বহুল প্রচলিত গর্ভনিরোধক ওষুধ মিফেপ্রিস্টন বিক্রি নিয়ে বিতর্কিত রায় দিয়েছে একটি স্থানীয় আদালত। মামলাটি গড়ালো সুপ্রিম কোর্টে।
বিজ্ঞাপন
অ্যাবরশন বা গর্ভপাত নিয়ে বিতর্ক চলছে, তারই মধ্যে গর্ভনিরোধক ওষুধ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে অ্যামেরিকায়। নিউ অরলিনসের ফিফথ ইউএস সার্কিট কোর্ট সম্প্রতি যে রায় দিয়েছে, তা নিম্ন আদালতের রায় খণ্ডন করলেও বিতর্ক থামাতে পারেনি।
এর আগে নিম্ন আদালত বলেছিল, ওষুধটি বাজার থেকে সরিয়ে নিতে হবে। আপিল আদালত জানিয়েছে, ওষুধটি বিক্রি হলেও তার ব্যবহার যথেষ্ট কমিয়ে ফেলতে হবে। গর্ভধারণের সাত মাস পর্যন্ত এই ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ ব্যবহার না করাই ভালো বলে জানিয়েছে আদালত।
জার্মানিতে যুক্তরাষ্ট্রের মতো গর্ভপাত-বিরোধী বিক্ষোভ
যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাত ক্লিনিকের সামনে গর্ভপাত-বিরোধী বিক্ষোভ সাধারণ ঘটনা৷ জার্মানিতেও এমন বিক্ষোভ হয়ে থাকে৷ তবে এটি নিষিদ্ধ করতে চান জার্মান পরিবারমন্ত্রী৷
ছবি: Helen Whittle/DW
বিক্ষোভ
সম্প্রতি ‘ইউরোপ্রোলাইফ’ সংগঠনের কয়েকজন বিক্ষোভকারী জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ‘প্রো ফ্যামিলিয়া’র কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন৷ তাদের কারো কারো হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে ছিল হাসিখুশি বাচ্চার ছবি৷ কারো প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘আনবর্ন লাইভস ম্যাটার’ বা ‘গর্ভপাত সমাধান নয়’ ইত্যাদি৷
ছবি: Helen Whittle/DW
বিক্ষোভের প্রভাব
ক্লাউডিয়া হোমান নয় বছর ধরে ফ্রাঙ্কফুর্টের প্রো ফ্যামিলিয়া অফিসে কাজ করেন৷ ২০১৭ সালে তিনি প্রথম এমন বিক্ষোভ দেখেছিলেন৷ হোমান বলেন, অফিসের সামনে এমন বিক্ষোভ, যারা পরামর্শের জন্য তাদের অফিসে যেতে চান, তাদের উপর এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলে৷ এছাড়া অনেকে পরামর্শ নিতে যেতে ভয়ও পান বলে জানান তিনি৷
ছবি: Helen Whittle/DW
গণমাধ্যমে তেমন প্রচার নেই
যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন গর্ভপাত কার্যালয়ের সামনে এমন বিক্ষোভ সাধারণ ঘটনা৷ জার্মানি ও ইউরোপেও এমন বিক্ষোভ হয়৷ তবে গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর বেশি প্রকাশিত হয় না৷
ছবি: Sachelle Babbar/ZUMA/picture alliance
রোল মডেল যুক্তরাষ্ট্র
বার্লিনের সাংবাদিক উলি ইয়েনশ ২০ বছরের বেশি সময় ধরে এ ধরনের বিক্ষোভ সম্পর্কে খবর রাখছেন৷ তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গর্ভপাতবিরোধী আন্দোলন জার্মানি ও ইউরোপে রোল মডেল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের আন্দোলনের কৌশল অনুসরণ করা ছাড়াও সে দেশের কর্মীদের সঙ্গে ইউরোপের বিক্ষোভকারীরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন বলে জানান ইয়েনশ৷
ছবি: Evelyn Hockstein/REUTERS
আইন প্রণয়নের উদ্যোগ
গর্ভপাতবিরোধী বিক্ষোভকারীরা যেন গর্ভপাত ক্লিনিকগুলোর সামনে জ হতে না পারেন সে কারণে আইন করার অঙ্গীকার করেছেন জার্মানির পরিবারমন্ত্রী লিজা পাউস৷ তিনি বলেন, ‘‘নারীদের অবশ্যই কাউন্সেলিং পরিষেবা এবং গর্ভপাত করায় এমন ক্লিনিকে বাধাহীনভাবে যাওয়ার সুযোগ থাকতে হবে৷’’
ছবি: Carsten Koall/dpa/picture alliance
জার্মানিতে গর্ভপাত অবৈধ, তবে...
জার্মানির ক্রিমিনাল কোডের ২১৮ ধারা অনুযায়ী গর্ভপাত অবৈধ৷ তবে গর্ভধারণের পর সর্বোচ্চ ১২ সপ্তাহের মধ্যে যদি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সার্টিফিকেট পাওয়া যায় তাহলে সার্টিফিকেট পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে গর্ভপাত করানা সম্ভব৷
ছবি: Sachelle Babbar/ZUMA/picture alliance
পরিসংখ্যান
জার্মানির পরিসংখ্যান কার্যালয়ের হিসেবে, দেশটিতে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ গর্ভপাত করানো হয়৷ ১৯৯৬ সালে সংখ্যাটি ছিল প্রায় এক লাখ ৩১ হাজার৷ জার্মানির কিছু অঞ্চলে গর্ভপাতের জন্য ক্লিনিক পাওয়া কঠিন৷ কিছু শহরে একটিও নেই৷ ২০০৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে জার্মানিতে গর্ভপাত ক্লিনিকের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে৷
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
‘শিশু হত্যাকারী’
নেদারল্যান্ডসের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ গাবি রাফেন বলছেন, জার্মানি থেকে অনেকে তার ক্লিনিকে গর্ভপাত করাতে যাচ্ছেন৷ সে কারণে গত নভেম্বরে তিনি ডর্টমুন্ডে একটি ক্লিনিক খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ এর পরপরই তিনি গর্ভপাত বিরোধীদের লক্ষ্যে পরিণত হন৷ তাকে ‘শিশু হত্যাকারী’ বলা হয়েছে এবং তার ঠিকানা ও টেলিফোন নম্বর বিভিন্ন গর্ভপাত-বিরোধী ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে৷
ছবি: Helen Whittle/DW
8 ছবি1 | 8
আদালতের রায় অবশ্য এখনই কার্যকর হচ্ছে না। মামলাটি এবার সুপ্রিম কোর্টে গেছে। সেখানে শুনানি শেষ হওয়ার পরেই ওষুধটির বিক্রি নিয়ে চূড়ান্ত রায় জানা যাবে।
নারী অধিকার নিয়ে যারা আন্দোলন করেন তাদের বক্তব্য, আদালতের সাম্প্রতিক রায় নারী অধিকারের বিরোধী। গর্ভপাত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই তারা আন্দোলন করছেন। গর্ভপাত নারীর অধিকার বলে তাদের দাবি।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ওষুধ প্রস্তুকারক সংস্থা এবং মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ সংস্থাকে আদালত এই ওষুধটি বিষয়ে একাধিক প্রশ্ন করেছিল। অভিযোগ, এফডিএ সব প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি। ফলে ওষুধটি কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠে এসেছে। সেই প্রশ্নগুলিকে সামনে রেখেই আদালত সাম্প্রতিক রায়টি দিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য। ওষুধ প্রস্তুকারক সংস্থা অবশ্য প্রকাশ্যে এবিষয়ে কোনো কথা এখনো বলেনি।