গর্ভপাতের আইন সংশোধনের সুপারিশ করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷ এতে বলা হয়েছে, গর্ভ নিরোধক ওষুধপত্রে কাজ না হবার দরুণ কোনো অবিবাহিতা বা সিঙ্গল মহিলা যদি গর্ভবতী হয়ে পড়েন, তাহলে তিনি বৈধভাবে গর্ভপাত করাতে পারবেন৷
বিজ্ঞাপন
গর্ভপাতের নিয়ম-কানুন আরো উদার করতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৯৭১ সালের ‘মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি' আইন সংশোধনের যেসব সুপরিশ করেছেন, তা বর্তমানে ক্যাবিনেটের বিবেচনাধীন আছে৷ অনুমোদিত হবার পর তা সংসদে পেশ করা হবে আগামী বাজেট অধিবেশনে৷ সুপারিশের মধ্যে আছে কোনো মহিলা সিঙ্গল বা অবিবাহিতা কিংবা কুমারি হন, গর্ভনিরোধক ওষুধপত্রে কাজ না হবার দরুণ যদি তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন, সেক্ষেত্রে তিনি রেজিস্টার্ড ডাক্তারের সাহায্যে যদি গর্ভপাত করাতে চান, তাহলে তা বৈধ বলে ধরা হবে৷ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে মোদী সরকার যত শীঘ্র সম্বব তা কার্যকর করতে উদ্যোগী৷ বলা হয়েছে, বর্তমান আইন বৈষম্যমূলক৷ কারণ কেবলমাত্র বিবাহিতা মহিলারাই গর্ভ নষ্ট করতে পারেন আইনসম্মতভাবে৷
যাঁরা সিঙ্গল বা অবিবাহিতা, তাঁরা যদি ‘কনট্রাসেপ্টিভ' পদ্ধতি ঠিকঠাক কাজ না করার কারণে গর্ভবতী হয়ে পড়েন, তাহলে তাঁরা অবাঞ্ছিত গর্ভ নষ্ট করতে গোপনে ছুটে যান অ-প্রশিক্ষিত, আনাড়ি ডাক্তার বা হাতুড়ে ধাইদের কাছে৷ এটা করতে গিয়ে বেশরভাগই হয় মারা যান, না হয় শারীরীক ব্যাধির শিকার হন, বলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক উচ্চ আধিকারিক৷ সরকার এইসব অবাঞ্ছিত মাতৃত্ব এড়াতে এর সুযোগ-সুবিধার পরিসর আরো বাড়াতে চায়৷ যুক্ত করতে চায় ‘অক্সিলিয়ারি নার্সিং মিডওয়াইফ' বা এএনএম এবং দক্ষ ডাক্তারদের৷
শুধু তাই নয়, উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আয়ুশ-এর মতো হোমিওপ্যাথি এবং প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিত্সক-নার্সরা বিনা ছুরি-কাঁচিতে গর্ভপাত করাতে পারবেন৷ এর ফলে বহু অবিবাহিতা বা সিঙ্গল কিংবা কুমারি মহিলা বৈধভাবে এবং নিরাপদে অনাকাঙ্খিত গর্ভ নষ্ট করাতে পারবেন৷ এর ফলে বিশেষভাবে উপকৃত হবেন সেইসব নারী, যাঁরা ধর্ষণের শিকার, যাঁরা দৈহিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী৷ তবে সেটা সাধারণত করতে হবে ২০ থেকে ২৪ সপ্তাহের মধ্যে৷ এখন ডাক্তারদের পরামর্শ মতো ২০ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত বৈধ৷ তবে দেখা গেছে গর্ভের সন্তানের অস্বাভাবিকতা ২০ সপ্তাহের আগে ধরা পড়ে না৷ সবথেকে বড় কথা, নতুন সংশোধনীতে মহিলাদের দেহ ও মনের ওপর তাঁর নিজস্ব অধিকার কায়েম হবে৷ ধর্ষিতা, কুমারি, সিঙ্গল বা অবিবাহিতারা সামাজিক লজ্জা ও পারিবারিক কলঙ্কের হাত থেকে বাঁচবেন৷ এমনটাই মনে করেন মহিলাদের যৌন অধিকার, মাতৃত্ব এবং গর্ভপাতের ফলে মৃত্যুর হার কমানোর কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত এনজিও আপস-এর নির্বাহিক পরিচালক৷ আশা করা যায় যত শীঘ্র সম্ভব এই আইন সংসদে পাশ হবে এবং সরকার তা কার্যকর করবেন, বলেন তিনি৷
ওদিকে সম্পূর্ণ বিপরীত মত প্রকাশ করেন নারীবাদী স্বেচ্ছাসেবী কর্মী শাশ্বতী ঘোষ৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ‘মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি (এমটিপি) ১৯৭১ সালের আইনে কোথাও বলা হয়নি যে, কোনো সাবালিকা বিবাহিত বা অবিবাহিত মহিলার গর্ভপাত বৈধ নয়৷ যেটা নির্দিষ্ট করে বলা আছে, তাহলে তাঁকে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে এবং গর্ভ সঞ্চারের ২০ সপ্তাহের মধ্যে তা করাতে হবে৷ আর মেয়ে যদি নাবালিকা হয়, তাহলে তাঁর অভিভাবকের লিখিত সম্মতি থাকতে হবে৷
গর্ভপাত৷ অনাকাঙ্খিত সন্তান না নিতে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই চলছে ভ্রুণ হত্যা৷ আর্জেন্টিনায় গর্ভপাত নিষিদ্ধ৷ তারপরও গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন, অনেকে আর কোনোদিন মা হতে পারছেন না৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
স্বাধীনতা...
‘শরীরটা আমার নিজের’ – আর্জেন্টিনার মেয়েরা এখনো স্বাধীনভাবে এ কথা ভাবতে পারেন না৷ গর্ভপাত সেখানে নিষিদ্ধ৷ তা সত্ত্বেও গর্ভপাত চলছে৷ ২৭ বছর বয়সি ক্যামিলাও গর্ভপাত ঘটিয়েছেন, তারপর নিজের ঘাড়ে এঁকেছেন উল্কি, সেখানে লেখা, ‘স্বাধীনতা’৷ তাঁর এ ছবি ‘১১ সপ্তাহ, ২৩ ঘণ্টা, ৫৯ মিনিট – আর্জেন্টিনায় অবৈধ গর্ভপাত’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে দেখানো হচ্ছে৷
ছবি: Goméz Verdi, Franz, Meurice
নববর্ষের প্রাক্কালে...
এ ছবিতে মারা নামের একটি মেয়ের জীবনের গল্প বলার চেষ্টা করা হয়েছে৷ ২১ বছর বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে মারাকে তাঁর বয়ফ্রেন্ডের পরিবার, ‘গর্ভপাত ঘটালে আমরা অভিযোগ দায়ের করবো’ – বলে শাসিয়েছিল৷ হুমকি দিলেও ছেলেবন্ধুর সটকে পড়া কিন্তু তাঁরা ঠেকাননি৷ সঙ্গী চলে যাওয়ার ১২ সপ্তাহ পর বাধ্য হয়ে মারা ব্যাপারটি খুলে বলেন মাকে৷ তারপর ২০০২ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবৈধভাবে গর্ভপাত ঘটিয়ে আবার নতুন জীবন শুরু করেন মারা৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
পুরুষেরও ভোগান্তি
গর্ভপাত অনেক সময় পুরুষদেরও বিপদে ফেলে৷ ফোটোগ্রাফার লিসা ফ্রানৎস, গুয়াদালুপে গোমেজ এবং লেয়া মরিসের কাজগুলো তেমন গল্পগুলোই তুলে ধরছে৷ পেদ্রো নামের এই তরুণ গর্ভপাতের ব্যাপারে তাঁর গার্লফ্রেন্ডকে শুধু সমর্থনই করেননি, তাঁকে ক্লিনিকেও নিয়ে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু গর্ভপাত ঘটানোর পর বিষয়টি নিয়ে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে কথাও বলতে পারেননি৷ সবার আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল, পেদ্রো যেন খুব বড় কোনো অপরাধ করে ফেলেছেন!
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
বাড়িতেই গর্ভপাত
অন্তঃসত্ত্বার পেটে ঘুষি মেরে ভ্রুণ হত্যা, তারপর কাপড়ের হ্যাঙার আর কাপড় সেলাই করার সুঁচ ব্যবহার করে ‘জঞ্জাল’ সাফ করে দেওায়া – আর্জেন্টিনার অনেক অঞ্চলে এভাবেই ঘরে ঘরে হয় গর্ভপাত৷ কোনো ডাক্তার বা নার্স নয়, ঘরের মেয়েরাই এভাবে কাজ সারেন৷ ফলে অকালে ঝরে যায় অনেক নারীর প্রাণ৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
বছরে অন্তত একশ জন...
গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে আর্জেন্টিনায় প্রতিবছর ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজারের মতো নারী জটিল সমস্যায় পড়ে হাসপাতালে ভর্তি হন৷ তাঁদের মধ্যে কমপক্ষে একশ জন সন্তানের আগমন রুখতে গিয়ে নিজেদেরই মৃত্যু ডেকে আনেন৷ আর্জেন্টিনার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মনে করে, বিশেষত দরিদ্র অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে নিজেদের জীবনও বিপন্ন করছেন মেয়েরা৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
১৫০০ ইউরোয় মুশকিল আসান
গর্ভপাত আইনত দণ্ডনীয় হলেও আর্জেন্টিনায় টাকা দিলে এ কাজ সহজেই হয়৷ টাকাটা অবশ্য বেশিই লাগে, কোনো কোনো ডাক্তার এ জন্য ১০ হাজার পেসো বা ১৫০০ ইউরোও নিয়ে থাকেন গর্ভপাত ঘটাতে ইচ্ছুক নারীদের কাছ থেকে৷ জার্মান কারদোসো একজন সার্জন৷ তবে আর্জেন্টাইন ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হয়েও তিনি লড়ছেন গর্ভপাতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার দাবির পক্ষে৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
নারীর পাশে নারী
‘ডিম্বাশয় থেকে তোমার গোলাপরেণু সরিয়ে নাও’ – এভাবেই গর্ভপাতকে আইনসিদ্ধ করানোর আন্দোলনের পক্ষে সোচ্চার আর্জেন্টিনার নারী অধিকার সংগঠন ‘লা রেভুয়েলতা’৷ ক্যাথলিক খ্রিষ্টান প্রধান দেশ আর্জেন্টিনায় বেশ কিছু মানবাধিকার সংগঠন এ দাবির পক্ষে৷ ‘লা রেভুয়েলতা’ শুধু দাবি আদায়ে সোচ্চার নয়, গর্ভপাতে ইচ্ছুক নারীদের উপযুক্ত পরামর্শ দিয়ে গর্ভপাতে সহায়তাও করে তারা৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
দিকনির্দেশনার অভাব
এলুনের বয়স এখন ২১৷ ‘লা রেভুয়েলতা’-র সহায়তায় তিনি গর্ভপাত ঘটিয়েছেন৷ ‘কখন মা হবো, এ সিদ্ধান্ত আমিই নেবো’ – এলুনে এমন কথা বলেছেন ঠিকই, তবে এতদিনে তিনি জেনে গেছেন যে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গর্ভপাত ঘটানোও তাঁর দেশে খুব একটা নিরাপদ নয়৷ ডাক্তাররা ওষুধ কখন, কিভাবে খেতে হবে তা না বলেই বিক্রি করে দেন৷ ফলে অজ্ঞতার ঝুঁকি থেকেই যায়, আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সহায়তা নিতে চেয়েও মৃত্যু এড়াতে পারেন না অনেক নারী৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
জেলখানায় গর্ভপাত
সোনিয়া সানচেজ ছিলেন পতিতা৷ অবৈধভাবে পতিতাবৃত্তির অভিযোগে জেল খেটেছেন অনেকবার৷ কারাবন্দি অবস্থায় গর্ভপাতও ঘটিয়েছেন৷ এক খদ্দের তাঁর মা হতে চাওয়া, না চাওয়ার স্বাধীনতাকেও কিনে নিয়েছিলেন৷ পতিতালয়ের মালিককে বাড়তি টাকা দেয়ায় কনডম ছাড়াই তিনি মিলিত হতেন৷ ফলশ্রুতিতে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন সোনিয়া৷ এই তরুণী এখন নেমেছেন গর্ভপাতের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে৷ ইতিমধ্যে সাফল্যের দেখাও পেয়েছেন৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
আর নীরবতা নয়...
ছবিতে দেখা যাচ্ছে মনিকা নামের এক নারীর শরীরের অনাবৃত একটি অংশ৷ লিসা ফ্রানৎস, গুয়াদালুপে গোমেজ এবং লেয়া মরিসের তোলা ছবি নিয়ে ‘১১ সপ্তাহ, ২৩ ঘণ্টা, ৫৯ মিনিট – আর্জেন্টিনায় অবৈধ গর্ভপাত’ শীর্ষক যে প্রদর্শনী চলছে, সেখানে এ ছবিটিও দেখানো হচ্ছে৷ নিজের এমন একটা ছবি দেখানোর অনুমতি দেয়া মনিকা গর্ভপাতের পক্ষে নিজ বক্তব্য তুলতে গিয়ে শুধু বলেছেন, ‘এটা আমার দেহ’৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
10 ছবি1 | 10
জানতে চাই, তাই যদি হবে, তাহলে হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে নিজেকে তাঁরা মৃত্যর মুখে ঠেলে দেন কেন? ওনার জবাব, সরকারি হাসপাতালে প্রাপ্তবয়স্ক যে কোনো মহিলা গর্ভপাত করাতে পারেন বৈধভাবে৷ এটা প্রচার করা হয় না৷ এমনকি মুখেও বলা হয় না৷ কেন হয় না, তা সরকারই বলতে পারবেন৷ কোথাও লেখা থাকে না যে, হাতুড়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন না৷ সরকারি হাসপাতালগুলির কোথাও এ বিষয়ে কোনো বিজ্ঞপ্তি দেখা যায় না৷ হাসপাতালে গেলেও নানা রকমভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাঁদের৷ ফলে হাতুড়ে ডাক্তারদের পোয়া বারো৷ পুরো ব্যাপারটাকেই মনে হয়, ন্যাকামি৷ তবে হ্যাঁ, গর্ভস্থ সন্তানের যদি প্রতিবন্ধী হবার আশংকা আছে, এই মর্মে রেজিস্টার্ড ডাক্তারা যদি মনে করেন, সেক্ষেত্রে তা ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে৷ ডয়চে ভেলেকে বললেন নারীবাদী কর্মী শাশ্বতী ঘোষ৷
উল্লেখ্য, সম্প্রতি এক নাবালিকার গর্ভ সঞ্চারের ২৪ সপ্তাহ পেরিয়ে যাবার পরও ব্যতিক্রম হিসেবে মেডিক্যাল বোর্ডের সম্মতিতে তাঁর গর্ভপাত করানোর অনুমতি দেন শীর্ষ আদালত৷ রায় দেন, মেয়েটির দেহ ও মনের অধিকারের সঙ্গে রাষ্ট্রের বৈধ স্বার্থের একটা ভারসাম্য থাকা দরকার৷ গর্ভস্থ সন্তানের বিকলাঙ্গ হবার আশংকা থাকলে বা মায়ের জীবনের গুরুতর ঝুঁকি থাকলে মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শে ২৪ সপ্তাহের পরও ব্যতিক্রম হিসেবে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে৷ পাশাপাশি, গর্ভের সন্তানের বা ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য ‘আলট্রাসাউন্ড' পরীক্ষা নিষিদ্ধ করার ওপর জোর দিয়েছে শীর্ষ আদালত৷ দেখা গেছে, ভ্রুণ যদি কন্যা সন্তান হয়, তাহলে তা নষ্ট করে ফেলার একটা প্রবণতা সমাজে থেকেই গেছে৷
মোদী সরকার এই যে গর্ভপাতের আইন উদার করার উদ্যোগ নিয়েছে – এটাকে কি আপনি সমর্থন করেন? জানান নীচের ঘরে৷
হবু মায়েদের জন্য ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
‘মা’ ডাক শোনার স্বপ্ন প্রতিটি নারীর আর একজন নারী হয়ত পূর্ণতা পান মাতৃত্বেই৷ কিন্তু মা হতে যে দশ মাসের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়! এই পথকে সহজ করা এবং সুস্থ সন্তানের জন্ম দেওয়ার কিছু সহজ উপায় নিয়েই এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW
হবু মায়ের অনুভূতি
‘মা’ – এটি একটি মাত্র শব্দ, যার সাথে মিশে আছে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা৷ সন্তানের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা না করেই সন্তানকে মা পরম যত্নে বড় করে তোলেন, সেই গর্ভাবস্থা থেকেই৷ পৃথিবীতে একমাত্র মা-ই জানেন সন্তানকে গর্ভে ধারণ করার কষ্ট, ধৈর্য আর আনন্দের অনুভূতিটুকু৷
ছবি: imago/CTK Photo
স্বামী ও পরিবারের অন্যান্যদের সহযোগিতা
গর্ভবতী মায়েদের শরীরে হরমন পরিবর্তনের কারণে এ সময়ে তাঁদের অনেকেই কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে৷ আর এ কথাটি স্বামীসহ পরিবারের সকলকেই মনে রাখতে হবে৷ তাঁকে খুশি রাখার চেষ্টা করতে হবে, কারণ এতে পরিবারের অনাগত সদস্যটিরই মঙ্গল৷ শারীরিক এবং মানসিকভাবে মা সুস্থ থাকলে তার প্রভাব যে পড়ে শিশুটির ওপরও৷
ছবি: fotolia/diegoa8024
হবু মায়ের দিনের শুরু
‘‘সকালে উঠেই কুসুম গরম পানিতে গোসল সেরে নিন৷ তারপর পুরো শরীরে আস্তে আস্তে অলিভ অয়েল মাসাজ করে নিন৷ অন্য তেলও অবশ্য মালিশ করা যেতে পারে, তবে অলিভ অয়েলে সন্তান জন্মের পর সাধারণত পেটে আর কোনো দাগ থকে না৷’’ এমনটাই বলেন জার্মান ধাত্রী হাইকে শোয়ার্ৎস৷
ছবি: Fotolia/Subbotina Anna
সুন্দর ত্বক
গর্ভকালীন সময়ে শরীরে হরমনের পরিবর্তনের কারণে হবু মায়ের ত্বকেও দেখা দেয় নানা সমস্যা, বিশেষকরে মুখমণ্ডলে৷ তাই সপ্তাহে একবার ‘মাস্ক’ ব্যবহার করতে পারেন৷ যেমন একটি পাকা অ্যাভোকাডোর সাথে দু’চামচ ছানা মিশিয়ে চোখ ছাড়া পুরো মুখে লাগিয়ে দশ মিনিট পর গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন৷ তারপর ভালো কোনো ‘সানস্ক্রিন’ লাগিয়ে ফেলুন৷
ছবি: Fotolia/studiovespa
গর্ভকালীন হালকা ব্যায়াম
ঘরের মেঝেতে পা মুড়ে বসুন এবং হতের তালু সামনে নিয়ে বুকের কাছে রাখুন৷ খুবই মনোযোগ দিয়ে আস্তে আস্তে গভীরভাবে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিন এবং পেটে থেকে নিঃশ্বাস ছাড়ুন আর ভাবুন – ‘‘এই নিঃশ্বাসের মধ্য দিয়ে আমার সন্তানের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে৷’’ ব্যায়াম কোনো গ্রুপের সাথে করতে পারলে আরো ভালো লাগবে৷
ছবি: Fotolia/Robert Kneschke
হালকা খাবার
এই সময়টাতে অনেকেরই সকালে বেশ খারাপ লাগে বা বমিভাব হয়৷ তাই এক কাপ ভেষজ চা পান করতে পারেন সাথে একটা টোস্ট বা বিস্কুট৷ ধাত্রী হাইকে বলেন, ‘‘এ সময় অনেকেই সকালে গরম নাস্তা পছন্দ করেন৷ আসলে নিজের যা ভালো লাগে সেটাই খাবেন৷ তবে লক্ষ্য রাখবেন যে, সেই খাবার যেন ফাইবার বা আঁশযুক্ত হয়৷ এছাড়া তার সঙ্গে অবশ্যই ফল খেতে ভুলবেন না৷’’
পানি
একজন সুস্থ গর্ভবতীর দিনে কম পক্ষে দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করা উচিত৷ তাই মাঝে মাঝেই অল্প অল্প পানি পান করে নেবেন৷ এতে শরীরটা সারা দিন ঝরঝরে লাগবে এবং রক্ত ঘনও হয়ে যাবে না৷
ছবি: Fotolia/photo 5000
চুলের যত্ন
সাধাণত গর্ভবতী মায়েদের মাথার চুল তেমনভাবে ঝরে না৷ তবে কারো কারো চুলের আগা শুকিয়ে যায়৷ তাই তাঁরা বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন, এতে চুল নরম থাকে৷ তাছাড়া চুলকে সুন্দর ও ঝরঝরে রাখতে সপ্তাহে একদিন রান্নাঘর থেকে দুই টেবল চামচ অলিভ অয়েল, দুই চামচ সাদা দই এবং একটি ডিমের কুসুম মিশিয়ে মাথায় দিয়ে দশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন৷
ছবি: Fotolia/Masson
মুক্ত বাতাস সেবন
‘‘শরীর এবং মনকে সুস্থ রাখতে এবং দুটোর মধ্যে সমতা রক্ষা করতে এই বিশেষ সময়টিতে মুক্ত বাতাস সেবন খুবই জরুরি৷ হাঁটাহাঁটি খুব ভালো, তবে গায়ে জোড় দিয়ে কোনোরকম ব্যায়াম করা উচিত নয়৷ এতে হিতে বিপরিত হতে পারে৷ অন্য ব্যায়াম, অর্থাৎ যাঁরা সাঁতার জানেন তাঁদের জন্য কিছুক্ষণ পানিতে থাকা কোমর এবং পিঠে বেশ আরাম দেয়৷’’ বলেন ধাত্রী হাইকে শোয়ার্ৎস৷
ছবি: imago/emil umdorf
দাঁত ব্রাশ
গর্ভবতী মাকে যেন সব সময় আকর্ষণীয় লাগে, সেজন্য দিনে অন্তত দু’বার দাঁত ব্রাশ করতে হবে, তবে নরম ব্রাশ দিয়ে৷ এ সময় অনেকের মাড়ি নরম হয়ে রক্ত ঝরতে পারে৷ তাই দাঁতের মাড়ি শক্ত রাখতে ক্যামেলিয়া চা দিয়ে কুলি করতে পারেন৷ এছাড়া প্রথম ছয় মাস নিয়মিত দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত বলে জানান ধাত্রী শোয়ার্ৎস৷
ছবি: imago/CHROMORANGE
হোম স্পা
‘‘সন্ধ্যায় বাথটবে কুসুম কুসুম গরম পানি ভর্তি করে তাতে এক গ্লাস দুধ ঢেলে দিন, যা ত্বককে মসৃণ করবে৷ কিছুক্ষণ টবে থাকার পর উঠে গায়ে তেল মালিশও করতে পারেন৷ চাইলে বাথটবে হবু মায়ের সঙ্গী বা কোচ হতে পারেন হবু বাবা৷’’ বলেন হাইকে৷
ছবি: Fotolia/Ariwasabi
পায়ের যত্ন
গর্ভবতী মায়ের জন্য সবচেয়ে বেশি ভারী বোধ হয় তাঁর পা দুটো৷ তাই সকালে বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থাতেই দুই পা খানিকটা উঁচু করে একটু একটু করে ঘোরাবেন৷ এতে রক্তসঞ্চালন ভালো হয়৷ রাতে যদি পা দুটোকে ভারী মনে হয়, তাহলে একটি বাটিতে ঠান্ডা পানি দিয়ে সামান্য লেবুর রস দিন৷ এতে ছোট টাওয়েল ভিজিয়ে পানিটা চিপে উঁচু করা পায়ে দুই মিনিট পেচিয়ে রাখুন৷
ছবি: superfood - Fotolia.com
ডাক্তারি ‘চেকআপ’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পেটের সন্তানটি যেন ভালোভাবে বড় হতে পারে সেজন্য চাই যথেষ্ট সবুজ শাক-সবজি এবং আয়োডিন৷ আরো দরকার আয়রন এবং ক্যালসিয়াম৷ তাই এ সবের কোনোটারই যেন ঘাটতি না থাকে৷ সুতরাং শারীর আর মনের যত্নের পাশাপাশি প্রয়োজন নিয়মিত ডাক্তারি ‘চেকআপ’-ও৷