলে আমাদের সাগরগুলো দূষণমুক্ত হবে মনে করছি না৷''
তারপরও এই চুক্তি ইউরোপ এবং বিশ্বের মধ্যে ডেনমার্ককে এক্ষেত্রে অগ্রদূত করেছে৷ ক্রিস্টিয়ান কখের গরুগুলোও নিশ্চিন্তে ঢেঁকুর তুলতে পারছে৷
প্রতিবেদন: অ্যাক্সেল ব়্যুভল্ট/এআই