1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গল্প-গুজবের সাংবাদিকতা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৪ আগস্ট ২০২০

আগেও কথা হয়েছে৷ কিন্তু মেজর(অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার পর ‘গল্প-গুজবের' সাংবাদিকতা আলোচনায়৷ আর গল্প দোষে দুষ্ট এই সব প্রতিবেদন পাঠকদের কেউ কেউ পড়ে বেশ মজাও পাচ্ছেন৷ শেয়ার করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে৷

Symbolbild Journalismus & Recherche
ছবি: Imago Images/Panthermedia

করোনার শুরুতে এই বাংলাদেশই আমরা অনেক গুজব দেখেছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে৷ তার দুই-একটি কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমে খবর হিসেবেও উঠে এসছে৷ আর পদ্মা সেতুতে ‘শিশুদের মাথা ও রক্ত লাগবে'- এই গুজবে গত বছরের জুন মাস থেকে পরবর্তী তিন মাসে বাংলাদেশে ছেলে ধরা আতঙ্কে অনেক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷ কয়েক দশক আগে ১৯৮৭ সালে ‘ঢোল কলমির' গুজব যখন ছড়ায় তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল না৷ তখন মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমের হাত ধরেই এই গুজব ছড়িয়েছিলো৷ ওই গুজবের ডালপালাও বেশ ছড়িয়েছিল৷ প্রথম গুজব ছিলো ওই গাছের পাতা গায়ে লাগলে মানুষ মারা যায়৷ তার পরে বলা হলো ওই গাছে যে পোকা বসে তা গায়ে লাগলে বা কামড় দিলে মানুষ মারা যায়৷ পরে দেখা গেল পুরোটাই গুজব৷

কোনো একটি ঘটনা ঘটলে বাতাসে অনেক ধরনের কান কথা থাকে৷ থাকে নানা ধরনের সত্য-অসত্য তথ্য৷ কখনো আবার সত্যের সাথে রঙ চড়িয়ে বাজারে অনেক তথ্য ছাড়া হয়৷ আর সাংবাদিকতা যদি তার ভিত্তিতে হয় তাহলে সেটা গল্প হতে পারে সংবাদ নয়৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘‘সংবাদে কখনো সত্য আর অসত্যের মিশ্রণ থাকতে পারেনা৷ সংবাদ শতভাগ তথ্য ভিত্তিক৷ শত ভাগ সত্য৷’’ তার মতে, ‘‘নিউজ কখনো ফেক নিউজ হতে পারে না৷ ফেক তো ফেক৷ সেটা আবার নিউজ হয় কিভাবে!’’

ডেভেলপিং স্টোরির ক্ষেত্রে এই গল্প-গুজবের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়৷ বিশেষ করে ঘটনাটি যদি আলোচিত হয়৷ যেমন হয়েছে মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায়৷ কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম এমন ধরনের সংবাদ এরইমধ্যে প্রকাশ করেছে যাতে তারা হত্যা রহস্য উদঘাটন করে ফেলেছেন৷ জড়িতদের সবাইকে চিহ্নিতও করে ফেলেছেন৷ সিনহার সাথে থাকা সিফাত এখনো সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা না বললেও তার মুখ দিয়েই হত্যার বিবরণও প্রকাশ করেছে আরেকটি পত্রিকা৷ তাতে কোনো সোর্স নেই৷ সিফাত কার সাথে কথা বলেছেন? তদন্তকারীদের সাথে না ওই প্রতিবেদকের সাথে তাও বলা হয়নি৷ মনে হচ্ছে সংবাদ নয়, গল্প লেখার প্রতিযোগিতায় কেউ কেউ পিছিয়ে থাকতে চান না৷ সিনিয়র সাংবাদিক এবং টিভি টুডে'র প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘‘এখন আমরা দেখছি প্রভাবশালী গণমাধ্যমের দুর্বল সাংবাদিকতা৷ কোনো সাংবাদিক যা লিখেন তা তাকে প্রমাণ করতে হয়৷ প্রমাণ করতে না পারলে সাময়িক বাহবা হয়তো পাওয়া যাবে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না৷’’

১৯৮৯ সালের এপ্রিলে সাংবাদিক কন্যা শারমিন রিমা হত্যা খুব আলোচিত হয়েছিলো৷ তখন এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে খাটের তলার সাংবাদিকতা নামে এক ধরনের সাংবাদিকতাকে নাম দেয়া হয়৷ সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তখন কোনো কোনো সাংবাদিক নানা সূত্রের বরাতে এমনভাবে ওই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিতেন যেন যে খাটের ওপরে খুন হয়, ঘটনার সময় তিনি সেই খাটের তলায় ছিলেন৷

যমুনা টেলিভিশনের অনুসন্ধানী সাংবাদিক মোহসীন উল হাকিম বলেন, ‘‘এই প্রবণতা এখনো আছে৷ বিশেষ করে মেজর(অব.) সিনহা হত্যার ঘটনায় এটা আমরা প্রবলভাবে দেখছি৷ আমার মনে হচেছ পাঠক বা দর্শক  পেতে এটা  কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম করছে৷ এটার জন্য প্রতিবেদকের দায়তো আছেই৷ কিন্তু নিউজরুম বা এডিটোরিয়াল পলিসিও দায়ী৷’’ তার মতে এই প্রবণতা সংবাদমাধ্যমের ব্যাপারে গ্রাহকের শেষ পর্যন্ত আস্থাহীনতা তৈরি করে৷ আর সেটার দায় সব সংবাদধ্যমের ওপর গিয়ে পড়ে৷

‘এখন আমরা দেখছি প্রভাবশালী গণমাধ্যমের দুর্বল সাংবাদিকতা’:মনজুরুল আহসান বুলবুল

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নানা বাধা আছে৷ সেটা দক্ষতা, আর্থিক, মালিক পক্ষ বা সরকারের দিক থেকে হতে পারে৷ তাই এখানে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও কম৷ কিন্তু এই অজুহাতে প্রতিবেদনের নামে গল্প লেখার সুযোগ নেই৷ মন্ত্রণালয়ের কোনো নথি, গোয়েন্দা সংস্থার কোনো প্রতিবেদন প্রাথমিক সূত্র হতে পারে৷ কিন্তু সেটাই সংবাদ নয়৷ তথ্য আর সংবাদ আলাদা৷ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সাংবাদিক পরবর্তী অনুসন্ধান করে প্রতিবেদনটি পূর্ণাঙ্গ করবেন৷ মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘‘এই যে লেখা হলো, সিনহা ওসি প্রদীপের সাথে মাদক নিয়ে কথা বলেন৷ তারপর ঝড়ের গতিতে সেখান থেকে বের হয়ে আসেন৷ তারপর পথে হত্যাকাণ্ড ঘটে৷ যিনি এটা লিখলেন তার সোর্স কি?  কারা তাকে এটা জানিয়েছেন? আর সেটা কি তিনি ক্রসচেক করেছেন? এখন তিনি যদি এটা প্রতিষ্ঠিত করতে না পারেন৷ তাহলে এটাকেই তো মানুষ গল্প বলে অভিহিত করবেন৷’’

‘‘যা সত্য তাই খবর৷ এর সাথে নিজের আবেগ বা ধারণা করা কোনো বিষয় যুক্ত করে দিলে তা সংবাদ হবে না৷ সেটা কোনো সৃষ্টিশীল লেখা বা গল্প হতে পারে৷''- এই অভিমত দিয়ে আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘‘মনে রাখতে হবে এটা সাংবাদিকতার ক্ষতি তো করেই, সমাজেরও ক্ষতি করে৷ সাংবাদিকতা তো সমাজ ও মানুষের জন্য৷ মিথ্যা তথ্য, ভুল তথ্য, গুজব সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে৷ এর ফলে কোনো বিষয় নিয়ে মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি হয়৷ সন্দেহ ও সংশয়ের সৃষ্টি করে৷’’

দায় কার?

তাহলে এই গল্প-গুজবের সাংবাদিকতার দায় কার? যারা সংবাদমাধ্যমে সম্পাদনা করেন, সম্পাদকীয় নীতি দেখেন, সম্পাদনা করেন তারাই প্রধান গেটকিপার৷ প্রতিবেদকের যে দায় নেই তা কিন্তু নয়৷ কিন্তু কোনো প্রতিবেদন প্রস্তুত করলেই তো সেটা প্রকাশ হয়ে যায় না৷ সম্পাদনার টেবিল হয়ে যায়৷ তাই গল্প-গুজবের খবর যারা প্রকাশ হতে দেন সবার আগে দায়টি তাদেরই নিতে হবে৷ আর এই গল্প-গুজবের পেছনে নানা পক্ষ কাজ করতে পারে৷ এর ভেতরে রাজনীতি থাকতে পারে৷ অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে৷  আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘‘সত্য কখনো কম বেশি হয় না৷ কোনো কিছু রঙ লাগিয়ে, ফুলিয়ে বা অসত্য তথ্য প্রকাশ করা যেমন সাংবাদিকতা নয়৷ তেমনি সত্য গোপন করা বা প্রকাশ না কারাও অপসাংবাদিকতা৷ এই দুইটি দিকেই খেয়াল রাখা প্রয়োজন৷’’

‘মিথ্যা তথ্য, ভুল তথ্য, গুজব সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে’: আআমস আরেফিন সিদ্দিক

This browser does not support the audio element.

আর মনজুরুল আহসান বুলবুল মনে করেন, ‘‘সাংবাদিককে যেমন পেশাদার হতে হবে৷ তেমনি যারা সম্পাদনা করেন তাদেরও দক্ষ ও পেশাদার হতে হবে৷ শুধু ধারনা, শোনা কথা, অসর্থিত তথ্য, সন্দেহ কখনোই সংবাদ হতে পারেনা৷ কারুর প্রতি অনুরাগ বা বিরাগ প্রকাশ সাংবাদিকতা নয়৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ