যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত গলতে থাকবে ওই বরফের স্তুপ। যার জেরে সমুদ্রে জলের উচ্চতা আরো বাড়বে।
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীদের একটি দল দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিম আন্টার্কটিকার বরফের চাঁই নিয়ে কাজ করছেন। সম্প্রতি তারা জানিয়েছেন, যে বিপুল বরফ সেখানে জমে ছিল, তা ক্রমশ গলতে শুরু করেছে। চলতি শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত তা গলতে থাকবে। যার জেরে সমুদ্রে জলের উচ্চতা ক্রমশ বাড়বে।
সমুদ্র গবেষক কেইটলিন নটেন গবেষণাপত্রে লিখেছেন, ''আমাদের গবেষণা একটি প্রশ্নকে সামনে রেখে এগিয়েছে। বরফ গলাকে কি কোনোভাবে আটকানো যায়? আদৌ কি তা সম্ভব?'' তিনি জানিয়েছেন, তাদের গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তা খুব সুখকর নয়। পৃথিবীর সার্বিক তাপমাত্রা ইতিমধ্যেই যতটা বেড়েছে, তাতে আর চেষ্টা করেও বরফের শেল্ফ গলা বন্ধ করা সম্ভব নয়। তাদের গবেষণা বলছে, পুরো বরফ গলতে হয়তো একটা গোটা শতাব্দী লেগে যাবে, যার জেরে সমুদ্রে জলের স্তর অন্তত ৬ ফুট বেড়ে যাবে। তবে আগামী কয়েক দশকে বরফ গলার পরিমাণ ক্রমশ বাড়বে। ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠ ক্রমশ ফুলতে শুরু করবে। যার ফলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই সভ্যতা সংকটের মুখে পড়বে।
হারিয়ে যাচ্ছে যে হিমবাহগুলি
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পুরোপুরি গলে গেছে আইসল্যান্ডের একটি হিমবাহ৷ একই ভবিষ্যত অপেক্ষা করে আছে বিশ্বের আরো বেশ কয়েকটি হিমবাহের জন্য৷
ছবি: AFP/Getty Images/W. Diaz
হিমবাহের স্মৃতিতে
পুরোপুরি গলে যাওয়া ওকিয়োকুল হিমবাহের জন্য স্মরণসভার আয়োজন করা হলো আইসল্যান্ডে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাড়ছে তাপমাত্রা৷ ওকিয়োকুলের মতো এভাবেই হারিয়ে যাবে আগামী ২০০ বছরে আরো বেশ কয়েকটি হিমবাহ, বলছেন নাসার বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Richard
আন্টার্কটিকায় ধ্বস
বাড়ন্ত তাপমাত্রার কারণে গলছে পশ্চিম এন্টার্কটিকার ঠোয়েইটস হিমবাহ৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই হিমবাহ পুরো গলে গেলে বিশ্বের সমুদ্রতলের উচ্চতা বাড়বে ৫০ সেন্টিমিটার, যা ডুবিয়ে দেবে পৃথিবীর অনেক অংশ৷
ছবি: Imago Images/Zuma/NASA
গলছে পাটাগোনিয়া
এন্টার্কটিকার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিমবাহ রয়েছে চিলের এই অঞ্চলে৷ সেখানের গ্রে হিমবাহের দ্রুতগতিতে গলে যাওয়া আসন্ন বিপদের লক্ষণ৷
ছবি: picture alliance/dpa/blickwinkel/E. Hummel
আল্পসও হারাচ্ছে
সুইজারল্যান্ডের রোন হিমবাহের চিত্রও খুব একটা ভিন্ন নয়৷ জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান মাত্রা যদি অপরিবর্তিত থাকে, এই হিমবাহের দুই-তৃতীয়াংশ হারিয়ে যাবে, বলছেন নাসার এক বিজ্ঞানীদের দল৷
ছবি: Imago Images/S. Spiegl
নিউজিল্যান্ডও হারাবে?
দক্ষিণ গোলার্ধ্বের ফ্রানজ জোসেফ হিমবাহ নিউজিল্যান্ডে পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থল৷ সেখানে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সাইকেল ও হাইকিং রুট৷ কিন্তু এই হিমবাহ পুরো গলে গেলে তাও হারাবে নিউজিল্যান্ড৷
ছবি: DW/D. Killick
আফ্রিকায় কী হবে?
২০১২ সালেই নাসার বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, জলবায়ু পরিবর্তন কেড়ে নেবে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় পর্যটনকেন্দ্র মাউন্ট কিলিমাঞ্জারোর বরফচূড়া৷ এই আশঙ্কা বাস্তবে পরিণত হতে খুব বেশি দেরি নেই, বলছেন তারা৷
ছবি: Imago Images/robertharding/C. Kober
হিমবাহে মৃত্যু
কিছুদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভালডেজ হিমবাহে নৌকাবিহার করছিলেন দুই জার্মান ও এক অস্ট্রিয়ান পর্যটক৷ সেই সময় বিরাটাকারের একটি বরফপিণ্ড ভেঙে পড়ে৷ ফলে মৃত্যু হয় তাদের৷ বরফপিণ্ডের হঠাৎ ভেঙে পড়াও আসলে বাড়ন্ত তাপমাত্রার প্রভাব৷
ছবি: imago/Westend61
আশার আলো দেখাচ্ছে গ্রিনল্যান্ড
পৃথিবীজুড়ে গলে যাচ্ছে একের পর এক হিমবাহ৷ কিন্তু গ্রিনল্যান্ডের ইয়াকবসহাভেন হিমবাহ এসবের মধ্যে ব্যতিক্রম৷ নাসার একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০১৬ সাল থেকে আবার ঘন হতে শুরু করেছে এই হিমবাহের বরফ৷ কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই বৃদ্ধি সাময়িক৷ পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে এই বৃদ্ধি থেমে যেতে বাধ্য৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/NASA
8 ছবি1 | 8
যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীদের এই দলটি প্রথম অত্যাধুনিক কম্পিউটারের সাহায্যে সাম্প্রতিক পরীক্ষাটি করেছে। তারা বরফের চাদরের নিচে গিয়ে সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা পরীক্ষা করেছে। সমুদ্রের জল থেকে কত পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসৃত হচ্ছে, তা-ও পরীক্ষা করে দেখেছেন তারা। তারা জানিয়েছেন, সার্বিকভাবে তাপমাত্রা বাড়ছে। যদি তার গতি কমানোও সম্ভব হয়, জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি কমানো সম্ভব হবে না। ফলে গলতে গলতে বরফের চাদরটি এক সময় ভেঙে পড়বে। আর তখনই ভয়াবহ এক সমস্যার মুখে পড়বে সভ্যতা।
২০০৯ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথম জানিয়েছিলেন, পশ্চিম আন্টার্কটিকার বরফের চাদর ক্রমশ গলতে শুরু করেছে। তবে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা যে গবেষণা করেছেন, এত আধুনিক যন্ত্র এর আগে ওই অঞ্চলে ব্যবহৃত হয়নি।