1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গর্ভপাত নিয়ে গণভোট

২৫ মে ২০১৮

আয়ারল্যান্ডে গর্ভপাত নিষিদ্ধ৷ তবে এবার, এই নিয়ম পালটে ফেলার লক্ষ্যে দেশটিতে গণভোটের আয়োজন করা হয়েছে৷ কিন্তু বর্তমানে গর্ভপাতের পক্ষে ও বিপক্ষে – এই দুই শিবিরে বিভক্ত গোটা দেশ৷ তা কোন দিকে রায় দেবে আইরিশ জনতা?

ছবি: Reuters/C. Kilcoyne

আয়ারল্যান্ডের প্রিমিয়ার লেও ভারাদকরের মতে, এটা এমন এক গণভোট যা গোটা প্রজন্মে একবার হয়৷ গর্ভপাতের পক্ষে ও বিপক্ষে যে বিপুল বিতর্ক চলছে, তার মধ্যে প্রিমিয়ারের মন্তব্যে সবাই নিশ্চয়ই একমত হবেন৷

আইরিশ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী অনুসারে গর্ভপাতে প্রায় নিষেধাজ্ঞাই জারি হয়েছে দেশটিতে৷ একাধিক ঘটনায় গর্ভপাতের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা গেলেও এখনও এ কাজ আয়ারল্যান্ডে বেআইনি৷ এর মধ্যে উল্লেখ করা যায় ১৯৯২ সালের একটি ঘটনা৷ ধর্ষিতা এক নাবালিকা যে সংবাদমাধ্যমে ‘এক্স’ নামে পরিচিত, সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় আত্মঘাতী হয়৷ তখনও বিতর্ক হয়েছিল, গর্ভাবস্থা যদি মায়ের জীবনের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তাহলে কেন গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া যাবে না?

এরপরেও একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে, কিন্তু গর্ভপাত আয়ারল্যান্ডে বেআইনিই রয়ে গিয়েছে৷ অথচ অনেকক্ষেত্রেই মহিলারা গর্ভপাতের অধিকার চেয়ে আসছেন – ধর্ষণের ফলে অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ, গর্ভে থাকা শিশুর জন্মের পর মৃত্যুর আশঙ্কা ইত্যাদি৷ এই আইন কার্যকর করতে সরকারও যথেষ্ট সক্রিয়৷ সম্প্রতি এক মহিলা গর্ভপাতের লক্ষ্যে অন্য দেশে আশ্রয় প্রার্থনার চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু তাঁকে যেতে দেওয়া হয়নি৷ অনেকক্ষেত্রে এই আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অমানবিক পদক্ষেপও দেখা গিয়েছে৷ গর্ভের প্রাণকে হত্যা করা যাবে না, এই যুক্তিতে ২০১৪ সালে মস্তিষ্কের মৃত্যুর পরও এক মহিলাকে কৃত্তিম উপায়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল৷ সে সময় তিনি ১৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন৷ গর্ভস্থ শিশুর বাঁচার উপায় ছিল না৷ তবু মৃত মায়ের শিশুরও বেআইনিভাবে মৃত্যু হবে – এই আশঙ্কায় চিকিৎসকেরা তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন৷

প্রয়োজন আইনের

আয়ারল্যান্ড এখন গর্ভপাতের পক্ষে ও বিপক্ষে দুই শিবিরে বিভক্ত৷ হ্যাঁ-পন্থিরা অষ্টম সংশোধনী বাতিলের দাবি তুলেছেন৷ আয়ারল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস এর প্রয়োজনীয়তা ব্যাখা করে বলেছেন, ‘‘প্রতিদিন ন'জন আইরিশ মহিলা যুক্তরাষ্ট্রে যান ভ্রূণের পরিসমাপ্তি ঘটাতে৷ অন্যদিকে কমপক্ষে তিনজন আইরিশ মহিলা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই বড়ি খেয়ে গর্ভের ভ্রূণকে নষ্ট করার চেষ্টা করেন৷ এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে আইনি রূপরেখা থাকা দরকার৷’’

হ্যারিস ও তাঁর সহযোগীরা অষ্টম সংশোধনী বাতিল করে বিষয়টা পার্লামেন্টের হাতে ছেড়ে দিতে চান৷ অর্থাৎ পার্লামেন্টই ঠিক করবে গর্ভপাতের ক্ষেত্রে কী আইন হওয়া উচিত৷

গর্ভপাত বিরোধী গোষ্ঠীর আইনজীবী ক্যারোলিন সিমন্স বলেন, ‘‘অষ্টম সংশোধনী একজন চিকিৎসককে গর্ভস্থ শিশুর প্রাণ কাড়তে বাধা দেয়, এবং এই কারণেই আমরা এর পক্ষে ভোট দিয়েছি৷’’ তাঁর মতে, গর্ভস্থ শিশু থাকার জন্য মায়ের শারীরিক সমস্যা হচ্ছে বা জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে, এমন প্রমাণ নেই৷ গর্ভপাতের ফলে সরাসরি ও পরিকল্পনামাফিক ভাবে একটি শিশুকে হত্যা করা হয়৷

বিদেশের প্রভাব?

আয়ারল্যান্ডের এই বিতর্ক নজর কেড়েছে গোটা বিশ্বের৷ বাইরে থেকে অর্থসাহায্য মিলছে, হ্যাঁ ও না পন্থিরা পরস্পরের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছে৷ একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী মার্কিন সংস্থার সাহায্য নিয়ে সেই ভোটারদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে, যাঁরা এখন দোলাচলে রয়েছেন৷ তাদের লক্ষ্য ছিল, এই ভোটারদের কাছে পৌঁছে তাঁদের ভোটদানে বিরত থাকায় প্রভাবিত করা৷

কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার মাধ্যমে তথ্য ফাঁসের বিতর্ক সামনে আসায় সব অনলাইন সংস্থাই এবার সতর্ক৷ ভোটারদের যাতে প্রভাবিত করা সম্ভব না হয়, সে জন্য ফেসবুক আইরিশ গণভোট সংক্রান্ত সব প্রচার তাদের ওয়েবসাইটে বন্ধ করে দিয়েছিল৷ ইউটিউবেও প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়, যা মূলত না পন্থিরা ব্যবহার করছিল৷

গুগলের এই সিদ্ধান্তে অখুশি না-শিবির গণভোটে কারচুপি করার অভিযোগ তুলেছে অনলাইন সংস্থাটির বিরুদ্ধে৷ গর্ভপাতের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে এই গুগলই তাদের বড় ভরসা ছিল৷ সেই পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোটের ফল প্রভাবিত হবে বলে মনে করছে তারা৷

ভবিষ্যতের আইন নিয়ে সংশয়

গণভোটের পর কী হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে আয়ারল্যান্ডে৷ সরকার একটি খসড়া বিল প্রকাশ করেছে, যাতে বলা হয়েছে, কোন পরিস্থিতিতে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হবে৷ কিন্তু লেও ভারাদকরের সরকারের পার্লামেন্টে এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন রয়েছে৷ পার্লামেন্টে বিল এলে ক্ষমতাসীন দল সব সদস্যকে মুক্ত মনে ভোট দিতে বলেছে৷ দ্বিতীয় শক্তিশালী গোষ্ঠী ফিয়ানা ফেল-ও একই অবস্থান নিয়েছে৷

শুক্রবারের গণভোটে আয়ারল্যান্ডের নারী অধিকারের একটি দিগন্ত খুলে যেতে পারে৷ আবার পাশ্চাত্যের একটি রক্ষণশীল শাসনের হাত মজবুত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে৷ গর্ভপাত নিয়ে ভবিষ্যত কী হতে চলেছে, তার গতি ঠিক করে দেবে গণভোটের ফলাফলই৷

গভন রেলি/পিএস

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ