কিন্তু বিদ্যমান আইনি কাঠামোটি প্রায় ৩০ বছরের পুরনো হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে এটি সমালোচিত হয়ে আসছে৷ জার্মানির বর্তমান জোট সরকারের তিন শরিক দল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস (এসপিডি), গ্রিনস এবং ফ্রি ডেমোক্র্যাটস (এফডিপি) গর্ভপাতের আইনটিকে আরও শিথিল করতে চাচ্ছে৷
এস. পি. ডি-র রাজনীতিবিদ কাটইয়া মাজট মনে করেন, এই সুপারিশ নেওয়া হলে মনির্দিষ্ট সময়ের আগে গর্ভপাত আর ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে না৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি গর্ভপাত সম্পর্কিত বিধিমালা ফৌজদারি আইনের অন্তর্গত নয় কারণ, আমার দৃষ্টিতে এটি নারীদের কলঙ্কিত করে৷''
ক্যাথলিকচার্চেরউদ্বেগ
ধর্মীয় গোষ্ঠী ও সংগঠনগুলো ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে৷ বার্লিনের ক্যাথলিক আর্চবিশপ হেইনার কখ ক্যাথলিক সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন তারা বিদ্যমান আইনটি বহাল রাখাতেই আগ্রহী৷ আর্চবিশপের মতে ‘‘প্রচলিত আইনি কাঠামোটি মায়ের চাহিদা, উদ্বেগ এবং অনাগত সন্তানের সুরক্ষা সবগুলো বিষয়কেই গুরুত্ব দেয়৷''
রক্ষণশীল দলগুলো যথারীতি এর বিরোধিতা করেছে৷ জার্মানির বৃহত্তম বিরোধী দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নের (সিডিইউ) নেতা ফ্রেডরিখ মেরজ সমালোচনা করে বলেছেন এই ধরনের সংস্কারের মাধ্যমে সরকার ‘দেশে একটি বড় সামাজিক দ্বন্দ্ব চালু করতে যাচ্ছে৷'
ডানপন্থি জনপ্রিয় দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)-ও এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে৷ অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক বাম দল সরকারকে সুপারিশগুলোকে একটি খসড়া আইনে পরিণত করে উপস্থাপনের আহ্বান জানিয়েছে৷
জার্মানিতে যুক্তরাষ্ট্রের মতো গর্ভপাত-বিরোধী বিক্ষোভ
যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাত ক্লিনিকের সামনে গর্ভপাত-বিরোধী বিক্ষোভ সাধারণ ঘটনা৷ জার্মানিতেও এমন বিক্ষোভ হয়ে থাকে৷ তবে এটি নিষিদ্ধ করতে চান জার্মান পরিবারমন্ত্রী৷
ছবি: Helen Whittle/DW
বিক্ষোভ
সম্প্রতি ‘ইউরোপ্রোলাইফ’ সংগঠনের কয়েকজন বিক্ষোভকারী জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ‘প্রো ফ্যামিলিয়া’র কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন৷ তাদের কারো কারো হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে ছিল হাসিখুশি বাচ্চার ছবি৷ কারো প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘আনবর্ন লাইভস ম্যাটার’ বা ‘গর্ভপাত সমাধান নয়’ ইত্যাদি৷
ছবি: Helen Whittle/DW
বিক্ষোভের প্রভাব
ক্লাউডিয়া হোমান নয় বছর ধরে ফ্রাঙ্কফুর্টের প্রো ফ্যামিলিয়া অফিসে কাজ করেন৷ ২০১৭ সালে তিনি প্রথম এমন বিক্ষোভ দেখেছিলেন৷ হোমান বলেন, অফিসের সামনে এমন বিক্ষোভ, যারা পরামর্শের জন্য তাদের অফিসে যেতে চান, তাদের উপর এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলে৷ এছাড়া অনেকে পরামর্শ নিতে যেতে ভয়ও পান বলে জানান তিনি৷
ছবি: Helen Whittle/DW
গণমাধ্যমে তেমন প্রচার নেই
যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন গর্ভপাত কার্যালয়ের সামনে এমন বিক্ষোভ সাধারণ ঘটনা৷ জার্মানি ও ইউরোপেও এমন বিক্ষোভ হয়৷ তবে গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর বেশি প্রকাশিত হয় না৷
ছবি: Sachelle Babbar/ZUMA/picture alliance
রোল মডেল যুক্তরাষ্ট্র
বার্লিনের সাংবাদিক উলি ইয়েনশ ২০ বছরের বেশি সময় ধরে এ ধরনের বিক্ষোভ সম্পর্কে খবর রাখছেন৷ তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গর্ভপাতবিরোধী আন্দোলন জার্মানি ও ইউরোপে রোল মডেল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের আন্দোলনের কৌশল অনুসরণ করা ছাড়াও সে দেশের কর্মীদের সঙ্গে ইউরোপের বিক্ষোভকারীরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন বলে জানান ইয়েনশ৷
ছবি: Evelyn Hockstein/REUTERS
আইন প্রণয়নের উদ্যোগ
গর্ভপাতবিরোধী বিক্ষোভকারীরা যেন গর্ভপাত ক্লিনিকগুলোর সামনে জ হতে না পারেন সে কারণে আইন করার অঙ্গীকার করেছেন জার্মানির পরিবারমন্ত্রী লিজা পাউস৷ তিনি বলেন, ‘‘নারীদের অবশ্যই কাউন্সেলিং পরিষেবা এবং গর্ভপাত করায় এমন ক্লিনিকে বাধাহীনভাবে যাওয়ার সুযোগ থাকতে হবে৷’’
ছবি: Carsten Koall/dpa/picture alliance
জার্মানিতে গর্ভপাত অবৈধ, তবে...
জার্মানির ক্রিমিনাল কোডের ২১৮ ধারা অনুযায়ী গর্ভপাত অবৈধ৷ তবে গর্ভধারণের পর সর্বোচ্চ ১২ সপ্তাহের মধ্যে যদি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সার্টিফিকেট পাওয়া যায় তাহলে সার্টিফিকেট পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে গর্ভপাত করানা সম্ভব৷
ছবি: Sachelle Babbar/ZUMA/picture alliance
পরিসংখ্যান
জার্মানির পরিসংখ্যান কার্যালয়ের হিসেবে, দেশটিতে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ গর্ভপাত করানো হয়৷ ১৯৯৬ সালে সংখ্যাটি ছিল প্রায় এক লাখ ৩১ হাজার৷ জার্মানির কিছু অঞ্চলে গর্ভপাতের জন্য ক্লিনিক পাওয়া কঠিন৷ কিছু শহরে একটিও নেই৷ ২০০৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে জার্মানিতে গর্ভপাত ক্লিনিকের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে৷
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
‘শিশু হত্যাকারী’
নেদারল্যান্ডসের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ গাবি রাফেন বলছেন, জার্মানি থেকে অনেকে তার ক্লিনিকে গর্ভপাত করাতে যাচ্ছেন৷ সে কারণে গত নভেম্বরে তিনি ডর্টমুন্ডে একটি ক্লিনিক খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ এর পরপরই তিনি গর্ভপাত বিরোধীদের লক্ষ্যে পরিণত হন৷ তাকে ‘শিশু হত্যাকারী’ বলা হয়েছে এবং তার ঠিকানা ও টেলিফোন নম্বর বিভিন্ন গর্ভপাত-বিরোধী ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে৷