তাঁরা অন্যের মুখে হাসি ফোটান৷ আর তার বিনিময়ে নিজেদের পরিবারে হাসি আনতে চান তাঁরা৷ কিন্তু সেটা সবসময় সম্ভব হয় না আইন না থাকার কারণে৷ এর জন্য কিছুটা হলেও দায়ী ভারতের সাংসদরা৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘটেছে তারই প্রতিফলন৷
বিজ্ঞাপন
হয়ত অনেকে বিষয়টি বুঝতে পারলেন না৷ কথা হচ্ছে ভারতের গর্ভ ভাড়া দেয়া নারীদের নিয়ে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই নারীরা দরিদ্র৷ আর তাই পরিবারে সুখ আনতে নিজেদের গর্ভ ভাড়া দিয়ে থাকেন তাঁরা৷ এই দরিদ্র নারীদের দিয়েই ব্যবসা করে যাচ্ছেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ও বেসরকারি হাসপাতাল৷ ভারতে গর্ভ ভাড়া বা সারোগেসি বাণিজ্যের বাজার এখন প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার মতো৷ কারণ আইন না থাকা ও খরচ কম হওয়ার কারণে বিদেশি সন্তানহীন দম্পতিরা ভারতে বেছে নেন সন্তান লাভের জন্য৷ কিন্তু এই যে এত টাকার বাণিজ্য হচ্ছে তার খুব সামান্যই পাচ্ছেন গর্ভ ভাড়া দেয়া নারীরা৷ শুধু তাই নয়, এসব নারীরা দরিদ্র ও অল্পশিক্ষিত হওয়ায় অনেক সময় তাদের না জানিয়েই তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন সব সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা৷ এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা গেছে একটি গবেষণায়৷ ভারত ও ডেনমার্কের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় জানা গেছে, কিছু সংখ্যক চিকিৎসক সাফল্য নিশ্চিতের আশায় গর্ভ ভাড়া দেয়া নারীকে না জানিয়েই তার গর্ভে পাঁচ থেকে ছয়টি ভ্রূণ প্রবেশ করিয়ে থাকেন৷ অথচ চিকিৎসাশাস্ত্র বলছে এটি ঠিক নয়৷ এক্ষেত্রে গর্ভ ভাড়া দেয়া নারীর জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে৷
জলপরি নয়, এরা হলো ‘জলপত্নী’
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের বেশ কয়েকটি প্রত্যন্ত গ্রামে পুরুষরা শুধুমাত্র পানি এনে দেওয়ার জন্য বহুবিবাহ করেন! দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্ত্রীর কাজ বাড়িতে যথেষ্ট পরিমাণ পানির ব্যবস্থা করা৷ এরাই হলো ‘ওয়াটার ওয়াইফ’ বা ‘জলপত্নী’৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
একজন পুরুষের তিনজন স্ত্রী
৬৬ বছর বয়সি সাখারাম ভাগতের এখন মোট তিনজন স্ত্রী৷ ওঁদের একজনের নাম সাখরি, পরের জন টুকি এবং তৃতীয় বউ ভাগি৷ ‘‘আমার প্রথম স্ত্রীকে সন্তানদের দেখাশোনা করতে হয়, তাই পানি আনার জন্য দ্বিতীয় বিয়ে করি৷ কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রী যখন অসুস্থ হয়ে যায়, তখন পানি আনতে ভীষণ সমস্যা হতো৷ তাই তৃতীয়বার বিয়ে করি আমি’’, বলেন শাখারাম৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
‘ওয়াটার ওয়াইফ’-এর সম্মান
ছবিতে ভাগত তাঁর দুই স্ত্রী ভাগি এবং সাখরিকে নিয়ে পানি আনতে যাচ্ছেন৷ এর জন্য তাঁদের গ্রাম ছাড়িয়ে অনেকটা পথ যেতে হয়৷ সংসারের প্রয়োজনে যাঁরা এতদূর থেকে পানি বয়ে আনেন, তাঁদের, অর্থাৎ এই ‘ওয়াটার ওয়াইফ’ বা ‘জলপত্নী’-দের গ্রামের মানুষরা কিন্তু খুবই সম্মানের চোখে দেখেন৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
অত্যন্ত পরিশ্রমের কাজ
ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম ফেডারেল রাজ্য ‘মহারাষ্ট্রের’ এমনই একটি গ্রামর চিত্র এটি৷ কুয়ার সামনে স্থানীয় এক ‘জলপত্নী’ পানির পাত্র আর কলসিগুলোতো একে একে পানি ঢালছেন৷ সরকারি হিসেব অনুযায়ী, গত বছর ভারতের প্রায় ১৯ হাজার গ্রামে খাবার পানি ছিল না৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
বাঁচার জন্য পানি সঞ্চয়
মহারাষ্ট্রে খরা নতুন কিছু নয়৷ শেষবারের খরার সময় সাখারাম ভাগতের পরিবার জলকষ্টে ভীষণভাবে ভুগেছে৷ তাই আর জলের কষ্ট নয়! পিতলের কলসিগুলোতে আজকাল সব সময়েই যথেষ্ট পরিমাণে পানি ভরে রাখছে ওরা, যাতে আর ভোগান্তি না হয়৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
ভারতে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ
ভারতে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও প্রত্যন্ত এ সমস্ত গ্রামে ‘ওয়াটার ওয়াইফ’-এর রীতি বেড়ে চলেছে৷ তবে বেশিরভাগ সময়ই যেসব পুরুষ শুধু পানি আনার জন্য বিয়ে করেন, তাঁরা ‘জলপত্নী’-দের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর মতো এক বিছানায় ঘুমান না৷ ঠিক সেরকমই একটি পরিবারের কর্তা নামদেব৷ তাঁর দুই স্ত্রী শিবারতি (বামে) এবং বাগাবাই৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
মাথায় পানি, কোলে নাতি
নামদেবের দ্বিতীয় স্ত্রী শিবারতি অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাথায় পানি বহন করে ফিরে যাচ্ছেন গ্রামে৷ কোলে নাতিটিকেও সঙ্গে নিতে হয়েছে তাঁর৷ ‘ওয়াটার ওয়াইফ’ বা ‘জলপত্নী’-দের জীবন এরকমই৷ তাঁরা এক হয় বিধবা অথবা একক মা৷ আগের পক্ষের সন্তান বা নাতি-নাতনিকে বড় করে তোলার জন্য অনেকক্ষেত্রে একাই অভিভাবকের সমস্ত দায়িত্ব পালন করতে হয় তাঁদের৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
সাদা-কালো স্মৃতি চিহ্ন
নামদেবের প্রথম স্ত্রী বাগাবাই৷ তাঁর ঘরের দেয়ালে টাঙানো রয়েছে স্বামী-স্ত্রী দু’জনের পুরনো আমলের সাদা-কালো একটি ছবি৷ দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্ত্রীর মর্যাদা যে প্রথম স্ত্রীর সমান নয়, দেয়ালের ঠিক মাঝখানে টাঙানো ছবিটি সেটাই বলে দিচ্ছে৷ তারপরও স্বামীকে একেবারে নিজের বলার উপায় আছে কি?
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
7 ছবি1 | 7
এই বিষয়গুলোর সমাধান করতে পাঁচ বছর আগে ভারত সরকার কৃত্রিম উপায়ে গর্ভাধান নিয়ন্ত্রণ বা ‘অ্যাসিস্টেট রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজি বিল' এর খসড়া তৈরি করেছিল৷ কিন্তু বিলটি এখনো সংসদে পাস হয়নি৷ অথচ সেটা হলে গর্ভ ভাড়া নারীদের জন্য ভালো হতো বলে মনে করেন দিল্লির সাংবাদিক অমৃত ধীলন৷ বিলটি এখনও পাস না করায় তিনি ভারতের সাংসদদের কড়া সমালোচনা করেছেন৷ ধীলনের এই বক্তব্যটি টুইটারে শেয়ার করে এ ধরনের বক্তব্যের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্যাট্রিসিয়া রোক্কো৷
ভারতে গর্ভ ভাড়া দেয়া নারীদের কেউ কেউ ‘বায়োলজিকাল কুলি' বলে আখ্যায়িত করে থাকেন৷ এভাবে তাঁদের অপমান করা হয় বলে মন্তব্য করেন সাংবাদিক ধীলন৷
ভারতে না জানিয়ে গর্ভ ভাড়া দেয়া নারীদের গর্ভে অধিক পরিমাণে ভ্রূণ প্রবেশ করানোর বিষয়টির সমালোচনা করে টুইট করেছেন একজন৷
এদিকে, ভারতের মতো নেপালেও একই অবস্থা৷ সেখানেও গর্ভ ভাড়া দেয়া নারীরা খুব সামান্য অর্থই পেয়ে থাকেন৷ একটি সন্তান পেতে সন্তানহীন দম্পতিরা যত টাকা খরচ করে থাকেন তার হয়তো এক দশমাংশ পেয়ে থাকেন গর্ভ ভাড়া দেয়া নারীরা৷ নেপালের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদকীয়তে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে৷