গর্ভপাতের অধিকারকে সাংবিধানিক করতে এক ধাপ এগোলো ফ্রান্স
৩১ জানুয়ারি ২০২৪
ফ্রান্সে নারীর গর্ভপাতের অধিকারকে সাংবিধনিক করতে বিল পাস করেছে ন্যাশনাল অ্য়াসেম্বলি। এবার সেনেটে ভোটাভুটি হবে।
জনমত সমীক্ষা বলছে, ফ্রান্সে ৮৯ শতাংশ মানুষ গর্ভপাতকে সাংবিধানিক অধিকার হিসাবে চানছবি: Thomas Samson/AFP
বিজ্ঞাপন
প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ নারীদের এই অধিকারকে সংবিধানসম্মত করতে বদ্ধপরিকর। ফ্রান্সের পর্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে এই বিল বিপুল সংখ্য়াগরিষ্ঠতা নিয়ে পাস হয়েছে।
বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ৪৯৩টি ও বিপক্ষে মাত্র ৩০টি। মাক্রোঁর নেতৃত্বে জোট এবং বিরোধী বামপন্থিরা সকলেই এই বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
বিচারবিভাগীয় মন্ত্রী মোরেত্তি জানিয়েছেন, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে নারীদের ইতিহাসের একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত সৃষ্টি হলো।
কীভাবে সংবিধান সংশোধন হবে?
ফ্রান্সে সংবিধান সংশোধন করতে গেলে পর্লামেন্টের দুই কক্ষেই বিলটি প্রথমে অনুমোদন করাতে হয়। তারপর হয় গণভোট নিতে হয় অথবা পর্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনে পাঁচভাগের তিনভাগ সদস্য যদি বিলের পক্ষে ভোট দেন, তাহলে সংবিধান সংশোধন করা যায়।
১৯৭৩ সালে এক মামলার রায়ে যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা পেয়েছিলেন গর্ভপাতের অধিকার৷ সেই অধিকার এখন আইনত নিষিদ্ধ৷ গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে চলছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ...
ছবি: Evelyn Hockstein/REUTERS
৪৯ বছর পর…
১৯৭৩ সালের রো বনাম ওয়েড মামলা এতদিন যুক্তরাষ্ট্রে নারী অধিকার ইতিহাসের মাইলফলক মামলার মর্যাদা পেয়েছে৷সম্প্রতি ডবস বনাম নারীদের স্বাস্থ্য সংস্থার গর্ভপাত বিষয়ক এক মামলায় ৪৯ বছর আগে দেয়া গর্ভপাতের অধিকার আইনত নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট৷ সর্বোচ্চ আদালতের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চলছে বিক্ষোভ৷ ওপরের ছবিতে নিউইয়র্কের বিক্ষোভ মিছিল৷
ছবি: CAITLIN OCHS/REUTERS
নারীরা ভীত
সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানানো এক নারীর হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘ (এই রায়ে) আমাদের সবারই ভয় পাওয়া উচিত৷’’ বিক্ষোভকারীরা মনে করেন, গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নিলে অনেক নারীর জীবন সংকটে পড়বে৷
ছবি: Caitlin Ochs/REUTERS
এ রায় গর্ভধারণ বাধ্যতামূলক করার নামান্তর...
অনেকেই মনে করছেন গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নেয়া মানে অনেক নারীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে গর্ভধারণে বাধ্য করা৷ তাই ছবির প্ল্যাকার্ডে ‘‘কোনো বাধ্যতামূলক গর্ভধারণ নয়’’ লিখে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানাচ্ছেন এক নারী৷ ওহাইয়োর কলম্বাস শহরের ছবি৷
ছবি: Megan Jelinger/REUTERS
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও গর্ভপাত
এক নারীর (মাঝখানে) হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘অ্যাবরশন ইজ হেল্থকেয়ার৷’’ তার মতো অনেকেই মনে করেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীর সুস্থ জীবনের স্বার্থেই গর্ভপাতের অধিকার থাকা প্রয়োজন৷ ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মায়ামির ছবি৷
ছবি: Marco Bello/REUTERS
‘শরীর আমার, সিদ্ধান্তও আমার...’
মায়ামির বিক্ষোভ সমাবেশের ছবি৷এক বিক্ষোভকারীর হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘নট ইয়োর বডি, নট ইওর লাইফ, নট ইয়োর চয়েস৷’’ এর মাধ্যমে আদালতকে তিনি বলতে চাইছেন, শরীর যেহেতু নারীর, জীবন নারীর, তাই গর্ভপাত করাবেন কি করাবেন না তা ঠিক করার অধিকারও নারীরই থাকা উচিত৷
ছবি: Marco Bello/REUTERS
‘শরীর থেকে দূরে রাখুন’
নিউিয়র্কের রাস্তায় এক নারী আদালতকে বলছেন, ‘‘আইনগুলো আমার শরীর থেকে দূরে রাখো৷’’
ছবি: Brendan McDermid/REUTERS
নারীদের বাঁচান!
ওয়াশিংটনের এক বিক্ষোভকারী প্ল্যাকার্ডে লিখেছেন, ‘‘নারীরা মারা যাবেন৷’’ অর্থাৎ, তিনি মনে করেন গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নেয়ার কারণে অনেক নারীর অকালমৃত্যু হবে৷ তাই নারীদের জীবন রক্ষার স্বার্থেই গর্ভপাতের অধিকারের দাবি জানাচ্ছেন তিনি৷
ছবি: Evelyn Hockstein/REUTERS
নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নাও!
ম্যাসাচুসেটসের এক বিক্ষোভকারীর হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘ আমাদের শরীর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নাও!’’
ছবি: Brian Snyder/REUTERS
পুরুষদের হুমকি...
নিউইয়র্কের এই নারী জানাচ্ছেন, রো বনাম ওয়েড মামলার রায়ে দেয়া গর্ভপাতের অধিকার ফিরে না আসা পর্যন্ত তিনি পুরুষদের সঙ্গে যৌনমিলনে বিরত থাকবেন৷
ছবি: Brendan McDermid/REUTERS
9 ছবি1 | 9
মাক্রোঁর সরকার দ্বিতীয় পথটি নিয়েছে। যদিও ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে বিলটি নিয়ে যে ধরনের সমর্থন মাক্রোঁ পেয়েছেন, সেনেটে তা পাবেন কি না, তানিয়ে সংশয় আছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি সেনেটে বিলটি নিয়ে আলোচনা শুরু হবে।
ফ্রান্সের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে কেউই গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। কিন্তু সেনেটে কিছু দক্ষিণপন্থি সদস্য চাইছেন না, সংবিধানে গর্ভপাতের বিষয়টি থাক। তাদের বক্তব্য, এটা সাংবিধানিক বিষয় নয়। ফ্রান্সে গর্ভপাতের সুযোগ নিয়েও কোনো প্রশ্ন নেই।
ফ্রান্সে গর্ভপাত কি বৈধ?
১৯৭৫ সালে ফ্রান্সে একটি আইন পাস করা হয় এবং সেখানে বলা হয়েছে, গর্ভপাত কোনো অপরাধ নয়। কিন্তু সংবিধানে গর্ভপাতের অধিকারের গ্য়ারান্টি দেয়া হয়নি।
তারপর থেকে গর্ভপাতের শর্তগুলি ভালো করার জন্য আরো আইন পাস হয়েছে। বিশেষ করে নারীদের স্বাস্থ্য ও তাদের নামপ্রকাশ যাতে না হয়, সেদিকটা নিশ্চিত করার চেষ্টা হয়েছে। নারীদের উপর আর্থিক চাপ কম করার চেষ্টা হয়েছে।
সরকারি তথ্য বলছে, ২০২২ সালে ফ্রান্সে দুই লাখ ৩৪ হাজার গর্ভপাত হয়েছে।
২০২২ সালের নভেম্বরে জনমত সমীক্ষার ফল হলো, ৮৯ শতাংশ মানুষ গর্ভপাতের অধিকারকে সাংবিধানিক করার পক্ষে।