1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্য

গর্ভপাত নিষিদ্ধ, কিন্তু এমআর চলছে

৭ মার্চ ২০১৭

ঢাকা ও বেশ কিছু জেলায় কিছু ক্লিনিক আছে যেগুলো প্রধানত ‘এমআর’ (মিন্সট্রুয়াল রেগুলেশন) সেবা দেয়ার জন্যই কাজ করে৷ সরকারি হাসপাতালগুলোতেও এমআর ওয়ার্ড আছে৷ বাংলাদেশে গর্ভপাত বেআইনি৷ কিন্তু ‘এমআর’ তো গর্ভপাতেরই বিকল্প নাম!

শিশু কোলে এক বাঙালি নারী
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/M. Ponir Hossain

মিরপুরের মাজার রোডে বেশ কয়েকটি ক্লিনিক আছে, যেখানে এমআর-এর জন্য ভিড় লেগেই থাকে৷ একেকটি ক্লিনিকে গড়ে প্রতিদিন চার থেকে  পাঁচটি গর্ভপাতের সার্জারি হয়৷ এগুলো ‘এমআর' নামেই হয়৷ একটি ক্লিনিকের একজন পরিচালক জানান, ‘‘সাধারণত অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ এড়াতেই এখানে অনেকে এমআর করাতে আসেন৷ তাদের বড় একটি অংশ বয়সে তরুণী৷''

তিনি আরো জানান, ‘‘যারা আসেন তারা বিষয়টি গোপন রাখতে চান৷ কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদেরও জানাতে চান না৷ কেউ কেউ আবার পরিবারের সদস্যদের নিয়েই আসেন৷''

চিকিৎসকরা জানান, মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে সেই মাসিক নিয়মিত করার এক ধরনের চিকিৎসার নামই এমআর৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গর্ভধারণের কারণেই মাসিক বন্ধ হয়৷

Bilkis Begum Chowdhury - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

গার্টমেকার ইন্সটিটিউট একটি হিসাব দিয়ে বলেছে, ২০১০ সালে বাংলাদেশে  ৬ লাখ ৫৩ হাজার ১০০ এমআর করা হয়৷ অর্থাৎ প্রতি হাজারে এমআর করা হয় ১৮.৩ টি৷ একই বছর সরাসরি গর্ভপাতের ঘটনা ছিল ৬ লাখ ৪৬ হাজার  ৬০০ টি৷ সে বছর প্রতি ১০০০ গর্ভবতীর মধ্যে ১৮ দশমিক ২ জন গর্ভপাত করিয়েছেন৷ তাদের বয়স ১৫ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে৷

হলি ফ্যামিলি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রওশন আরা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে এমআর-কে বৈধতা দেয় সরকার৷ আগে এমআর করার সর্বোচ্চ সময়সীমা ছিল আট সপ্তাহ, কিন্তু এখন ১২ সপ্তাহ৷ প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেই এমআর-এর আলাদা বিভাগ আছে৷ প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোও বৈধভাবেই এমআর করছে৷ আমরা বলি, এমআর-এর মাধ্যমেই বাংলাদেশে গর্ভপাতকে এক ধরনের বৈধতা দেয়া হয়েছে৷ সামাজিক এবং ধর্মীয় কারণে হয়ত সরাসরি গর্ভপাতকে বৈধতা দেয়া যায় না, কিন্তু অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ এড়াতে এর প্রয়োজন আছে৷'' 

বাংলাদেশের আইনে শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শে মায়ের জীবন বাঁচাতে গর্ভপাতের সুযোগ আছে৷ তবে এ প্রসঙ্গে ডা. রওশন আরা বলেন, ‘‘এমআর-এর নামে ছোট ছোট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ‘গর্ভপাতের' যে ব্যবসা গড়ে উঠেছে, তা ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ, সেখানে প্রশিক্ষিত ডাক্তার নাই৷ আয়া বা নার্স দিয়েই গর্ভপাতের কাজ করা হচ্ছে৷ এর ফলে কখনো কখনো গর্ভবর্তী মারা যান৷ আবার কখনো তার মা হওয়ার সক্ষমতা শেষ হয়ে যায় অথবা জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন৷ সরকারের উচিত বিষয়টি মনিটরিং করা৷''

বাংলাদেশে বেশ কিছু এনজিও তাদের হাসপাতালের মাধ্যমে এই এমআর সেবা দিচ্ছে৷ আর এখন সার্জারি ছাড়া ওষুধের মাধ্যমেও গর্ভপাত করানো হয়৷ বাংলাদেশে এখন সেই ওষুধ পাওয়া যায় বলে জানান ডা. রওশন আরা৷ তিনি বলেন, ‘‘এ কারণে এখন ঘরে বসেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে গর্ভপাত করানো হয়৷''

চিকিৎসকরা বলছেন, বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রেই জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না৷ এই পদ্ধতি প্রায় শতভাগ নারীর ওপরই  প্রয়োগ করা হয়৷ ফলে অনাকাঙ্খিত গর্ভ ধারণের ঘটনা ঘটে৷ এছাড়া সচেতনতার অভাব, জবরদস্তি ও প্রতারণা-প্রলোভনের কারণেও অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণের ঘটনা ঘটে৷

কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা ৪২ দিন পর্যন্ত এমআর-এর সুযোগ দেই৷ কারণ, ওই সময় পর্যন্ত ঠিক নিশ্চিত হওয়া যায় না গর্ভে সন্তান আছে কি নেই৷ কিন্তু এর বেশি সময় হলে আমরা কাউন্সেলিং করে মা-কে এমআর থেকে বিরত রাখি৷''

Rawshan Ara - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

তিনি জানান, ‘‘অনেকেই দ্বিতীয় বা তৃতীয় সন্তান নিতে চান না৷ অনাকাঙ্খিতভাবে গর্ভধারণ হলে তারা তাই এমআর করান৷''

তাঁর মতে, ‘‘জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এমআর কমে আসবে৷ আমরা তাই এখন এমআর নিরুৎসাহিত করি৷ সঠিকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেই, উৎসাহিত করি৷''

তিনি আরো জানান, ‘‘তবে অনেকেই সরাসরি গর্ভপাত করাতেও আসেন৷ নানাভাবে তারা অনাকাঙ্খিতভাবে গর্ভবর্তী হয়ে পড়েন৷ কিন্তু আমরা ফিরিয়ে দেই, কারণ, আইনে গর্ভপাতের সুযোগ নেই এবং আইনের চোখে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷''

আর ডা. রওশন আরা বলেন, ‘‘আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, বাংলাদেশে গর্ভপাত বাড়ছে৷ সেটা এমআর-এর নামে হোক বা যেভাবেই হোক৷  আর এই গর্ভপাতে সহায়তা করছে অনেক ক্লিনিক৷''

প্রসঙ্গত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে পাঁচ কোটি ষাট লাখ নারীর গর্ভপাত হচ্ছে৷ বিশ্বে প্রতি চার জন গর্ভবতী নারীর  মধ্যে একজনের গর্ভপাত হচ্ছে৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ