২০১৯ সালে রেকর্ড পরিমাণ বরফ গলেছে গ্রিনল্যান্ডে। উদ্বেগে বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের অধিকাংশ দেশ কি ধীরে ধীরে জলের তলায় চলে যাবে? সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের হাতে যে তথ্য এসে পৌঁছেছে, তাতে এ প্রশ্ন আর খুব অবান্তর নয়। ২০১৯ সালে রেকর্ড পরিমাণ বরফ গলেছে গ্রিনল্যান্ডে। যার জেরে সমুদ্রে জলের স্তর এক দশমিক পাঁচ মলিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ট্রেন্ড বজায় থাকলে দ্রুত জলের তলায় চলে যেতে পারে বহু দেশ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০১৯ সালে গ্রিনল্যান্ডে বরফ গলার যে তথ্য তাঁদের হাতে এসেছে, তা অভূতপূর্ব।
গ্রিনল্যান্ডের বরফ যে দ্রুত গলতে শুরু করেছে, তা আগেই টের পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। দু'টি দৃশ্য রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল বছরখানেক আগে। বিশাল বরফের দেওয়াল ভেঙে পড়ছে এবং কুকুররা গলা বরফের উপর দিয়ে স্লেজ টানছে। জলে ডুবে যাচ্ছে তাদের পা। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, এই শতকে ২০১২ সালে সব চেয়ে বেশি বরফ গলেছিল গ্রিনল্যান্ডে। ২০১৯ সালে সেই রেকর্ডও ভেঙে গিয়েছে। শুধু মাত্র ২০১৯ সালেই ৫৩২ গিগাটন বরফ গলে গিয়েছে গ্রিনল্যান্ডে। এই হারে বরফ গলতে থাকলে গোটা বিশ্ব ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
রেকর্ড হারে গলছে গ্রিনল্যান্ডের বরফ
সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ার অন্যতম কারণ গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলে যাওয়া৷ এর ফলে বাংলাদেশের একটি অংশের মতো বিশ্বের অনেক এলাকা ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে৷ নতুন গবেষণা বলছে, সেই গ্রিনল্যান্ডের বরফ এখন গলছে রেকর্ড হারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ZB/P. Pleul
বিচ্ছিন্ন গ্রিনল্যান্ড
আর্কটিক ও অ্যাটলান্টিকের মাঝে নিঃসঙ্গ কিন্তু বিরাট দ্বীপদেশ গ্রিনল্যান্ড৷ সেখানে বরফের প্রাচুর্যের মাঝে বসতি গড়েছেন কিছু মানুষ৷ এর ৮০ ভাগ বরফে ঢাকা৷ এই ভূখন্ডের পরিবেশের প্রভাব আছে সারাবিশ্বে৷
ছবি: Imago/J. Kruse
সবাই জানে বরফ গলছে
বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বরফ যে গলছে, তা সবারই জানা৷ এখন প্রতিবছর প্রায় আধা ইঞ্চি করে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ছে৷ গবেষকরা এই বিষয়টির ওপর কয়েক বছর ধরে ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছেন৷
ছবি: Woods Hole Oceanographic Institution/Sarah Das
নতুন গবেষণা
এ বিষয়ে পরিবেশ গবেষণা বিষয়ক জার্নাল নেচারে নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে৷ সেখানে গত ৩৫০ বছর ধরে বরফ কী মাত্রায় গলছে, তা দেখানো হয়েছে৷ দেখা গেছে, গত কয়েক দশকে বরফ গলার মাত্রা বেড়েছে ঝুঁকিপূর্ণ গতিতে৷ প্রাক-শিল্পযুগের চেয়ে বর্তমানে বরফ গলার হার ৫০ ভাগ বেশি৷
ছবি: M. Osman/Woods Hole Oceanographic Institution
গ্রিনল্যান্ডে যা আগে দেখা যায়নি
গবেষণার জন্য ছবিতে যেমন দেখা যাচ্ছে, গ্রিনল্যান্ডে এমন ড্রিল ব্যবহার করে আইসকোর বা নমুনা তোলা হয়েছিল৷ এসব নমুনা বিশ্লেষণ করে গবেষকরা ১৬৫০ সালের বরফ গলার হারও নির্ণয় করতে পেরেছেন৷ দীর্ঘমেয়াদী হিসেবে দেখা গেছে, গত সাড়ে তিনশ’ বছরে বরফ গলার হার আগের ৮ হাজার বছরের চেয়েও বেশি৷
ছবি: Woods Hole Oceanographic Institution/Sarah Das
নন-লিনিয়ার আইস মেল্টিং
গবেষকরা এই বরফ গলার হারকে ‘ননলিনিয়ার’ বলছেন৷ অর্থাৎ হিসেব মেনে ঝুঁকির মাত্রা বাড়ছে না৷ যেমন, আগে যেখানে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় যতটা বরফ গলত, এখন ততটা উষ্ণতার কারণে দ্বিগুণ বা তার বেশি বরফ গলছে৷
ছবি: Imago/blickwinkel
গ্রিনল্যান্ডের বরফ গললে কী হবে
গ্রিনল্যান্ডের যে আইসশিট তা যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা রাজ্যের সমান৷ এত বড় বরফের চাক যদি গলে যায়, তাহলে সমুদ্রের উচ্চতা ৭ মিটার বা ২৩ ফুট বেড়ে যেতে পারে৷
ছবি: Getty Images/M.Tama
ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
কোনো কোনো গবেষকের মতে, সমুদ্রের পানির উচ্চতা তিন ফুট বাড়লেই বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ২০ ভাগ তলিয়ে যাবে৷ বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় প্রথম দিকে রাখা হয়৷ সেক্ষেত্রে গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলার নতুন এ খবর বাংলাদেশের জন্য যে সুখকর নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷
ছবি: Getty Images/AFP
7 ছবি1 | 7
তবে বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, প্রতি বছর একই হারে বরফ গলছে না। ২০১৬ সালে যে হারে বরফ গলেছিল, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে সেই হারে বরফ গলেনি। বরং ওই দুই বছরে গরমকালেও যথেষ্ট ঠান্ডা ছিল মেরু অঞ্চলে। ২০১৮ সালে গরমে বরফও পড়েছে সেখানে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক বছর, দুই বছর পর পর একবার করে উষ্ণপ্রবাহ আসে গ্রিনল্যান্ডে। সে সময় বায়ুর চাপও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তারই জেরে এই পরিমাণ বরফ গলতে থাকে।
২০২০ সালের একটি প্রাথমিক রিপোর্ট বিজ্ঞানীদের হাতে এসেছে। তাতে এখনও পর্যন্ত উদ্বেগজনক বরফ গলার কোনও চিত্র পাওয়া যায়নি।
গ্রিনল্যান্ডে একেকটি বরফের চাদর দুই থেকে তিন কিলোমিটার পুরু। বিশ্বের অধিকাংশ সমুদ্র ওই বরফের জল থেকেই তৈরি। ২০১৯ সালে তেমনই কিছু বরফের চাদর বিপুল পরিমাণে গলে গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখন বোঝার চেষ্টা করছেন, কত দিন পর পর গ্রিনল্যান্ডে উষ্ণপ্রবাহ আসতে পারে। সেই হিসেব অনুযায়ী বরফ গলতে থাকলে বছরে কত শতাংশ করে সমুদ্রের জল বৃদ্ধি পেতে পারে। আরও একটি বিষয়ে শতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের বক্তব্য, উষ্ণায়ন একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। কিন্তু দূষণ তার মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। দ্রুত কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে না পারলে, প্রকৃতি আরও ভয়াবহ আচরণ করবে। তখন আর কিছু সামলানো যাবে না।