নিউজিল্যান্ডের সংসদে গর্ভপাতকে অপরাধ হিসেবে না দেখে স্বাস্থ্যগত বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করার বিল পাস হয়েছে৷ স্পষ্টতই এটি প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্নের বিজয়৷ ২০১৭ সাল থেকে তিনি এ নিয়ে কাজ করছিলেন৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার নিউজিল্যান্ডের সংসদ ১৯৭৭ সালের পুরনো গর্ভপাত আইনকে বদলে দেবার পক্ষে রায় দিল৷ সংসদের ৬৮ জন সদস্য এই বদলের পক্ষে রায় দিলেন৷ বিপক্ষে দিলেন ৫১ জন৷ এখন গভর্নর জেনারেল স্বাক্ষর করলেই এটি আইনে পরিণত হবে৷
‘‘৪০ বছরের বেশি সময় ধরে নিউজিল্যান্ডে গর্ভপাতই একমাত্র স্বাস্থ্যগত বিষয় যা অপরাধ বলে বিবেচিত হচ্ছিল,'' বিচার মন্ত্রী অ্যান্ড্রু লিটল এক বিবৃতিতে জানান৷ ‘‘কিন্তু আজ থেকে এটি সঠিকভাবে শুধু স্বাস্থ্যগত বিষয় বলেই বিবেচিত হবে৷''
১৯৭৭ সালের আইন অনুযায়ী, গর্ভপাত একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হত৷ শুধু দু'জন ডাক্তার যদি এই সনদ দিতেন যে গর্ভধারণ নারীর মানসিক বা শারীরিক ঝুঁকির কারণ হতে পারে, তবেই তা করা যেত৷
অবৈধভাবে কেউ গর্ভপাত করলে তার সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান ছিল৷
গর্ভপাতের অধিকার ফিরে পেতে রাস্তায় নারীরা
গর্ভপাত নিষিদ্ধের আইন পাস করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আটটি অঙ্গরাজ্য৷ সবশেষ সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে আলাবামা৷ এই আইনের বিরোধীরা দেশটির সুপ্রিম কোর্টসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন৷
ছবি: Reuters/C. Aluka Berry
গর্ভপাতে নিষেধাজ্ঞা
যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করে আইন পাস করছে৷ গত সপ্তাহে আলাবামা অঙ্গরাজ্যে সব ধরনের গর্ভপাত বাতিলের একটি বিল পাস হয়েছে৷ এমনকি ধর্ষণ এবং অজাচারেও গর্ভপাত করানো যাবে না৷ ওহাইয়ো, জর্জিয়া সহ কিছু রাজ্য গর্ভধারণের ছয় সপ্তাহ কিংবা ভ্রুণে হৃদস্পন্দন শনাক্ত হলে গর্ভপাত করানো যাবে না বলে নতুন আইনে উল্লেখ করেছে৷
ছবি: Reuters/C. Aluka Berry
একটু বেশিই কঠোর
গর্ভপাত নিষিদ্ধকরণ আইন পাসের বিষয়টি রিপাবলিকানদের অন্যতম একটি এজেন্ডা৷ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এর সমর্থক৷ কিন্তু আলাবামা যে আইন করেছে তা অতিরিক্ত কঠোর বলে মনে করছেন তিনিও৷ ধর্ষণ এবং অজাচারের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম না রাখা নিয়ে আপত্তি তাঁরও৷
ছবি: Reuters/L. Bryant
প্রতিবাদের ঝড়
অঙ্গরাজ্যগুলোতে গর্ভপাত নিষিদ্ধের বিতর্কিত আইন বাতিলের দাবিতে ২১ মে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে৷ এর আয়োজন করেছে ৫০টি সংগঠন৷ সবচেয়ে বড় জমায়েত হয়েছে ওয়াশিংটনে সুপ্রিম কোর্টের সামনে৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
‘শরীর আমার, অধিকার আমার’
নতুন আইন কারণে নারী তার শরীরের উপর অধিকার হারাচ্ছে বলে মনে করেন আন্দোলনকারীরা৷ বিক্ষোভকালে এনিয়ে বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্লেকার্ড তারা বহন করেছেন৷ যেমন ছবিতে এক নারীর হাতের প্লেকার্ডটিতে লেখা, ‘‘শরীর আমার, সিদ্ধান্ত আমার, অধিকার আমার, বক্তব্য আমার৷’’
ছবি: Reuters/K. Pulfer Focht
যোগ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা
এই আইনের বিরোধিতা করে আসছেন ডেমোক্রেট দলের নেতারা৷ ২১ তারিখের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে তাঁদের অনেককেই দেখা গেছে৷ আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশের সুযোগ হাতছাড়া করেননি দলটির আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও৷ ছবিতে এক আন্দোলকারীর সাথে দেখা যাচ্ছে সিনেটর ক্রিস্টিন গিলিব্র্যান্ডকে৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
‘সেক্স স্ট্রাইক’
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা আইন বাতিলের দাবিতে অভিনব এক প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন অভিনেত্রী ও মি টু আন্দোলনের নেত্রী অ্যালিসা মিলানো৷ যার নাম দিয়েছেন ‘সেক্স স্ট্রাইক’ বা যৌন ধর্মঘট৷ গর্ভপাত নিষিদ্ধ আইন বাতিলের আগ পর্যন্ত পুরুষদের সাথে যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি নারীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/D. Kambouris
6 ছবি1 | 6
‘আজ এক পরিবর্তন এল'
‘‘আগের আইনটিতে নারীদের গর্ভপাতের জন্য অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হত,'' লিটল ব্যাখ্যা করেন৷
‘‘এতে করে পুরো প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হত এবং সেটা নিরাপদ ছিল না৷''
দেশটির পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান নির্বাহী জ্যাকি এডমন্ড এই ভোট ও এই সত্যকে স্বাগত জানান যে নারীরা অবশেষে তাদের স্বাস্থ্যগত সব সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে পারবেন৷
‘‘এটা চমৎকার যে, সংসদ আজকে এমন এক সিদ্ধান্ত নিল, যা তাদের ৪০ বছর আগেই নেয়া উচিত ছিল,'' বলেন তিনি৷
এদিকে, রক্ষণশীল সংসদ সদস্য সিমিওন ব্রাউন, যিনি এই বিলের বিপক্ষে ছিলেন, বলেন যে জন্মের অপেক্ষায় থাকা একটি শিশুকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে, তাকে সম্মান দেখাতে হবে৷
এই বিল পাস প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন ও তাঁর মধ্যবামপন্থি জোটের জন্য একটি বিজয়৷ এই সংস্কার ২০১৭ সালে তাঁর নির্বাচনী এজেন্ডা ছিল৷
নিউজিল্যান্ডের আগে সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার উচ্চ আদালত গর্ভপাতের বৈধতার পক্ষে রায় দেন৷ আর আয়ারল্যান্ড এক রেফারেন্ডামের মাধ্যমে এর সংস্কার করে৷